Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭:  50পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা রূপে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই আন্দোলনের সূচনা করে তমদ্দুন মজলিশ। তমদ্দুন মজলিশের প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা বলা যায় একই তারিখে। তমদ্দুন মজলিশের বক্তব্য ছিল: মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বটে, তবে এই দল পাকিস্তানের আদর্শ ঠিকমতো বোঝে না, এবং এই দলের নেতৃত্বে পাকিস্তান গড়ে ওঠা দূরের কথা, টিকে থাকবে না। তাঁদের মতে, দুর্নীতি ও সুবিধাবাদ মুসলিম লীগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। পাকিস্তানকে তারা (ইসলামি রাষ্ট্ররূপে নয়) ‘মুসলিম রাষ্ট্র’রূপে গড়ে তোলার কথা বলেন। পাকিস্তানের আদর্শের এবং মুসলিম রাষ্ট্রের স্বরূপ সম্পর্কে এক অভিনব ব্যাখ্যা তাঁরা দেন। তাঁরা স্পষ্টভাবে বলেন যে, পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হলে বাংলাভাষাকে অবশ্যই পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা রূপে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাঁরা মুসলিম লীগের ও মুসলিম লীগ সরকারের বিরোধী ছিলেন। তাঁরা পাশ্চাত্য গণতন্ত্র ও কমিউনিজমের বিরোধী ছিলেন, এবং ইসলামি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন। তাঁদের ইসলামি গণতন্ত্র থেকে ইসলামের আবরণটুকু সরিয়ে নিলে তা পাশ্চাত্য গণতন্ত্রই হয়। তাঁরা ঘোর বিরোধী ছিলেন মার্কসবাদের। পাকিস্তানকে রক্ষা করার ও শক্তিমান সমৃদ্ধিমান রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার জন্য শেষ পর্যন্তই তাঁরা বিশ্বস্ত ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ সালে এই সংগঠনের পাঁচ/ছয়জন বুদ্ধিজীবী কলাবরেটররূপে চিহ্নিত হয়ে শাস্তি পেয়েছিলেন। গোলাম আযম ছাত্রজীবনে এই সংগঠনে ছিলেন, পরে সরে যান যখন মার্কসবাদীরা ও গণতন্ত্রীরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে এগিয়ে আসেন, আন্দোলন পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে রূপ নিতে থাকে এবং পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ সামনে আসতে থাকে, তখন তমদ্দুনিষ্টরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন এবং রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন পরিহার করে কেবল বাংলাভাষার উন্নতি সাধনের প্রশ্নে গুরুত্ব দিতে থাকেন।
বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রশ্নে তমদ্দুন মজলিশের অগ্রযাত্রার কালেই মার্কসবাদীরা ও গণতন্ত্রীরা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে সামনে আসেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একাংশ এবং ছাত্রলীগ ও আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা-কর্মীরা। ১৯৪৮ সালে মুসলিম লীগের সভাপতি, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকায় আসেন এবং কার্জন হলের কনভোকেশন অধিবেশনে ও রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় ঘোষণা করেন: টৎফঁ ধহফ ড়হষু টৎফঁ ংযধষষ নব ঃযব ঝঃধঃব খধহমঁধমব ড়ভ চধশরংঃধহ, তখন বাংলার দাবিতে রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন শক্তিশালী রূপ নেয়। তাতে তমদ্দুনিষ্টদের সঙ্গে মার্কসবাদী ও গণতন্ত্রীরাও ছিলেন। উল্লেখ্য যে, কমিউনিস্ট পার্টি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর্যায়ে গুপ্ত সংগঠন ছিল, এবং কমিউনিস্টরা তখন সাংগঠনিক পরিচয় গোপন রেখে আওয়ামী মুসলিম লীগে থেকে কাজ করতেন। পরে তাঁরা ‘গণতন্ত্রী দল’ নামে মধ্যবিত্ত শ্রেণির দল গঠন করেছিলেন। আরো পরে তাঁরা গণতন্ত্রী দল বিলুপ্ত করে পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগে ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে কাজ করতেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে কমিউনিস্ট পার্টি প্রকাশ্যে আসে। তার আগে পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টি ছিল আত্মগোপনকারী সংগঠন।

