খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি ২০১৭: নোংরা ও আবর্জনাময় পরিবেশে আমাদের জন্ম, নোংরা পরিবেশে বেড়ে ওঠা, নোংরা ও আবর্জনার মধ্যে বসবাস এবং মৃত্যু- এ হলো গর্বিত বাঙালি জাতির গর্বিত সংস্কৃতি। দীর্ঘ ৪৫ বছরেও যে অভ্যাসটি আমরা রপ্ত করতে পারিনি, তা ৩০ মিনিটে করে দেখালেন একজন রিকশাওয়ালা।
ছবিতে দুই হাত ফুলে ভরা যে মানুষটিকে দেখছেন, তাঁর নাম নিশান। নিশান পেশায় একজন রিক্সাচালক। পরিবেশ সংরক্ষণে তাঁর এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের সামনের রাস্তার ফুটপাথ আর দেওয়ালের মাঝখানের দীর্ঘ এই জায়গাটিকে পথচারী ও ভাসমান মানূষ বহুদিন ধরে মলমূত্র ত্যাগের এক নিরাপদ ও আদর্শ জায়গা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল।
নিশানের কাছে এস এম হলের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী হলের সামনে এ ধরনের বদ অভ্যাস ও পরিবেশ ধ্বংস এক নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য কাজ বলে মনে হলো। নিশান সিদ্ধান্ত নিলেন- এই অবস্থা বদলাতে হবে এবং পরিবেশ সুন্দর করতে হবে। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। নিশান প্রতিদিন শাহাবাগে গিয়ে ফুলের দোকান থেকে পরিত্যাক্ত নানা ধরনের ফুল ও ফুলের পাপড়ি রিক্সা ভর্তি করে নিয়ে এসে এই জায়গায় সযতেœ সাজিয়ে দিয়ে এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করা শুরু করলেন।
শুধু তাই নয়। তিনি ফুল দিয়ে এস এম হলের নাম লিখলেন- ঝ গ ঐঅখখ ১৯২১. নববর্ষ উপলক্ষে লিখলেন- ঐঅচচণ ঘঊড ণঊঅজ. আমি প্রতিদিন নিশানের ফুলের অপূর্ব বিন্যাস দেখতে যাই, ছবি তুলি আর অভিভুত হই। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে এ কারণে যে, যে কাজটি সরকার করছে না, পরিবেশবাদীরা করছে না, হলের শত শত ছাত্র করছে না বরং প্রতিনিয়তই পরিবেশ নষ্ট করে চলেছে, হল প্রশাসন করছে না এবং পরোয়াও করছে না, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যা করা উচিত, ঠিক সেই কাজটি করছেন একজন সাধারণ রিক্সাচালক।
পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন আর কেউ ওখানে মলমূত্র ত্যাগ করে না। এখন ওখানে অভুতপূর্ব মনোরম এক পরিবেশ বিরাজ করছে। একটি পুরোনো পরিত্যক্ত ব্যানারে নিশান কাঁচা হাতে ‘পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য আপনার সহযোগিতা চাই। ধন্যবাদ।’- লিখে দেওয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
আপনারা শুনে হয়ত অবাক হবেন- গতকাল নিশানের ওপর ডেইলি স্টারে সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। নিশান ভাই, আপনার জন্য সালাম ও অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা । আপনি আমাকে ও এই জাতিকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন যা ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এদেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি ছাত্রছাত্রী ও গর্বিত দেশবাসীকে আমি ও আমরা দিতে পারিনি।
লেখক: অধ্যাপক, ক্লিনিকাল ফার্মাসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।