Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

7kড. আবদুল লতিফ মাসুম : খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১১ মার্চ ২০১৭:  আরব রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকারী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ একমাসব্যাপী এশিয়া সফরে বেরিয়েছেন। এ সফরে সঙ্গী হয়েছেন ২৫ জন সৌদি যুবরাজ এবং ১০ জন মন্ত্রী। সফরে বাদশার সঙ্গে আছেন প্রায় এক হাজার লোক। এর মধ্যে অনেকে আছেন মালামাল বহনের জন্য। আলাদা কার্গো বিমানে তার সঙ্গে থাকছে দুটি বিলাসবহুল মার্সিডিজ লিমুজিন গাড়ি, দুটি বৈদ্যুতিক লিফ্ট। সব মালামাল মিলিয়ে ওজন হিসাব করা হয়েছে ৪৬০ টন। পরিবহন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এয়ার ফ্লাইট নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রক্ষণশীল রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজা-বাদশাহ, আমীর-ওমরাহ ও শেখ-সুলতানরা খুব কমই বিদেশ সফরে যান। রাজতন্ত্রের পক্ষে উজির-নাজিররা প্রায়শই তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। দীর্ঘকাল পরে সৌদি বাদশাহ’র বিশাল আয়োজন এবং দীর্ঘ সফর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার এই বিরল সফর আমেজে, আয়োজনে এবং অভিজাত্যে দিগ্বিজয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

