Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

আহমদ রফিক
খােলা বাজার২৪। সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৭: পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শ সত্ত্বেও জাতীয়তাবাদী ও সমাজতন্ত্রী উভয়ে উপদ্রুত জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সমর্থন করে। বরং এ ব্যাপারে লেনিন-স্তালিনের লিখিত নীতি সোভিয়েত মধ্য এশিয়ার ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দরজা খুলে দিয়েছিল।
সে উন্নয়নের ধারা ও মাত্রা ছিল অনন্য সাধারণ।

ইহুদি ধর্মীয় জাতি-গোষ্ঠীর দেশান্তরে যাযাবর জীবনযাত্রা এক ঐতিহাসিক ঘটনা! এর নান্দনিক চরিত্রও কিংবদন্তিসুলভ। তাদের যাযাবরবৃত্তির অবসান ঘটে হিটলারের ইহুদি নিধনের বর্বরতায়; যদিও এর পেছনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণের গুরুত্ব কম ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে মিত্রশক্তির তিন প্রধান—রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্তালিনের সম্মতিতে ইহুদিদের জন্য সুনির্দিষ্ট আবাস ও আশ্রয়স্থল গঠিত হলো অন্য আরেক জাতিসত্তার সর্বনাশ ঘটিয়ে। গঠিত হলো ধর্মীয় জাতিরাষ্ট্র ইসরায়েল।

প্রায় অনুরূপ দুর্ভাগ্যপীড়িত জাতি-গোষ্ঠী প্যালেস্টাইনি (ফিলিস্তিনি) আরবরা। তারা সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থশক্তির খেলার পুতুল হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে অনুরূপ যাযাবরবৃত্তিতে সময় কাটিয়েছে। স্বভাবতই তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তথা স্বাধীন আবাসস্থল এবং নিজস্ব রাষ্ট্রের দাবি নিয়ে লড়াই। ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে গঠিত পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) দীর্ঘদিন ধরে সামরিক আন্দোলন চালিয়ে এসেছে।
একে সন্ত্রাসবাদী বলা যুক্তিযুক্ত নয়।

এ দাবিতে আদর্শগত ভিন্নতায় সমাজতন্ত্রী ফিলিস্তিনি আন্দোলনও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানের নীতিমাফিক এসব ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদীরাই জনসমর্থনের প্রাধান্য পায়। যেমন পেয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা। ব্যতিক্রম অবশ্য আছে, যেমন আলজেরিয়ার স্বাধীনতাসংগ্রাম। কিন্তু ইঙ্গ-মার্কিন-ইহুদি ভোটের কল্যাণে সাময়িক শান্তিচুক্তি ও নড়বড়ে আবাসভূমি সত্ত্বেও মূলত ইসরায়েলের বিরোধিতার কারণে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারছে না। এর নেপথ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক খেলা, ইসরায়েলি তোষণ।

এ কয়েক দিনের দৈনিকে গুরুত্বপূর্ণ খবর স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়ায় স্বাধীনতার পক্ষে গণভোটের তোড়জোড়। আর তা নিয়ে ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, তারা স্বাধীনতার এজাতীয় দাবি মেনে নেবে না। কিন্তু কাতালানরা এ বিষয়ে অনড়। উল্লেখ্য, যে কাতালোনিয়ায় স্প্যানিশভাষী অধিবাসীর সংখ্যা মাত্র ১৬ শতাংশ। এ অবস্থায় সেখানে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা বড় হয়ে উঠেছে।

উদাহরণ টানতে স্পেনের বাস্কভাষীদের কথা বলতে হয়। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছরে আমার কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে, যা নিগৃহীত বাস্কদের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। কিন্তু নানা কারণে এদের দাবি যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠছে না। তবে অবস্থাদৃষ্টে বাফার স্টেট বেলজিয়ামের ফ্লান্ডার্সও নড়েচড়ে উঠেছে। এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল অবশ্য আজকের নয়। ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ফ্লান্ডার্স দীর্ঘদিন থেকে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে আসছে। অর্থাৎ ইউরোপজুড়ে আত্মশাসনের জন্য অস্থিরতা।

দুই.

