খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬: যমুনা নদী দ্বারা বেষ্টিত এই ৫ উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য চর ও দ্বীপচর। যমুনার চরগুলো মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। শুষ্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল বালু চরের মধ্য দিয়ে এবং কোথাও কোথাও হাটু পানি পার হয়ে গ্রামে যাতায়াত করতে হয়। স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত নেই শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ, নদী ভাঙনের হা-হাকারে বিলীন হয়ে গেছে জীবন চলার প্রদ্বীপ।
মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে কৃষি পন্য চর থেকে শহরে আনতে কৃষকদের হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে হয়। পন্য বিক্রিতে যে লাভ হয় তার বড় অংশই খরচ হয় পরিবহনে। এখনও চরগুলোতে গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়িই যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব চরাঞ্চলের প্রকৃতি পরিবেশ বৈচিত্র আর জীবিকাকে নতুন করে সংকটের মুখে ফেলে। প্রতিবছর নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সাথে সাথে নদী ভাঙ্গনে দেখা দেয় নতুন সংকট। নদী ভাঙ্গনের সাথে সাথে ভাঙ্গে পরিবার, সেই সাথে বদলে যাচ্ছে তাদের ভাগ্যেরচাকা।
ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এক চরের মানুষ অন্য চরে, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চলে যায়। এক সময়ের বিত্তশালী ধনী পরিবারও রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে যায় ঘরবাড়ি ভিটেমাটি হারিয়ে। কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে অনেকেই কাজের আশায় ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরে পাড়ি দিয়েছে।
অনেক পরিবারের বাড়িঘর একাধিকবার নদী ভেঙ্গেছে। নদী ভাঙ্গা এসব পরিবারের অনেকেরই ঠাই হয়েছে রেল লাইনের ধারে, খোলা আকাশের নিচে। বন্যার সময় চরের বাসিন্দাদের অবরুদ্ধ জীবনযাপন করতে হয়, যেখানে থাকে না স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি, ঘরের টুইয়ে মাঁচা করে চলে সংসার। মাঝেমাঝে দেখা দেয় খাদ্য সংকট, গৃহ¯া’লির পশু নিয়ে পড়ে বিপাকে।
স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হয় চরবাসীরা। অসুখ বিসুখ হলে কবিরাজ,ঝাড়ফুক ও পানি পরার উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। ইসলামপুরের বেড়কুশা চরের আলিম উদ্দিন জানান, বিশাল এ চরে চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে যমুনা নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। মৃত্যু ছাড়া কোন গতি থাকে না।
যমুনাচরবাসী ফাতেমা (৬৫) বলেন, সামান্য জ্বর হলে ২ টাকার প্যারাসিটামল কিনতে ২০ টাকার নৌকা ভাড়া দিয়ে যমুনার ওপারে যেতে হয়। সরকার কত টাকাই তো কত খাতে খরচ করে। চরবাসীর স্বাস্থ্য সেবায় একটু নজর দিলেইতো আমরা ভালো ভাবে বাঁচতে পারি। চরে শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় চরের শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ৮ থেকে ১০ বছর বয়স হলেই বাবার সাথে নেমে পড়তে হয় কৃষি কাজে, আর মেয়ে শিশুদেরকে পড়তে হয় বাল্যবিবাহের কবলে।
এ চরের অনেক মেয়ে শিশু বাল্য বিবাহের কবলে পড়ে অকালে মৃত্যু বরণ করেছে। নদীভাঙ্গা এসব মানুষের দাবী, নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী বাঁধ দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং চরের জেগে উঠা জমির সুষ্ঠ বন্টণের ব্যবস্থা করা। লাঠিয়াল বাহিনী যেন বাপ দাদার জায়গা দখল করতে না পারে এদিকে নজর দেয়ারও আহবান জানান স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি।
সাধারণ মানুষের মন্তব্য, গ্রাম ও শহরের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, শিক্ষার প্রতিকূল পরিবেশ, ভাঙনের হা-হাকার এসব কেবল দূর করা সম্ভব সরকারের একটু সুদৃষ্টি। স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রী সুনজর দিলেই চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের বাগ্য বদল করা সম্ভব হবে।