Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

19kখােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭: সারাদেশে গড় পাসের হার ৮০ শতাংশ অতিক্রম করলেও কুমিল্লা বোর্ডের গড় পাসের হার ৫৯.০৩ শতাংশ। বিগত ১০ বছরের তুলনায় এ বছর কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফল তুলনামূলক বিপর্যয় ঘটেছে। অবশেষে জানা গেল কুমিল্লা বোর্ডে খারাপ ফলাফলের মূল কারণ।

কারণ হিসেবে পরীক্ষকরা দুষছেন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে। অন্যদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষেরও সোজা-সাপটা জবাব মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা তারা বাস্তবায়ন করতে পরীক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন মাত্র।

মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষকদের অভিমত শুধুমাত্র বোর্ডের কঠোর নির্দেশনার কিছুটা অনুকম্পা দেখালেই পাসের হার অন্তত ৭৫ অতিক্রম সম্ভব হতো।

কিন্তু সর্বনাশ যা-ই হবাব তা হয়ে গেছে। তাই বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লাসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন।

মন্ত্রণালয়ের কথিত মডেল উত্তরপত্র পরীক্ষকদের কাছে সরবরাহ করে ভয় দেখিয়ে দফায় দফায় খাতার নম্বর কমানোর নির্দেশ দাতা হিসেবে জড়িত বোর্ডের কর্মকর্তাদের অপসারণেরও দাবি উঠেছে।

এদিকে ফল পরিবর্তন ও ফেল করা শিক্ষার্থীদের শেষ ভরসা হিসেবে ফলাফল পুন:নিরীক্ষার জন্য অনলাইনে আবেদনের হিড়িক পড়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, এ বছর বোর্ডের অধীনে

কুমিল্লা, বি-বাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও লহ্মীপুর জেলা থেকে এক লাখ ৮২ হাজার ৯৭৯ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

এর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ৮ হাজার ১১ জন। প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থীই পাসের মুখ দেখেনি। এর মধ্যে ৬০ সহস্রাধিক পরীক্ষার্থী ফেল করেছে গণিত ও ইংরেজিসহ আরও একাধিক বিষয়ে।

বোর্ড কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের উপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত থাকলেও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন।

এসএসসিতে ২০১০ সালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ০৩ শতাংশ, ২০১১ সালে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৮৫, ২০১২ সালে ৮৫ দশমিক ৬৪, ২০১৩ সালে ৯০ দশমিক ৪১, ২০১৪ সালে ৮৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৮৪ দশমিক ২২ শতাংশ ও ২০১৬ সালে ৮৪ শতাংশ।

এবার পাসের হার ৫৯ দশমিক ০৩ শতাংশে নেমে আসায় এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তাই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুধি মহল থেকে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।

কাঙ্খিত পয়েন্ট না পাওয়া ও ফেল করা একাধিক শিক্ষার্থীদের অভিমত ‘যে নিয়মে এ বোর্ডে খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে সেই নিয়মে অন্য বোর্ডের খাতা মূল্যায়ন করা হলে সেখানে পাসের হার ৪০ এর নীচে নেমে আসতো।’

ফল বিপর্যয়ের কারণে দেশের অন্যান্য বোর্ডের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকসহ পরবর্তীতে প্রতিযোগিতামূলক অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়বে বলে হতাশা ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে কুমিল্লা বোর্ডের অধীন ৬ জেলার শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে ফল বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে উচ্চ মাধ্যমিকেও ফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সচেতন অভিভাবকরা।

বোর্ডের নির্দেশনাই সর্বনাশ ঘটিয়েছে পরীক্ষার্থীদের : একাধিক প্রধান পরীক্ষক জানান, কথিত মডেল উত্তর পত্র সরবরাহ করে পরীক্ষকদের মন্ত্রণালয়ের ভয় দেখিয়ে নির্দেশনা দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করতে বাধ্য করায় পাসের হার সকল বোর্ডের তলানীতে স্থান পায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর একাধিক স্কুলের পরীক্ষক জানান, খাতা মূল্যায়নে এ বছর তাদের কঠোর থাকতে বাধ্য করা হয়, এমনকি খাতায় নম্বর প্রদানে কোনো অনুকম্পা ধরা পড়লে সন্মানী কর্তনসহ ভবিষ্যতে আর খাতা না দেয়ার হুমকি দেয়া হয় বোর্ড থেকে।

এছাড়াও এসব খাতা মন্ত্রণালয়ের টিম দেখতে পারে এমন ভয় দেখিয়ে নম্বর কমিয়ে রাখতে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সহিদুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।