ইকবাল কবীর মোহন
খােলা বাজার২৪। সোমবার,৩০ অক্টোবর ২০১৭: সমুদ্রবেষ্টিত বলকানের এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার অংশ দক্ষিণ আমেরিকার সমুদ্রসীমার সঙ্গে গিয়ে মিলেছে। এই অঞ্চলের দেশগুলো হলো—তুরস্ক, গ্রিস, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, আলবেনিয়া, মেসিডোনিয়া, কসোভো, মন্টেনিগ্রো, সার্বিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়া।
তালিকার শেষের সাতটি দেশ যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের সাবেক সদস্য। যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্র থেকে সাতটি দেশ ১৯৯০ সালে আলাদা হয়ে যায়। সমাজতন্ত্রের পতন ও যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্র ভেঙে যাওয়ার ফলে এই বলকান এলাকায় বসবাসরত মুসলমানরা নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হয়। বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সরকারের হাতে সে দেশের দুই লাখ মুসলমান জঘন্য হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। আর কসোভোতে নারকীয় হত্যার শিকার হয় প্রায় ১০ হাজার নিরীহ মুসলমান। তবে ১৯৯৫ সালে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সেব্রেনিসায় যে ছয় হাজার মুসলমান হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়, তা ছিল খুবই ভয়ংকর। মুসলমানদের ওপর এই ভয়ানক হত্যাযজ্ঞে গোটা বিশ্ব হতভম্ব হয়েছিল। এ ধরনের অত্যাচার, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও বলকানের মুসলমানরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখনো বসনিয়া-হার্জেগোভিনা প্রজাতন্ত্রে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী। তবে ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়ায় মুসলমানরা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রোতে মুসলমানদের অবস্থা বেশ দুর্বল। কসোভোতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ও মেসিডোনিয়ার প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা হচ্ছে মুসলিম। এদিকে আলবেনিয়ায় মুসলমানরা সংখ্যালঘিষ্ঠ হলেও তাদের বর্তমান অবস্থা খুব দ্রুত পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। গ্রিস ও বুলগেরিয়ায় মুসলমানরা সংখ্যালঘু জাতি-গোষ্ঠী। তুরস্ককে বাদ দিলে বলকান এলাকায় এখন ১৭ মিলিয়ন মুসলমানের বাস। আর তুরস্ককে ধরে বলকান এলাকার মুসলমান জনসংখ্যা হচ্ছে ৫০ মিলিয়ন। তথ্যমতে, খ্রিস্টানদের পর বলকানে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। বলকানের মুসলিম জনসংখ্যার বেশির ভাগ বাইরের দেশ থেকে সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে। বলকানের কয়েকটি দেশ বিশেষ করে রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, স্লোভেনিয়া ও গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। সর্বশেষ দেশ হিসেবে ক্রোয়েশিয়া ইইউর সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো ও আলবেনিয়াও ইইউর সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। উল্লেখ্য, সার্বিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া ও কসোভো বাদে বাকি সব বলকান দেশ ন্যাটোর সদস্য। এসব রাজনৈতিক অর্জন সত্ত্বেও বলকান এলাকার চিত্র তেমন একটা পরিচ্ছন্ন নয়। ইতালির অর্থনৈতিক সংকট ও ইউরোপের আর্থিক শ্লথগতি বলকান এলাকাকেও প্রভাবিত করেছে।
বসনিয়া-হার্জেগোভিনা
বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের একটি মুসলিম রাষ্ট্র। এর আয়তন ৫১ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার। দেশটির উত্তর-পশ্চিমে ক্রোয়েশিয়া, পূর্বে সার্বিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে মেসিডোনিয়া, দক্ষিণে অ্যাড্রিয়াটিক সাগর। দেশটির জনসংখ্যা ৩.৫ মিলিয়ন। ধর্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মুসলমান, ৩১ শতাংশ অর্থোডক্স ও ১৫ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক। এর রাজধানী সারায়েভো। ১৯৯০ সালের যুদ্ধাবস্থায় দেশটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। এখনো দেশটি থেকে অস্থিরতা দূর হয়নি। এখানে একদিকে রয়েছে সার্বিয়া প্রজাতন্ত্র, আর অন্যদিকে রয়েছে বসনিক ও ক্রোয়েশীয় ফেডারেল ব্যবস্থা। দেশটির রাজনৈতিক অবস্থা সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। ফলে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ দুর্বল। ঐতিহাসিকভাবে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার ইসলামী আদর্শের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এখানকার ইসলামী ঐতিহ্য শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ‘গাজি হুসরেভ বে মাদরাসা’ ও ‘সারায়েভো ইসলামিক ডিসিপ্লিন’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে যুদ্ধের আগে ও পরে নানা সমস্যা বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় সৃষ্টি হয়েছে। এখানে রয়েছেন বহু মুসলিম বুদ্ধিজীবী, যাঁরা ইসলামের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। আর তাঁরাই ইসলামের পতাকা গোটা ইউরোপে ওড়ানোর ক্ষমতা রাখেন বলে অনেকে মনে করেন।