১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ঢাকায় এসে পল্টন ময়দানের জনসভায় ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’—এই ঘোষণা দিলে তার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারিতে আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবুল বরকত নিহত হলে আন্দোলন তৎকালীন পূর্ব বাংলার থানা পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সর্বত্র স্লোগান ওঠে: ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই—নুরুল আমিনের কাল্লা চাই। মুসলিম লীগ মুসলিম লীগ/ধ্বংস হোক ধ্বংস হোক। পাকিস্তান পাকিস্তান/জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।’ সারাদেশে সে এক বিস্ময়কর অনুভূতি। আমি আমার জীবনে প্রথম মিছিলে যাই ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি—উক্ত স্লোগান দিয়ে। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সেই ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলার যে গণজাগরণের অভিব্যক্তি ঘটেছিল তারই এক বিকশিত রূপ রাষ্ট্রভাষার দাবিতে, ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে জাগ্রত পূর্ব বাংলার এই গণআন্দোলন। তখন ঢাকায় নুরুল আমিন সরকারের আর কোনো কার্যকারিতা ছিল না। সে দিনের আন্দোলনে সুপ্ত ছিল অনেক আবেগ, অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন, অনেক কল্পনা। তখন বিকশিত হয়েছিল জাতীয়তাবোধ— তা থেকে জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ ক্রমে রূপ নিয়েছিল জনগণের নিজেদের জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেতনায়। রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন থেকে যুক্তফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা। এক পর্যায়ে আইয়ুব খানের মার্শাল ল, আওয়ামী লীগের ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মার্চের জাতীয় অভ্যুত্থান ও অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। যেন একই ঘটনা, একই ধারাবাহিকতা, একই আন্দোলন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব খুব দুর্বল ছিল। তমদ্দুন মজলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি, ছাত্রলীগ ইত্যাদির মাধ্যমে বিকশিত হয় আন্দোলন। পাশাপাশি মুসলিম লীগ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, সর্বোপরি গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ফেব্র“য়ারিতে যে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়েছিল, তাকে বিলুপ্ত করে দিয়ে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধি শামসুল হকের আবেদন নাকচ করে ভঙ্গ করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা। আন্দোলন ছিল তখন নেতৃত্বহীন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলছিল আন্দোলন—এর মধ্যে রফিক, জব্বার, শফিউল প্রমুখ শহিদ হন। পরে সরকার কঠোরতম দমননীতি চালিয়ে আন্দোলন বন্ধ করে। একুশে ফেব্র“য়ারি থেকে পরবর্তী প্রায় এক মাস ছিল সরকারবিহীন নেতৃত্ববিহীন অবস্থা।
সেদিন যদি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটিকে বানচাল না করে, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের নীতি ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হতো, তা হলে কী হতো? এ প্রশ্ন আজ পর্যন্ত কেউ তোলেননি। আমার মনে হয় আমাদের জাতীয় চরিত্রকে বুঝবার জন্য এবং উন্নত করার জন্য এ প্রশ্নও বিচার্য।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে সেনাপতি ইয়াহিয়ার সামরিক অভিযানের পরেও কি আমাদের নেতৃত্ব ছিল? শূন্যতার মধ্যে প্রবাসে প্রথম বাংলাদেশ সরকার কীভাবে গঠিত হয়েছিল? ওই নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়। ছয় দফা আন্দোলনকালে নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য কী ছিল? ভবিষ্যতের প্রস্তুতি তখন কতোখানি ছিল? গণতন্ত্রের আবেগ ছিল, প্রস্তুতি কি ছিল? আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলো কী করেছিল? ওই সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম ও যুদ্ধে সর্বদলীয় নেতৃত্ব গঠন না করার ফল কি ভালো হয়েছে? আওয়ামী লীগের একলা চল নীতি তখন সমালোচিতও হয়েছিল।
ছয় দফা আন্দোলনের মধ্যে আইয়ুব সরকার চালায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তাতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানকেও করা হয় আসামি। তাতে জনগণ প্রবলভাবে একাত্মতা ঘোষণা করে তাঁর সঙ্গে, এবং আন্দোলনের মধ্যে তখন মামলা উৎখাত হয়ে যায় এবং নেতা কারামুক্ত হয়ে যখন জনসমক্ষে আসেন তখন তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করা হয়। ‘মুজিব ভাই’ ক্রমে জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে পরিণত হন ‘বঙ্গবন্ধু’তে।