দীর্ঘ ভূমিকা শেষে মূল আলোচ্য বিষয় স্বাধীন কুর্দিস্তান নিয়ে কথকতা। কুর্দি জাতিসত্তার বিষয়টি আরো জটিল। কারণ কুর্দিভাষী জনগোষ্ঠী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক রাজ্যের প্রান্তিক অঞ্চলে। যেমন—ইরান, ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক প্রভৃতি দেশে। আর এদের স্বায়ত্তশাসন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতাসংগ্রামও আজকের নয়। দীর্ঘকালীন এ স্বাধীনতাসংগ্রামে অনেক কুর্দি বিদ্রোহীর প্রাণ গেছে, বিদ্রোহী কুর্দি নেতা ফাঁসিতে প্রাণ হারিয়েছেন। তবু লড়াই বন্ধ হয়নি।

তুর্কি কুর্দিদের ওপর সংঘটিত তুর্কি শাসকদের বর্বরতা কোনো রীতি-নীতির ধার ধারেনি। একই অবস্থা ছিল প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন শাসিত ইরাকে। একই অবস্থা সিরিয়ায়। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে ইঙ্গ-যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে দেদার তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছে। অন্যদিকে ইরাক আক্রমণ করে কুর্দিদের সহায়তা নিয়ে ইরাক দখলের পর যে পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করে, তার প্রথম প্রেসিডেন্ট করা হয় কুর্দি বারজানিকে। তাঁর সমর্থনেই সাদ্দামের ফাঁসি কার্যকর সহজ হয়।

বাথ সোশ্যালিস্ট পার্টি শাসিত ও মার্কিনবিরোধী ইরাককে চিরদিনের মতো পঙ্গু করে রাখার উদ্দেশ্যে ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাত চালু রেখেছে মার্কিন প্রশাসন। বারজানির সহায়তার পুরস্কার দিয়েছে ইরাকের একাংশে কুর্দিদের স্বশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে। একসময় তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করতে, নৃশংসভাবে হত্যা করতে ওয়াশিংটন তুর্কি সরকারের কাছে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দেদার বিক্রি করেছে। এখন আবার তারা বাশার সরকারের পতন ঘটাতে বাশারবিরোধী যুদ্ধরত কুর্দিদের সব রকম সহায়তা দিচ্ছে।

এখন ওয়াশিংটনের প্রধান লক্ষ্য কুর্দিদের নানাভাবে সাহায্য-সহায়তা দিয়ে কুর্দিস্তানকে হাতের মুঠোয় রাখা। হোক সে কুর্দিস্তান স্বায়ত্তশাসিত বা স্বাধীন কুর্দিস্তান। কিছুদিনের মধ্যে ইরাকি কুর্দিস্তানে গণভোট হতে যাচ্ছে। বলাবাহুল্য, তাতে স্বাধীন-সার্বভৌম কুর্দি রাষ্ট্রের পক্ষে মতামত প্রকাশ পাওয়ারই কথা। কিন্তু গণভোটে বিজয় আর বাস্তবে তা প্রতিষ্ঠিত করা—এ দুইয়ের মধ্যে অনেক ফারাক। কারণ এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যসহ একাধিক রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত।

সে ক্ষেত্রে তুরস্ক-ইরান-সিরিয়া স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষে না থাকারই কথা। বিশেষ করে ইরান ও সিরিয়া। তুরস্কের বহুমুখী রাজনীতির কূটকৌশলের চানক্য এরদোয়ান শেষ পর্যন্ত কোন পথ বেছে নেন, তা দেখার মতো। ইরাকে যদি স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়ও, সেখানে ইরানি, তুর্কি, সিরীয় কুর্দি সবার হিজরত করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ইরাকের কুর্দি আঞ্চলিক সরকার (কেআরজি) বিশ্বে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলে তুর্কি, ইরানি কুর্দিরা কি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে? এখানেই বড় সমস্যা।

