খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ২২ এপ্রিল ২০১৭: সব ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্সের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ক্রিকেটারদের পুরস্কৃত করতে হু হু করে বেতন বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ২০১৬ সালে কেন্দ্রিয় চুক্তিতে থাকা ১৫ ক্রিকেটারের বেতন ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করে রীতিমতো হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডকে মিরপুর টেস্টে হারিয়ে দিয়ে শ্রীলংকার মাটি থেকে বাংলাদেশের শততম টেস্ট জয় এবং তিনটি সিরিজ ড্র’ করায় ক্রিকেটারদের বিশেষভাবে পুরস্কৃত করতে বেতন, ম্যাচ ফি এবং ম্যাচ, উইনিং বোনাস, ক্রিকেটারদের চাহিদার চেয়েও বেশি বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি। শনিবার বিসিবি’র পরিচালনা পরিষদের ১৬তম সভায় এই বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ার কথা। এই প্রস্তাব অনুমোদিত হলে শুধু কেন্দ্রিয় চুক্তিতে মনোনীত ১৬ ক্রিকেটারের বেতনই বাড়বে ৭৫ শতাংশ হারে! ‘এ’ প্লাস গ্রেডের ক্রিকেটারদের বেতন গত বছর যেখানে ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এ বছরের জানুয়ারী থেকে তা ৪ লাখ টাকায় উন্নীত হচ্ছে! তবে ‘এ’ প্লাস গ্রেডের চার ক্রিকেটারের বেতন যে হারে বাড়ছে, অন্য চার গ্রেডের ক্রিকেটারদের বেতন সে হারে বাড়ানো হচ্ছে না। ‘এ’ গ্রেডের ক্রিকেটারদের বেতন ২ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা, ‘বি’ গ্রেডের বেতন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা, ‘সি’ গ্রেডের বেতন ১ লাখ টাকা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ‘ডি’ গ্রেডের ক্রিকেটারদের বেতন ৭৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে বিসিবি’র ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি! গতবার যেখানে ১৫ ক্রিকেটারের পেছনে মাসে বেতন খাতে বিসিবিকে গুণতে হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা, এবার সেখানে এই খাতে ১৬ ক্রিকেটারের মাসিক বেতন উন্নীত হচ্ছে ৩৭ লাখ ৫ হাজার টাকা! অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। গতবার যেখানে ‘এ’ প্লাস গ্রেডে ছিলেন ৫ ক্রিকেটার, সেখানে এবার এই গ্রেডে জায়গা হয়নি মাহামুদুল্লাহ’র। গ্রেড নির্ধারণে যে রেটিং পয়েন্ট নির্ধারিত হয়েছে, সেই রেটিং পয়েন্ট মাত্র ১১ পয়েন্ট কম থাকায় মাহামুদুল্লাহ (৯০১ পয়েন্টের জায়গায় ৮৯০ পয়েন্ট) কে ‘এ’ গ্রেডে পড়তে হয়েছে। ‘এ’ প্লাস আছেন মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামীম ইকবাল, মাশরাফি বিন মর্তুজা। সর্বাধিক ১১৫৯ পয়েন্ট এবং টেস্ট ক্যাপ্টেনসির কারনে কেন্দ্রিয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে মাসে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বেতন পাবেন তিনি। সেখানে সাকিব ও তামীম ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে এবং মাশরাফি মাসে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা হারে বেতন পাবেন। গতবার যেখানে কেন্দ্রিয় চুক্তিতে ক্রিকেটারদের সংখ্যা ছিল ১৫, এবার সেখানে ক্রিকেটারদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছে ১৬ তে। বাদ পড়েছেন নাসির হোসেন, আল আমিন এবং আরাফাত সানি। কেন্দ্রিয় চুক্তিতে ঢুকছেন এবার মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, কামরুল ইসলাম রাব্বী। এই চার ক্রিকেটারের মধ্যে তাসকিন ‘সি’ গ্রেডে, অবশিষ্ট তিনজন সেখানে ‘ডি’ গ্রেডে বেতন পাবেন। এছাড়া ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, মুমিনুল, সাব্বির রহমান ও সৌম্য ‘বি’ গ্রেডে বেতন পাবেন। শুধু বেতনই নয়, বেশ ক’বছর স্থির থাকা ম্যাচ ফি’র অংকও বাড়াচ্ছে বিসিবি। টেস্টে ম্যাচ ফি বাড়ছে ৭৫ শতাংশ হারে। ২ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত হচ্ছে টেস্টের ম্যাচ ফি। ওয়ানডেতে সেখানে ম্যাচ ফি দ্বিগুণে উন্নীত হয়ে ১ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ টাকায়! টি-২০ তে সেখানে ৬৬ শতাংশ হারে ম্যাচ ফি বেড়ে যাচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা থেকে উন্নীত হচ্ছে তা ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়! লোভনীয় ম্যাচ উইনিং বোনাসেও ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সে উদ্বুদ্ধ করতে চাইছে বিসিবি। টেস্টে র্যা ঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৩ দলের কাউকে হারালে ক্রিকেটাররা এক একজন নির্ধারিত ম্যাচ ফি’র বাইরে ইতোপূর্বে পেতেন ৩ হাজার মার্কিন ডলার। এবার তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার মার্কিন ডলারে। র্যা ঙ্কিংয়ে ৪ থেকে ৬ নম্বর দলের বিপক্ষে জিতলে যেখানে আগে ২ হাজার মার্কিন ডলার নির্ধারিত ছিল, এবার তা উন্নীত হচ্ছে ৩ হাজার ডলারে এবং ৭ থেকে ৯ নম্বর র্যা ঙ্কিংধারী দলের বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং বোনাস ১ হাজার ৫০০ ডলার থেকে বেড়ে উন্নীত হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ ডলারে। একইভাবে ওয়ানডেতে র্যা ঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিন দলের কাউকে হারালে আগে যেখানে ম্যাচ উইনিং বোনাস বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫০০ ডলার, তা এবার বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৫০০ ডলারে। ওডিআই র্যা ঙ্কিংয়ে ৪ থেকে ৬ নম্বর দলের বিপক্ষে জিততে ম্যাচ উইনিং বোনাস ১ হাজার থেকে ২ হাজার ডলারে নির্ধারিত হচ্ছে। ৭ থেকে ৯ নম্বর দলের বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং বোনাস সেখানে ৫০০ ডলারের পরিবর্তে ১ হাজার ডলারে উন্নীত করার প্রস্তাব আজ দিচ্ছে বিসিবি’র ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি। টি-২০ তে সেখানে ম্যাচ উইনিং বোনাস সেখানে যথাক্রমে ১ হাজার ৫০০, ১ হাজার এবং ৮০০ ডলার। তিন ফরমেটের ক্রিকেটে অপরিহার্য ক্রিকেটার মুশফিক বছরে শুধু বেতন খাতে বিসিবি থেকে উত্তোলন করবেন ৫২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ বছর এফটিপিতে থাকা ১১টি টেস্ট, ১৬টি ওয়ানডে এবং ৮টি টি-২০ খেললে বেতন, ম্যাচ ফি এবং ম্যাচ উইনিং বোনাস মিলিয়ে বিসিবি’র অ্যাকাউন্ট থেকে মুশফিকুর রহিম, সাকিব, তামীমের আয়ের অংক ছাড়িয়ে যাবে কোটি টাকা!