খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত রোডম্যাপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটি বলছে, এই রোডম্যাপ সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির সদিচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ চায় বিএনপি। তারা বলছে, রোডম্যাপ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি নির্বাচন কমিশন দিতেই পারে। সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে সেই বিষয়টি আগে সমাধান করতে হবে।
এদিকে, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগই জুলাই থেকে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপসহ ইসির রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে যেসব প্রস্তাব ও সুপারিশ আসবে, সেগুলোর বাস্তবায়ন ও জনসমক্ষে প্রকাশের দাবিও তুলে ধরেছে কয়েকটি দল। তারা বলছে, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থেই এটি জরুরি।
মঙ্গলবার রোডম্যাপ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করে ইসি। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য স্থির করে এই রোডম্যাপে ইসি চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে বলে জানিয়েছে। এ নিয়ে গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, ইসি তাদের দায়িত্ব ও প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এই রোডম্যাপ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সব সময়ই চায় সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সব পদক্ষেপেই সহযোগিতা করবে তারা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ইসি ঘোষিত রোডম্যাপকে আওয়ামী লীগ ইতিবাচকভাবে দেখছে। নির্বাচন কমিশনের ‘রোড ম্যাপ’ কী আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিতথ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা বোধহয় সঠিক নয়। আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী সঠিক সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।
দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, এটি ইসির ভালো উদ্যোগ। এর মধ্যদিয়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাজ শুরু করলো ইসি। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচনী আইনের সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ইত্যাদি কাজ সারতে অনেক সময় প্রয়োজন। এ কারণেই হয়তো ইসি একটি রোডম্যাপ দিয়ে আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের অংশ হিসেবেই ইসি আগে থেকেই পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। আওয়ামী লীগ সব সময় চায়, জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনই সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হোক। সে লক্ষ্যে ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত।
তবে ইসির রোডম্যাপ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই বিএনপির। তারা বলছে, এই রোডম্যাপ ইসি দিলেও সরকারের নির্দেশেই তা ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যমান ‘রাজনৈতিক সংকট’ সমাধান করতে হলে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের’ ফয়সালা আগে করতে হবে। এরপর কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করা যায়থ তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে এই আলোচনা হতে হবে সরকারের সঙ্গে। আলোচনার পথও তৈরি করতে হবে সরকারকেই।
এদিকে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ইসির রোডম্যাপ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া দলসমর্থিত বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ ও পেশাজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসব আলোচনার পরই বলা যাবে বিএনপি কোনদিকে যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, একাদশ নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হলে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ প্রতিষ্ঠার বিষয় আগে ফয়সালা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের ইচ্ছেমতো সংবিধান কাটছাঁট করা হয়েছে। তাই সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপের ঘোষণা দিলেই হবে না।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, রোডম্যাপ দিয়ে কী হবে! নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মানুষের মধ্যে যে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে, তার সমাধান আগে প্রয়োজন। এই রোডম্যাপ দিয়ে রাজনৈতিক সংকট সমাধান হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচন বিষয়ে রোডম্যাপ দেবে, এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি দেশে আছে কি-না সেটিও ভাবতে হবে। আমরা ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার’ চাই।
অন্যান্য দলের প্রতিক্রিয়া :১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণে হয়, সে লক্ষ্য নিয়েই ইসি আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপসহ আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে তারা। ইসির এই ভালো পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানান।
১৪ দলের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই ইসি রোডম্যাপ দিয়েছে। এটি তাদের রুটিন ওয়ার্ক। একে আমরা স্বাগত জানাই।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপ আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। তবে কেবল আনুষ্ঠানিক সংলাপ করে দায় সারলেই হবে না, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশ করবে সেগুলোর বাস্তবায়নও করতে হবে। সেই সঙ্গে জনগণকেও জানাতে হবে কোন দল কী কী প্রস্তাব করেছে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আগেও সংলাপ হয়েছে। তবে সেসব সংলাপের প্রস্তাব কিংবা সুপারিশমালার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তারপরও ইসি ডাকলে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে মতামত তুলে ধরবেন তারা। সমকাল