সৌদি রাজপরিবার: বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করেন সৌদি রাজপরিবার। বিশ্বের প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশের শাসক হিসেবেও পৃথিবীব্যাপী তাদের প্রতাপ। ১৯৭৪ সালে পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে যখন ‘তেল অবরোধ’ ঘোষিত হয় তখন টাইম ম্যাগাজিন মন্তব্য করেছিল যে, সৌদি বাদশাহর কপালে ভ্রূকুটি দেখা দিলেও পাশ্চাত্য শঙ্কিত হয়। পাশ্চাত্যের সঙ্গে সৌদি রাজবংশের মিত্রতা প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই। ১৫ শতকে আরব উপদ্বীপের নেজ্দএ গোত্রপ্রধান ছিলেন এদের পূর্বপুরুষরা। ১৭৪৫ সালে এ বংশের প্রাণপুরুষ ইবনে সৌদ ওহাবী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। অবশেষে ১৯০২ সালে এ বংশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ রিয়াদ দখল করেন। ১৯৩২ সালে রাজ্যসীমা সম্প্রসারিত হয়ে ‘সৌদি আরব রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সৌদ পরিবার পাশ্চাত্যের মিত্রতা অর্জন করে। ১৯৩৮ সাল থেকে তেল রপ্তানি শুরু হলে সৌদি আরব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক প্রতিপত্তি অর্জন করে। পবিত্র মক্কা ও মদিনা-নগরীদ্বয়ের অভিভাবক হিসেবে গোটা মুসলিম বিশ্বে তারা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। তারা নিজেদেরকে ‘খাদেমুল হারামাইনুস শরীফাইন’ বা পবিত্র নগরীদ্বয়ের খাদেম হিসেবে পরিচিতি দিতে ভালোবাসেন।
নতুন বৈশ্বিক সমীকরণ:সৌদি আরব বরাবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে রাজতন্ত্র পরিচালনা করে আসছে। ১৯৩৩ সাল থেকে এককভাবে এবং ১৯৪৪ সাল থেকে যৌথভাবে ‘আরাবিয়ান আমেরিকান ওয়েল কোম্পানি’— আরামকো, সৌদি তেল সম্পদ পরিচালনা করছে। মার্কিন জ্বালানির প্রয়োজন এবং সৌদি আরবের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে উভয় রাষ্ট্রের সম্পর্কে স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক কালের কিছু ঘটনা-দুর্ঘটনা উভয় রাষ্ট্রের সম্পর্কে চিড় ধরায়। ১. ২০০১ সালে ৯/১১’র জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অধিকাংশ সৌদি নাগরিককে দায়ী করে। সৌদি ধনকুবের ওসামা বিন লাদেন প্রধান সন্দেহভাজন বলে ঘোষিত হন। ২. দায়ী ব্যক্তিদের অভিযুক্তকরণ এবং তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টি এতোদিন ঝুলে ছিল। ২০১৬ সালে ওবামা প্রশাসনের বিরোধিতা সত্ত্বেও সৌদি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইনটি গৃহীত হয়। ৩. ওবামা প্রশাসন ইরানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘকালীন বিরোধ প্রশমনের চেষ্টা করে। ইরানের বিরুদ্ধে কথিত পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ প্রশ্নে একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তিতে পৌঁছতে ওবামা প্রশাসন অবশেষে সক্ষম হয়। ৪. দীর্ঘকাল ধরে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে আঞ্চলিক প্রাধান্যের যে প্রতিযোগিতা চলে আসছিল—এ চুক্তির ফলে তা ইরানের জন্য সুবিধাজনক ক্ষেত্র তৈরি করে বলে সৌদি আরব মনে করে। ৫. সৌদি আরবসহ গোটা বিশ্বে সুন্নি মুসলমানদের গরিষ্ঠতা রয়েছে। অপরদিকে একমাত্র শিয়া রাষ্ট্র ইরান ইসলামকে যথার্থভাবে ধারণ করে না বলে সুন্নি-বিশ্ব মনে করেন। শিয়া-সুন্নি বিরোধ ঐতিহাসিক। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লব সুন্নি বিশ্বের জন্য অস্থিতিশীলতার কারণ হতে পারে বলে সৌদি আরব এবং তার মিত্ররা বিশ্বাস করে। ৬. সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের শীর্ষ শিয়া ধর্মীয় নেতাকে ফাঁসি দেয়া হলে উভয় দেশের সম্পর্ক আরো তিক্ততর হয়ে ওঠে। ৭. আঞ্চলিক বিরোধগুলোতেও ইরান ও সৌদি আরবের বিপরীত অবস্থান রয়েছে। যেমন: ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ, ইরাকের শিয়া-সুন্নি অবস্থান এবং সিরিয়ায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ইত্যাদি। ৮. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন অবশেষে যে ঘটনাটি মার্কিন-সৌদি সম্পর্ককে দ্বিধান্বিত করে তুলেছে তা হচ্ছে— মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর বিজয়। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট মুসলিম বিশ্বের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন, তা স্বাভাবিকভাবেই ‘ইসলামের অভিভাবক হিসেবে’ তাদেরকে বিচলিত করে থাকবে। যদিও সৌদি মিত্ররা বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিতে ট্রাম্পের অনুসরণে সাতটি মুসলিম দেশের প্রতি অনুরূপ নীতি ঘোষণা করেছেন, তবুও হয়তো তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না। উল্লেখ্য যে, ট্রাম্প নিজে সৌদি আরবকে হেয় করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলেছেন। ৯. ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানে ট্রাম্পের ঘোষিত এক রাষ্ট্রনীতি মুসলিম বিশ্বকে বিচলিত করেছে। একইভাবে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার অনুঘটক হিসেবে সৌদি সরকার মার্কিন সিদ্ধান্তে বিব্রত হতে পারে। ১০. সৌদি উপ-যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তেলের উপর নির্ভরতা হ্রাসের জন্য জাতীয় পরিবর্তন পরিকল্পনা ‘ন্যাশনাল ট্রান্সফরমেশন প্লান’-এনটিপি, ঘোষণা করেছেন। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী সৌদি আরব গোটা বিশ্বের ব্যবসা ও বিনিয়োগে অংশীদার হবে।

