খোলা বাজার২৪, রবিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬: বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর আগ্রাসী ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। সর্বক্ষেত্রেই এসব সাইটগুলো মস্তিস্কে প্রভাব বিস্তার করছে। বিশেষ করে কোনো উৎসব বা সংকটাপন্ন সময়ে সামাজিক মাধ্যমগুলো জুড়ে থাকে আলোচনা-সমালোচনা। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে ফেসবুক। ওয়েবসাইটের র্যাংকিং নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান অ্যালেক্সার তথ্য মতে বাংলাদেশে ব্যবহারের দিক থেকে ফেসবুকের অবস্থান ষষ্ঠ। দ্রুত গতিতে র্যাংকিং কমে যাচ্ছে ফেসবুকের।
বাংলাদেশে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমলেও উল্টা পথে রাজত্ব করছে ভিডিওভিত্তিক সাইট ইউটিউব। ২০১২ সালে বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ করে দেওয়ার সময় ভিডিও কন্টেন্ট সাইটটি চতুর্থ স্থানে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে সাইটটি বন্ধ থাকলেও তার অবস্থানে অনড় ছিল। এরপর থেকে ইউটিউব ক্রমশ জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এখন প্রথম স্থানে অবস্থান করছে। এই প্রভাব বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অ্যালেক্সার তথ্য অনুযায়ী ভারতে ফেসবুকে রয়েছে পঞ্চম স্থানে আর ইউটিউব রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। পাকিস্তানে ফেসবুকে রয়েছে চতুর্থ স্থানে আর ইউটিউব রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। নেপালে ফেসবুকে রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে আর ইউটিউব রয়েছে প্রথম স্থানে। ভুটানে ফেসবুকে রয়েছে ৩৩তম স্থানে আর ইউটিউব রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
আন্তর্জাতিক বাজারেও ফেসবুক অবস্থান খুব বেশি ভাল না। সম্প্রতি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক জরিপে বলা হচ্ছে, ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের জনপ্রিয়তায় আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে বড় ধরনের ধস নামবে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা জরিপের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২০১৭ সাল নাগাদ ফেসবুকের ব্যবহারকারী সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমবে। গবেষকদের মতে, ‘দ্রুত জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া ফেসবুক সংক্রমণ নির্জীব হওয়ার আগে প্রসারিত হবে। এরপরে এক সময়ে এটি জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলবে। যা এপিকমাইডোলজিক্যাল মডেলের মাধ্যমে জরিপে তুলে ধরা হয়েছে।’
আগামী ৪ ফেব্র“য়ারি ফেসবুকের দশম জন্মদিন। প্রতিদ্বন্দ্বী একইধরনের অন্যান্য ওয়েবসাইডগুলো যেমন, মাইস্পেস, বেবু, হাইফাইভ ইত্যাদির চেয়ে ফেসবুক বেশি সময় ধরে টিকে রয়েছে। তবে ফেসবুকের প্রধান অর্থায়ন কর্মকর্তা ডেভিড ইবার্সম্যান স্বীকার করেছেন যে, ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে নতুন ব্যবহারকারী বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ফেসবুকে আগ্রহ কমেছে। যদিও ফেসবুকের তথ্য মতে, অক্টোবরে তাদের নতুন গ্রাহক সংখ্যা ১২০ কোটিতে পৌঁছায়। ডেস্কটপে ফেসবুকের ব্যবহার কমেছে, বেড়েছে স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটে।
এদিকে ব্লুমবার্গের এক খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি সংস্থার গবেষণার ফলাফলে বলা হচ্ছে, অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মাঝে ফেসবুক ক্রমশ তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। ব্যবহারের হার দিন দিন কমছে বলেও দাবি ওই সংস্থাটির। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এ বছর ৬ শতাংশ তরুণ ফেসবুক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ২০১৩ সালে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ৯৪ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৮৮ শতাংশে। ২০১২ সালে ৯৫ শতাংশ তরুণ ফেসবুক ব্যবহার করতো। এই তিন বছরে মার্কিন তরুণরা বেছে নিচ্ছেন অন্য সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোকে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধু তরুণরা নয়, ফেসবুক জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের মাঝেও। সমীক্ষায় দেখা গেছে ৩৫ বছরের কম বয়সীরা ফেসবুক ছেড়ে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন।