Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

Untitled-1

খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭:  প্লাাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্যের পরিবেশ বিধ্বংসী আগ্রাসন ঠেকাতে পাটের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে বিশ্বের সচেতন মানুষ। ফলে বাংলাদেশের এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের বিশ্বব্যাপী সুদিন ফিরে আসছে। পাটপণ্যের জাগরণ শুরু হয়েছে নতুন করে। মানুষ যত সচেতন হচ্ছে ততই ব্যবহার বাড়ছে পাটের। বাংলাদেশেও সেই হাওয়া লেগেছে। একসময় বাংলাদেশের পাটের বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল ভারত, চীন ও পাকিস্তান। বর্তমানে সেই বাজার বিস্তৃত হয়েছে আরও ২২টি দেশে। থাইল্যান্ড, সুদান, সিরিয়া, ভিয়েতনাম, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ডসহ পশ্চিমের অনেক দেশেই এখন বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। নতুন নতুন বাজারের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এক সময়ের বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশী পাট আগের গৌরবের জায়গায় ফিরে আসছে ধীরে ধীরে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়লেই দেশের পাটকলগুলো সারা বছর কর্মচঞ্চল থাকতে পারে। পাটের বাজারমূল্য বেড়ে যেতে পারে এবং পাট চাষীরাও পেতে পারেন ন্যায্যমূল্য। এ জন্য সরকার’ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট ২০১০’ করেছে। এটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের অভ্যন্তরেই পাটপণ্যের চাহিদা অনেক বাড়ানো যাবে বলে মনে করছেন সব মহল। এই আইনের আওতায় খুব শীঘ্রই অবৈধ পলিথিন ও প্লাাস্টিক ব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হওয়া উচতি বলে মনে করি।

অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণের সচেতনতা শুরু করতে হবে আমাদের শিক্ষার্থী মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়নে গণমাধ্যমকেও জোড়ালো ভূমিকা রাখতে হবে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে পাটের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে জড়িত। মিলগুলোতে বর্তামানে প্রায় ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। তাদের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৫ লাখ মানুষ।

16179785_403188246684663_8937400110857365923_o

দেশের বাজারে পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা এবং ব্যবহার বাড়াতে পারলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানী করতে গিয়ে দর কষাকষি করতে পারতাম। তখন রপ্তানী মূল্যও বেশী অর্জিত হত। এজন্য বহুমূখি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। দরকার বাধ্যতামূলক প্যাকেজিং এ্যাক্ট বাস্তবায়ন। আজকের দিনে আধূনিকায়ন ও বহমূখিতার অভাবে পাটশিল্পের অগ্রগতি থেমে আছে। এই শিল্পের আধুনিকায়ন ও টিকে থাকার জন্য আরও বেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। সহজ শর্তে ও সহজলভ্য ভাবে পাটচাষী এবং পাটপণ্য উৎপাদনকারী, ফেব্রিক উৎপাদনকারী, কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ উৎপাদনকারীদের সরকারীভাবে অর্থ যোগান দিতে হবে। বাংলাদেশের সকল ব্যাংকগুলো থেকে বিনা জামানতে ঋণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছর সুদবিহীন ঋণ দেওয়া উচিত বলে মনে করি। এই ঋণ বা অর্থ যৌথ বিনিয়োগ চুক্তির ভিত্তিতে হতে পারে। এই বিষয়গুলো বাস্তবায়নে যতবেশী কালক্ষেপণ হবে, ততবেশীই পিছিয়ে পড়বো আমরা।

এদিকে পৃথিবীজুড়ে জুট জিও-টেক্সাইলের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। জুট জিও-টেক্সাইল সিনথেটিকের জায়গা দখল করে নেবে। কারণ এটা প্রকৃতি বান্ধব। সর্বোপরি পাট নিয়ে এখন আমরা অনেকভাবে কাজ করছি। পাটপণ্যের সুদিন ফিরে আসছে। পৃথিবীর অনেক দেশে সিনথেটিক পণ্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। তারা এখন ঝুঁকছে পাটের প্রতি। বাংলাদেশেই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানের পাট হয়। ভারত আমাদের চেয়ে বেশি পাট উৎপাদন করলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে তারা রপ্তানি করতে পারে না। সুতরাং বিশ্ববাজারের আগামীর চাহিদা আমাদেরকেই পূরণ করতে হবে।

বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক পাটপণ্য। প্রতিটি পরিবার হোক পাট পরিবার।

লেখক: কৃষি ও গণমাধ্যমকর্মী
ফাউন্ডার এন্ড সিইও, পাটশালা।
নির্বাহী পরিচালক, কর্মশক্তি যুব নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন।
সম্পাদক, সোনালী আঁশের হীরক কথা।