এশিয়ায় বর্তমান সফর:ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে সৌদি বাদশাহ সাম্প্রতিককালের আলোচিত এশিয়া সফর শুরু করেন। এদিন তিনি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর পৌঁছান। মালয়েশিয়া সফর শেষে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় পদার্পণ করেন। বালি ত্যাগের আগে ৪ মার্চ তিনি ব্রুনাই সফর করেন। সর্বত্র তিনি অভূতপূর্ব আড়ম্বরপূর্ণ অভ্যর্থনা লাভ করেন। মোট ২৭টি ফ্লাইটে করে ১ মার্চ জাকার্তায় পৌঁছান বাদশাহ সালমান ও তার সফরসঙ্গীরা। জাকার্তা বিমানবন্দরে বাদশাহকে স্বাগত জানান ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জেকো ইউদোদো। বিমান থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামেননি বাদশাহ। তার নামার জন্য বিশেষভাবে তৈরি এস্কেলেটর বা চলন্ত সিঁড়ি ছিল। বিবিসি জানিয়েছে, ৬৩ টন মালামাল নামানো হয় জাকার্তায়। বাকি ৩৯৬ টন নিয়ে যাওয়া হয় বালি দ্বীপে। ইন্দোনেশিয়ার মূর্তিগুলো বাদশাহর সম্মানে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় ইন্দোনেশীয় জনগণের মধ্যে বিপুল আগ্রহ ও আকর্ষণের সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৭০ সালে বাদশাহ ফয়সালের সফরের পর এই প্রথম কোনো সৌদি বাদশাহ ইন্দোনেশিয়া সফরে গেলেন। বাদশাহ তার সফরসূচি অনুযায়ী জাকার্তায় তিনদিন এবং বালিতে থাকবেন আরও কয়েকদিন। ২ মার্চ তিনি ইন্দোনেশীয় পার্লামেন্টে ভাষণ দেন। জাকার্তায় তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ পরিদর্শন করেন। এর পরবর্তী সফরে তিনি যাবেন বিশ্বে দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি চীনে। চীন সফর শেষ হলে তিনি যাবেন সূর্য উদয়ের দেশ জাপানে। জাপান থেকে তার বিমান বহর পৌঁছবে ভারত মহাসাগরের দ্বীপমালার দেশ মালদ্বীপে। তখনো তার সফর শেষ হবে না। তিনি সেখান থেকে সরাসরি পৌঁছবেন জর্ডানের রাজধানী আম্মানে। সেখানে তিনি আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করবেন।

সফরের উদ্দেশ্য : বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাদশা সালমানের সফরের কারণ হিসেবে ১০টি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর গোটা বিশ্বে তেলের দাম হ্রাস পাওয়ায় সৌদি অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা এবং বিকল্পের সন্ধানে গৃহীত জাতীয় পরিকল্পনার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এ সফর সম্পর্কে সৌদি গণমাধ্যমে দুটো উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, এটি তেলের উত্পাদন, বিপণন এবং সম্প্রসারণ সম্পর্কিত। দ্বিতীয়ত, এ সফর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সৌদি আরবে সব ধরনের বিনিয়োগের আহবান জানাবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল সৌদি বাদশার এই সফরকে ‘ভূ-রাজনৈতিক’ প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করছেন। তারা ‘পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যের দিকে মুখ ফেরানোর ইঙ্গিত’ বলে মনে করছেন। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ছয়টি দেশের সফরকে দুটো উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যা করা যায়। চীন ও জাপান সফর অর্থনৈতিক এবং মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই সফর অধিকতর রাজনৈতিক ও কৌশলগত।