কুর্দিদের স্বাধীনতার লড়াই দীর্ঘ সময়ের, শতবর্ষের তো বটেই। ওই লড়াইয়ে ব্যর্থতার বড় কারণ বিশ্বপরাশক্তির স্বার্থপরতা, একাধিক রাষ্ট্রে কুর্দিদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা, নিজেদের মধ্যে কিছুটা হলেও আদর্শগত অন্তর্দ্বন্দ্ব ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে তুর্কি কুর্দিদের ছিল বিচ্ছিন্নতার লড়াইয়ে প্রধান ভূমিকা। কুর্দি জাতিসত্তার মধ্যে এদের সংখ্যা ও সাংগঠনিক শক্তি অপেক্ষাকৃত বেশি। আবার বিভাজনও বেশি!

তবে তা প্রধানত দুই প্রধান আদর্শবাদী ধারায়। যেমন তুরস্কে রয়েছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। এরা মার্ক্সবাদী ঘরানার এবং সমাজতান্ত্রিক কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে চার দশক ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আছে অনেক মৃত্যু, অনেক রক্ত, অনেক ক্ষয়ক্ষতির মুখে। এদের প্রতি তুর্কি সরকারের নিষ্ঠুরতার তুলনা নেই। তবে মজার ব্যাপার হলো, জাতীয়তাবাদী ঘরানার কুর্দিরা, যেমন কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (কেডিপি) ও প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়ন অব কুর্দিস্তান (পিইউকে) একই কুর্দি জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও নিছক আদর্শগত কারণে কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টির বিরুদ্ধে তুর্কি সরকারের সহায়তায় আত্মঘাতী লড়াই চালিয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে কুর্দি মার্ক্সবাদীরা তাদের মধ্যে সংখ্যালঘু, শক্তি-সামর্থ্য কম। তবে আদর্শগত নিষ্ঠায় মানসিক শক্তিতে প্রবল। তা না হলে এতকাল ধরে এত ক্ষয়ক্ষতির মুখে তুর্কি অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকতে পারে? তবু রাজনৈতিক নিয়মে জাতীয়তাবাদীরা বরাবরই তুলনামূলকভাবে শক্তিমান; সব দেশে, সব কালে। বাংলাদেশ তার বড় প্রমাণ। আর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি জাতীয়তাবাদীদের প্রতিই সমর্থন জোগায়। এবং তা রাজনৈতিক স্বার্থ, আদর্শিক স্বার্থ ইত্যাদি কারণে। ফিলিস্তিন ভূ-রাষ্ট্রিক অধিকারের সশস্ত্র লড়াইয়েও দেখা গেছে জাতীয়তাবাদী শক্তির আধিপত্য। তাই জাতীয়তাবাদী ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মার্ক্সবাদী জর্জ হাবাসের পিছু হটা। তাতে ফিলিস্তিনি স্বার্থের ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। যেমন এখন চলছে চরমপন্থী হামাসের সঙ্গে আরাফাতপন্থীদের দ্বন্দ্ব। ইসরায়েল সে সুযোগ নিয়েছে। এখনো নিচ্ছে।

তিন.

ফের স্বাধীন কুর্দিস্তান রাষ্ট্রের প্রসঙ্গে আসা যাক। প্রশ্নটা হলো, ইরাকের কুর্দি জনতা স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষে ভোট দিলেই কি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে? মেনে নেবে ইরাক, ইরান ও তুরস্ক সরকার? কিংবা পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের সমর্থক মধ্যপ্রাচ্য? মনে হয় না। কারণ তেল ও জ্বালানি সমৃদ্ধ ওই অঞ্চলে রয়েছে অনেকেরই স্বার্থ। বিশেষ করে ইরাকি শাসক ও ওয়াশিংটনের, অংশত তুরস্কের। এখন যে সুবিধা তারা পাচ্ছে, স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্রে তা না-ও পেতে পারে। জাতিসংঘ স্বভাবতই এদের স্বার্থই দেখবে।

