Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। সোমবার , ৫ জুন, ২০১৭:  69পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে অন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকা পাহাড় অধিগ্রহণ ছাড়াই কেটে সড়ক নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-সিসিসি। চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ খুলশী আবাসিকের কবরস্থান এলাকার সীমানা সংলগ্ন এ পাহাড় কেটে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভূমি অধিগ্রহণ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই গত মাসে এ সড়কের নির্মাণের জন্য অ্যালাইনমেন্টের কাজ শুরু করে সিসিসি।
পাহাড়টির মালিকানা দাবি করে সাইডার (চিটাগাং ইনস্টিটিউট অব অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ) এর ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান নাদের খান বলেন, পাহাড়টি আমাদের। সিসিসি জনস্বার্থে অবশ্যই অবকাঠামো ও সড়ক নির্মাণ করবে, তাতে আমরাও খুশি, তবে যথাযথ আইন মেনে ভূমি অধিগ্রহণ করেই সেটা করতে হবে।
“গত ১৮ মে আলাউদ্দিন নামের একজন ঠিকাদার পরিচয়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন শ্রমিক নিয়ে এসে পাহাড় কাটতে শুরু করে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষী বাঁধা দিলে রাস্তাটি কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণের কাজ বলে ভয় দেখায়।”
সাইডারের মালিকানাধীন মোট ৪০ শতক পাহাড়ের ১৭ শতক কেটে ২২ ফুট প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নাদের খানের।
তিনি বলেন, “আমি খুলশী থানা, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সিসিসি’র মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। যদি কোনো ব্যবস্থা তারা না নেয়, তাহলে আদালতে মামলা করব।”
সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ খুলশী বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি ও ডেবারপাড় এলাকার লোকজনের নগরীর মূল সড়কে আসতে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়।
দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকার কবরস্থান সংলগ্ন এলাকার পাহাড় কেটে সড়কটি নির্মাণ করা হলে মূল সড়কে আসতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগবে ওখানকার বাসিন্দাদের।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, পাহাড়ের একপাশে প্রায় ২২ থেকে ২৫ ফুট অংশ কেটে সড়কের জন্য অ্যালোইনম্যান্ট করা হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক সড়কের জন্য প্রস্তুত করা অংশে মাটি ভরাটের কাজ করছে। সড়কের জন্য নির্ধারিত অংশ থেকে ঘূণিঝড় মোরার প্রভাবে হওয়া ভারি বর্ষণে সরে গেছে বালি। সেগুলো আবার ভরাট করছে শ্রমিকরা।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (হিসাব) খন্দকার তাহাজ্জুত আলী বলেন, “পাহাড় কাটার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছি। “পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী যে কোনো অবকাঠামো ও সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি লাগবে। সিসিসি আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। আমরা প্রাথমিকভাবে স্থানীয় কাউন্সিলরকে নোটিশ দিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কাজ না করার জন্য বারণ করেছি।”
পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়নি বলে স্বীকার করেন সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “আমরা ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করিনি। শিগগিরি আবেদন করব। আশা করছি জনস্বার্থে পরিবেশ ছাড়পত্র পেতে কোনো সমস্যা হবে না।”
অন্য প্রতিষ্ঠানের জমি অনুমোদন না নিয়ে কাজ শুরু করার বিষয়ে সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “কাজটি ঠিক হয়নি। জমি অধিগ্রহণের জন্য আমরা শিগগিরি ওনাদের সাথে বসব।”
এ সড়কটি হলে নগরীর জাকির হোসেন সড়ক, আমবাগান সড়কের উপর যানবাহনের চাপ কমে আসবে বলেও জানান তিনি। “ওখান দিয়ে আগে পায়ে হাঁটা সড়ক ছিল। আমরা শুধু প্রশস্ত করছি। এখনো আমরা অর্থ বরাদ্দ চূড়ান্ত করিনি। শুধু অ্যালাইনমেন্টের কাজ করছি।”
প্রধান প্রকৌশলী আলোচনার কথা বললেও ওই পাহাড়টি সাইডারের মালিকানায় নয় বলে দাবি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণের। তিনি বলেন, “সাইডারের মালিকানার যে দাবি করা হচ্ছে, সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।” যে সড়কটি হচ্ছে সেটি সাইডারে জায়গার মধ্যে পড়েনি দাবি করে হিরণ বলেন, “এটি যদি না করা হয় তাহলে সাইডার কর্তৃপক্ষ নিজেরাও তাদের জায়গায় যেতে পারবে না।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেহেতু রাস্তাটা ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য তৈরি করছি না, সেজন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে দেওয়া নোটিশ প্রত্যাহার করে যথাযথ ব্যক্তির বা সংস্থার কাছে নোটিশ প্রদান করার জন্য বলেছি।