কৌশলগত ঐক্য:শেষের চারটি দেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ। এই চারটি দেশ সফরের মাধ্যমে বাদশা সালমান কি শিয়া ইরানের বিরুদ্ধে সুন্নি মুসলিমদের একত্রিত করতে চাচ্ছেন? প্রথমত. ইরানের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক বলয় সৃষ্টির চেষ্টা এটি। ব্রুনাই এবং মালদ্বীপের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। মালয়েশিয়ার সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও সমাজে ইসলামের ভূমিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হলেও সমাজ ও সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রতিফলন রয়েছে। দ্বিতীয়ত. সৌদি আরব ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে একটি জোট গঠনের প্রয়াস নেয়। প্রাথমিকভাবে এটি সামরিক জোটের মতো মনে হলেও পরে সন্ত্রাসবিরোধী জোটে পরিণত হয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনাই এই জোটের প্রতি তাদের নৈতিক সমর্থন ঘোষণা করেছে। এটি এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন করেনি। সফরের পর বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে আসবে। বাংলাদেশ জোট গঠনের প্রাথমিক অবস্থা থেকেই সক্রিয় রয়েছে এবং সৌদি নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। তৃতীয়ত. সৌদি আরব বর্তমানে জঙ্গি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। চতুর্থত. দীর্ঘদিন ধরে এরা আল-কায়দা এবং কথিত ইসলামি রাষ্ট্র বা আইএস-এর বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধরত রয়েছে। মালদ্বীপ সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। প্রতিটি সংশ্লিষ্ট দেশ আশা করছে সেখানে বিপুল পরিমাণ সৌদি বিনিয়োগ ঘটবে। আবার প্রতিটি দেশ কমবেশি সন্ত্রাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাদশাহ সালমানের সফরের একদিন আগে বান্দুংয়ে একটি ছোট বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অর্থনৈতিকভাবে এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পারস্পরিক লাভজনক। এ সফরের সময়ে সৌদি আরব মালয়েশিয়ায় সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়া ২৫ বিলিয়ন বিনিয়োগ আশা করে।

অর্থনৈতিক স্বার্থ: সৌদি আরব ঘোষিত জাতীয় পরিবর্তন পরিকল্পনা-এনটিপি এর আওতায় রিয়াদ আশা করছে পিকিং এবং টোকিও থেকে তারা ব্যাপক সাড়া পাবে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী উপ-যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন। ২০১৬ সালে ঘোষিত পরিকল্পনা সফল করতে ইতোমধ্যে উপ-যুবরাজ চীন এবং জাপান সফর করেছেন। এ সময়ে তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শী জিন পিং এবং জাপানি প্রধানমন্ত্রী সিনজো এ্যাবে থেকে সৌদি আরবে বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পান। উভয় দেশ জ্বালানি ক্ষেত্রে অনেকটাই সৌদি আরবের উপর নির্ভরশীল। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দেশ দুটি তাদের জাতীয় স্বার্থে সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করবে। বর্তমান সফরে বিষয়গুলো বাস্তবতা লাভ করবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সামরিক দিক দিয়ে জাপান সৌদি আরবকে সহায়তা দেওয়ার অবস্থানে নেই। কিন্তু চীন দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার পর এখন এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ইদানীং চীন তার প্রতিরক্ষা ব্যয় ৭%-এ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এশিয়া, আফ্রিকা, ভারত মহাসাগর বিশেষ করে পীত সাগরে তাদের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও নৌ-তত্পরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। পীত সাগরে চীনের প্রাধান্যকে মেনে নিতে পারছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে পীত সাগরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। চীন উদীয়মান সামরিক শক্তি হওয়ায় সৌদি আরব সেখানে মার্কিন যুক্তিরাষ্ট্রের বিকল্প সন্ধান করছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখার বিষয় বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বিন্যাসের ক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে চীনের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে সে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা হয়তো দূর হতে পারে। বাদশাহ সালমানের সফর শেষ হলে বিষয়টির অগ্রগতি বোঝা যাবে।

এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরে সৌদি বাদশাহর সফরের ফলে এ অঞ্চলের সম্পর্ক বিন্যাসে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য মূল এশিয়ার আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে। সৌদি আরব এ অঞ্চলের দিকে এরকম দৃষ্টি আর কখনো দেয়নি। বিশেষত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে বাদশার সফর নতুন আশাবাদ সৃষ্টি করবে বলে অনুমান করা যায়। বাংলাদেশও হয়তো ভবিষ্যতে এ বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। সৌদি বাদশাহর এ সফর অর্থনৈতিক ও সামরিক— উভয় দিক থেকে সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। আরব জাহান এবং দূরপ্রাচ্যের এ সম্পর্ক এশীয় জাতিসমূহের স্বকীয়তা ও সক্ষমতা অর্জনে যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে বিশ্বাস করা যায়।

লেখক: প্রফেসর, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[সংকলিত]