তবু জাতি, জাতিরাষ্ট্র বিচ্ছিন্নতার অধিকার বিষয়ে যেসব শর্ত স্বাধীনতার পক্ষে, তার প্রায় সবই কুর্দিদের পক্ষে। কারণ কুর্দিদের ভাষিক জাতিসত্তার পরিচয় সুনির্দিষ্ট। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং শোষণ ও পীড়নের শিকার। রাষ্ট্রিক পর্যায়ে সম-অধিকারের গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি তাদের পক্ষে নয়। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলো তাদের স্বাধীনতার বিপক্ষে।

এ ক্ষেত্রে বড় স্ববিরোধিতা হলো কুর্দিরা সিরিয়ায় আইএসবিরোধী, বাশারবিরোধী সংগ্রামে লিপ্ত, যাতে রয়েছে ওয়াশিংটনের সর্বমাত্রিক সমর্থন। তা সত্ত্বেও ‘যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন কুর্দিস্তানের বিরোধী। ’ এ মতামত জাতিসংঘের জনৈক অতি উচ্চপদস্থ বিশেষজ্ঞের। কারণ পাছে এতে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। পাছে তাদের বশংবদ ইরাক, তুরস্ক প্রভৃতি রাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়।

পূর্বোক্ত বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইরাকে স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। তাই ইরাকের গণভোটের ভিত্তিতে স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর সমর্থন জানানো উচিত। এমন ভাবনার কারণ এও হতে পারে যে এ রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা পরাশক্তির প্রতি সমর্থন জোগাবে রাশিয়া, ইরান ও সিরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে। কিন্তু এতটা গভীর চিন্তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আছে কি না তা-ও বিবেচ্য। গোটা বিষয়টি এখন ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায়।

তবু এমন ধারণার পক্ষে পরিস্থিতির সমর্থন রয়েছে যে কুর্দিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতীয়তাবাদী অংশ ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনের দিকেই হাত বাড়াবে। কারণ এই শক্তিমানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের স্বার্থসিদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র গঠনের আশায় তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে যাবে না। এরই মধ্যে সিরিয়ায় তারা মার্কিন তাঁবেদার। ইরাকেও তাই। একমাত্র তুর্কি কুর্দিদের সংগঠন পিকেকে মার্কিনবিরোধী, তা-ও অবস্থার ফেরে।

তা ছাড়া আদর্শগত বিচারেও কুর্দি জাতীয়তাবাদীরা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঘরানার নয়। তা সত্ত্বেও এটা সত্য যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষ নেওয়ার আগে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় বিবেচনায় রাখবে। তারা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট পথ ধরেই চলবে। তাতে অঙ্কটা যদি স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষে যায়, তো গেল। না হলে ভিন্ন পথ।

এ ক্ষেত্রে ইরানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অবস্থা এখন শাঁখের করাতের মতো। একদিকে ছোট্ট ইরানি কুর্দি জনগোষ্ঠী নিয়ে মাথাব্যথা, অন্যদিকে ইরাকি শিয়াদের সঙ্গে সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতটিও বিবেচনাযোগ্য। উল্টো দিকে শত্রু যুক্তরাষ্ট্র, যারা তাদের প্রধান শত্রু সৌদি আরব গোষ্ঠীকে জোর সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রসঙ্গটি এমন একটি গুরুতর জটিল অবস্থায় রয়েছে। আর সে কারণেই গণভোট চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য যথেষ্ট শক্তি নয়। তবে তা স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষে যাত্রা শুরু বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

লেখক : কবি, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী
image-id-662710
তিনি কি ভয় পেয়ে গেলেন
image-id-662704
সরব সবুজে নীরব কর্মী
image-id-662320
শিক্ষক এবং শিক্ষকতা
image-id-662008
স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র নিয়ে যথেষ্ট জটিলতা