Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭:  54একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ সাতক্ষীরার চার আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
এ মামলার আসামিরা হলেন- সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির খালেক মণ্ডল, এম আব্দুল্লাহ আল-বাকী, খান রোকনুজ্জামান ও জহিরুল ইসলাম ওরফে টিক্কা খান। তাদের মধ্েয খালেক মণ্ডল ছাড়া সবাই পলাতক।

মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, আটকে রেখে নির্যাতনের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত অভিযোগ আনা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার ঢাকার ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এর প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, শিগগিরই এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করা হবে।
প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খান ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট থেকে গত ৫ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত এ মামলার তদন্ত করেন। যে ৬০ জনের জবানবন্দি তিনি শুনেছেন, তাদের মধ্েয ৩৩ জনকে প্রতিবেদনে সাক্ষী করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাঁচ ব্যক্তিকে জবাই ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর আসনে জামায়াতের সাবেক সাংসদ আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২ জুলাই একটি মামলা করেন সদর উপজেলার শিমুলবাড়িয়া গ্রামের শহীদ রুস্তম আলী গাজীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
আব্দুল খালেক মণ্ডল আব্দুল খালেক মণ্ডল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় বসে সহযোগীদের নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৬ জুন খালেক মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ অগাস্ট তাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সাত অভিযোগ
অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে বুধহাটা খেয়াঘাটে বেতনা নদীর পাড়ে আফতাবউদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামকে রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সহযোগীরা গুলি করে হত্যা করে। পরে স্থানীয় খলিলুর রহমান, মো. ইমাম বারী, মো. মুজিবর রহমান ও ইমদাদুল হককে রাজাকার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালেরর পহেলা ভাদ্র ধুলিহর বাজার থেকে কমরউদ্দিন ঢালী নামের একজনকে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায় ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সাতক্ষীরা মহাকুমার রাজাকার কমান্ডার এম আব্দুল্লাহ আল বাকী ও খান রোকনুজ্জামান। পরে ঢালীর মৃতদেহ পাওয়া যায় বেতনা নদীর পাড়ে।
অভিযোগ-৩: ১৯৭১ সালের পহেলা ভাদ্র বুধবার বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল বাকী, রোকনুজ্জামান খানসহ ৪-৫ জন মিলে সবদার আলী সরদারকে চোখ বেঁধে পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। পরে আর তার সন্ধান মেলেনি।
অভিযোগ-৪: সোহেল উদ্দিন সানা নামের এক ব্যক্তি তার বড় ছেলে আব্দুল জলিল সানাকে সঙ্গে নিয়ে পহেলা ভাদ্র বুধহাটা বাজার অতিক্রম করার সময় রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সঙ্গী রাজাকারদের হাতে আটক হন। পরে তাদের ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সোহেল ও সানার সন্ধান আর মেলেনি।
অভিযোগ-৫: ১৯৭১ সালে ৭ আষাঢ় সকাল ৭টার দিকে আবুল হোসেন ও তার ভাই গোলাম হোসন নিজেদের বাড়ির পাশে হালচাষ করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে গোলাম হোসেন বাড়িতে নাস্তা খেতে এলে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও জহিরুল ইসলাম টিক্কা খানসহ ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য এসে তাকে পাশের পাটক্ষেতে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগ-৬: ১৯৭১ সালের ২ ভাদ্র সকালে বাশদহ বাজারের ওয়াপদা মোড় থেকে মো. বছির আহমেদকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর তার বুড়ো আঙ্গুলের রগ কেটে দেয় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।
অভিযোগ-৭: ১৯৭১ সালের জৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও রাজাকার কমান্ডার জহিরুল ইসলাম টিক্কা খান একদল পাকিস্তানি সৈন্যকে সঙ্গে নিয়ে কাথণ্ডা প্রাইমারি স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ডেকে মিটিং করে। সেই মিটিংয়ে বলা হয়, যারা আওয়ামী লীগ করে এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা ‘কাফের’। এরপর তারা কাথণ্ডা ও বৈকারি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি-ঘর লুট করে জ্বালিয়ে দেয়।
সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুই সদস্য মৃত গোলাম রহমানের স্ত্রী আমিরুনকে তার বাড়ির রান্নাঘরের পেছনে আটকে ধর্ষণ করে। এছাড়া বৈকারি গ্রামের ছফুরা খাতুনকে মৃত শরীয়তউল্লাহর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে চার পাকিস্তানি সৈন্য।