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা আমরা প্রতিদিন শুনি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের ভূমিকাও তথ্য ভিত্তি করে আমাদের স্মরণ রাখা উচিত। উন্নত ভবিষ্যতের জন্য ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাও উচিত। বঙ্গবন্ধুর ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা আমরা স্মরণ করি। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা স্মরণ করি। আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমগ্র অবস্থার কথাও আমাদের স্মরণ করা উচিত। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পেছনে সশস্ত্র যুদ্ধের যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি ভূমিকা আছে আরো নানা শক্তির। সার্বিকতার মধ্যে, সর্বাঙ্গিকতার মধ্যে আমাদের জানতে হবে, স্মরণ করতে হবে, আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাসচর্চা দিয়ে হয় না, সৃষ্টিশীল ইতিহাসচর্চা দরকার। এই সৃষ্টিশীলতা বাংলাদেশের লেখক-সমাজে এখন দুর্লভ। জাতিকে উঠতে হলে চাই সৃষ্টিশীলতা—চাই রেনেসাঁসের স্পিরিট। চাই বৌদ্ধিক চরিত্রবল। বৌদ্ধিক চরিত্রবলহীন জ্ঞানীদের দ্বারা জাতীয় জীবন ও জনজীবনে সুফল হয় না।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর যে পঁয়তাল্লিশটি বছর পার হয়েছে তাতে একে একে মুজিব সরকার, মোশতাক সরকার, জিয়া সরকার, এরশাদ সরকার, খালেদা সরকার, হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থেকেছেন। ইতিহাস থেমে থাকেনি— অগ্রগতি হয়েছে। এই অগ্রগতিতে অপ্রীতিকর ব্যাপারই অনেক বেশি। অনেক সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশকে কি রাষ্ট্ররূপে গড়ে তুলবার যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছে? দেশের উচ্চশ্রণির পরিবারগুলোতে বিদেশে গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রবণতা প্রবল। তাদের ভূমিকা কি বাংলাদেশে রাষ্ট্রগঠনের অনুকূল? এমনি অনেক বিচার্য বিষয় আছে যেগুলোকে কারণ-করণীয়-করণ ও ফলাফলের ভিত্তিতে বিচার করে ইতিহাসের নির্দেশকে বোঝা দরকার। ইতিহাসের নির্দেশ অমান্য করে কি ভালো কিছু করা সম্ভব?
রাষ্ট্রভাষা বাংলার অবস্থা কী? রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর্যায়ে বাংলাভাষার উন্নতিতে লেখক-গবেষকদের অসাধারণ আগ্রহ দেখা দিয়েছিল। তখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে এবং গল্প-উপন্যাস-কবিতার ক্ষেত্রে অসাধারণ উন্নতি সূচিত হয়েছিল। প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিও তখন শক্তিশালী ছিল। বিশ্বব্যবস্থা তখন দ্বিকেন্দ্রিক ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরেও বাংলাকে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করার এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সকল স্তরে ব্যবহারের চেষ্টা বহমান ছিল। কিন্তু যারা বিশ্বব্যাংক ইত্যাদির কাজে নিয়োজিত ছিলেন তাঁরা ভেতরে ভেতরে বাংলার প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করলেন। তবু তখন বিচার ব্যবস্থা ও ব্যাংকিং ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রেই বাংলা প্রচলিত হয়ে যায়। উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের জন্য অনেক বই লেখা হয়, অনেক বইয়ের অনুবাদ হয়। সেটা ১৯৬০-এর, ‘৭০-এর ও ‘৮০-র দশকের ব্যাপার। পরে বিশ্বব্যবস্থা বদলে গেলে, ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটলে অবস্থা বদলে যায়। নানা কারণে গত প্রায় ৩০ বছর ধরে ইংরেজির দিকে ঝোঁক বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণের ঝোঁক বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় বাংলার অগ্রগতি থেমে যায়। অবশ্য বাংলা একাডেমির বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাভাষাকে রক্ষা করার ও উন্নত করার দাবি জোরদার হতে থাকে। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত বই দিয়ে যে জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাহিত্যে সৃষ্টিশীলতার অভিব্যক্তি ঘটছে তা নয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে নীতি ঘোষণা করছেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স যে নীতি নিয়ে চলছে তাতে ওইসব দেশে গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণ এখন আর আগের মতো আকর্ষণীয় নেই। অপর দিকে বাংলাদেশে শিক্ষার—সেই সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষারও যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তা আশাপ্রদ নয়। শুদ্ধ করে ইংরেজি লিখতে পারে—এমন লোকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সামনে কী হবে বলা কঠিন। তবে বাংলার উপর নির্ভর করে চলার বিকল্প থাকবে না বলেই মনে হয়। বাংলাদেশে বাংলা চর্চার ভবিষ্যৎ আছে।