খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৪ জানুয়ারি ২০১৭: সরকার দেশের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। সে লক্ষ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। ফলে বন্ধ হচ্ছে অনুমোদনহীন ওসব স্কুল পরিচালনার সুযোগ। পাশাপাশি শিক্ষার মান ও পরিবেশ রক্ষায়ও শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত সুবিধা ও শিক্ষার মান বিবেচনায় নিয়ে বিভক্ত করা হচ্ছে ক, খ, ও গ শ্রেণীতে। তাছাড়া নতুন নীতিমালায় ওসব স্কুলের বেপরোয়া টিউশন ফিরও লাগাম টানারও চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ওই নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী শেষে শিগগিরই সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন নীতিমালার আলোকে সরকার সারাদেশে অনুমোদনহীন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বন্ধ করে দেবে। এমনকি অনুমোদন নিয়ে যারা অবৈধ শাখা চালাচ্ছে সেগুলোও বন্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্কুলের পরিচালনা ও সার্বিক কর্মকা- পর্যালোচনা করতে মনিটরিং সেল, ভর্তি ফি নির্ধারণসহ আরো কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে নতুন নীতিমালায়। একই সাথে রাজধানী ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকায় পরিচালিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোকে বাণিজ্যিক এলাকায় সরে যেতেও চিঠি দেয়া হচ্ছে। গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর আবাসিক এলাকার বৈধ ও অবৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে সরকার। বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবাসিক এলাকা ছেড়ে দিতে আর অবৈধগুলোকে বন্ধ করে দিতে নীতিমালা জারির পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিযান শুরু হবে।
সূত্র জানায়, সরকার ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছে। তবে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো কোনো এলাকার জন্য সর্বোচ্চ কতো টাকা সেশন চার্জ ও বেতন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া যাবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। শিক্ষার গুণগত মান ও অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিই শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শক্রমে টিউশন ফি নির্ধারণ করবে। তবে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করা যাবে না বলে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে। যদিও স্কুল মালিকদের সংগঠন ‘ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশন’ নীতিমালার কয়েকটি ধারার বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে টিউশন ফি শিক্ষা বোর্ড থেকে নির্ধারণ করে দেয়া এবং প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়টিতে তারা আপত্তি জানিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, নতুন নীতিমালা অনুসারে বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এ শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানে মহানগর এলাকায় সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা ভর্তি ও সেশন ফি নির্ধারণ করা হয়। আর মহানগর বহির্ভূত এলাকায় তা হবে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। এ শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বেতন মহানগর এলাকায় ৩ হাজার ও মহানগরের বাইরে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা। ৭০০ বা তার বেশি শিক্ষার্থী এবং মানসম্মত শিক্ষক, শিক্ষা উপযোগী অবকাঠামোসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা থাকলে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ শ্রেনীতে পড়বে। বি শ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও সেশন ফি মহানগর এলাকায় সর্বোচ্চ ১৮ হাজার এবং মহানগরের বাইরে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। বেতন মহানগর এলাকায় সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা এবং এর বাইরে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। ৪০০-৭০০ শিক্ষার্থী এবং মানসম্মত শিক্ষক, শিক্ষা উপযোগী অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা থাকলে বি শ্রেণী ধরা হবে। আর ৪০০ বা তার নিচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান সি শ্রেণীতে পড়বে। ওই শ্রেণীতে মহানগর এলাকায় সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা ভর্তি ও সেশন ফি এবং তার বাইরের এলাকায় সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সি শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মহানগর এলাকায় সর্বোচ্চ বেতন দেড় হাজার টাকা এবং বাইরের জন্য সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তাছাড়া খসড়া নীতিমালা অনুসারে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে শূন্য আসনের ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। নীতিমালা কার্যকর হলে এবারই প্রথম ওসব স্কুলে কোটা চালু হবে।
এদিকে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন নীতিমালায় টিউশন ফি নির্ধারণ করা দেয়ার সাথে একমত হতে পারছেন স্কুল মালিকরা। ওই প্রসঙ্গে স্কুল মালিক সংগঠনের সেক্রেটারি ও কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিএম নিজাম উদ্দিন জানান, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কর্তৃপক্ষও নিয়ম-নীতির মধ্যে থাকতে চায়। সেজন্য তাদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নীতিমালাটি কররা হলে ভালো হতো। কারণ ওসব প্রতিষ্ঠান পুরোটাই চলে ব্যক্তি মালিকানায়। আর ওসব প্রতিষ্ঠান সব সময়ই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকে। নির্দিষ্ট সীমার বাইরে গিয়ে বেশি টিউশন ফি আদায় করার সুযোগ নেই। সেটা করলে পরের বছর ওই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীই পাবে না।
অন্যদিকে বর্তমানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সাময়িক নিবন্ধনপ্রাপ্ত একশ’র নিচে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে। তবে বাংলাদেশ তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বেনবেইস) গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশে তিন ক্যাটাগরিতে ১৬০টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তার বাইরেও সাড়ে ৩০০ প্রতিষ্ঠান ইংরেজি মাধ্যম স্কুল পরিচালনা করছে।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর এলিয়াস হোসেন জানান, ‘নীতিমালায় মালিক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সব পক্ষের অধিকার রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। সবাই খুশি হবে। তথ্যসূত্র: দৈনিক মুক্তখবর