কসোভো
কসোভোও বসনিয়া-হার্জেগোভিনার পরিণতি ভোগ করেছে। মুসলিম হত্যার ক্ষত কসোভোতে এখনো শুকায়নি। ২০০৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর এ পর্যন্ত পৃথিবীর ৮০টি দেশ কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দেশটি কখনো আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেনি। এখানকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আন্তর্জাতিক শক্তির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দেশ হচ্ছে আমেরিকা। তবে দেশটিতে বিচ্ছিন্নতার কালো ছায়া প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলের সার্ব জনগোষ্ঠী বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথ খুঁজছে। এটা যেকোনো সময় বড় ধরনের রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কসোভোর আয়তন ১০ হাজার ৯০৮ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১.৮৫ মিলিয়ন। রাজধানী ক্রিস্টিনা। জনসংখ্যার ৯৬ শতাংশ মুসলিম। কসোভোর দক্ষিণ-পশ্চিমে আলবেনিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে মেসিডোনিয়া, পশ্চিমে ক্রোয়েশিয়া ও উত্তরে সার্বিয়া অবস্থিত।
কসোভোর সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও শিক্ষাগত অবস্থা চমকপ্রদ। এখানকার প্রিস্টিনা বিশ্ববিদ্যালয় কসোভোর সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশটির ইসলামী ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তুরস্ক প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছে। কসোভোয় ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের জন্য ইসলামী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি এখন সময়ের প্রয়োজন। ১৯৯৯ সালের যুদ্ধের পর খ্রিস্টানরা এখানে বহু ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তারা একটা ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। এর বিপরীতে ইসলামী ঐতিহ্য লালন করার জন্য মুসলমানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
সার্বিয়া
যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর দেশটির সব ঐতিহ্য ধরে রেখেছে সার্বিয়া। যুদ্ধবিগ্রহ ও নানা রকম ঘাত-প্রতিঘাতের পরও বলকানের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেশ সার্বিয়া। এর আয়তন ৭৭ হাজার ৪৭৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা সাত মিলিয়ন। রাজধানী বেলগ্রেড। দেশটির উত্তরে হাঙ্গেরি, পূর্বে বসনিয়া ও বুলগেরিয়া, দক্ষিণে মেসিডোনিয়া, পশ্চিমে ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও মন্টেনিগ্রো। বর্তমানে ইইউ সদস্যপদ দেওয়ার মাধ্যমে দেশটিকে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের প্রভাব থেকে বের করে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রচেষ্টা বলকানের মুসলমানদের জন্য হবে নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর এবং সেখানে বসবাসরত আলবেনীয়দের জন্য বিপজ্জনক। ইইউ বর্তমানে যে একীভূত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এর সঙ্গে দেশটির সানসেক ও প্রেসেভার মুসলিম এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই এখানে মুসলমানদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বড় উদ্বেগের কারণ। তাদের হয়তো সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। সার্বিয়ায় দুটি মুসলিম অথরিটি কাজ করছে। একটি পরিচালনা করছেন মুয়ামার এফ জুকরলিক। তিনি ধর্মীয়ভাবে বসনিয়ার প্রতি অনুগত। অন্য অথরিটি পরিচালনা করছেন এদাম জিলকিক। এটি সার্বিয়ার রাষ্ট্রীয় অনুমোদন লাভ করেছে। এ ধরনের বিভাজন প্রেসোভোতেও বিরাজমান। এখানেও দুটি ধর্মীয় অথরিটি আছে—একটি প্রিস্টিনার প্রতি অনুগত, অন্যটি বেলগ্রেডের প্রতি। সার্বিয়ায় ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। তবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিরা শুধু এই শিক্ষা দিতে পারেন।
মন্টেনিগ্রো
অ্যাড্রিয়াটিক সাগরতীরের দেশ মন্টেনিগ্রো। এর পশ্চিমে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, উত্তর-পূর্বে সার্বিয়া, পূর্বে কসোভো, দক্ষিণ-পূর্বে আলবেনিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমে অ্যাড্রিয়াটিক সাগর। মন্টেনিগ্রোর আয়তন ১৩ হাজার ৮১২ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী পডগোরিকো। দেশটির জনসংখ্যা এক মিলিয়নের কম। এটি শান্তিপূর্ণভাবে যুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা হয় ১৯৯০ সালে। ফলে দেশটি খুব দ্রুত উন্নয়ন পরিকল্পনার পথে অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছে। মন্টেনিগ্রো এরই মধ্যে ন্যাটোর সদস্যপদ লাভ করেছে। ইইউর সদস্যপদের জন্য প্রক্রিয়া অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। দেশটির যেহেতু কোনো সমস্যা নেই, তাই এর ইইউর সদস্যপদ লাভ সহজ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মন্টেনিগ্রো আলবেনিয়া ও সার্বিয়ার আগেই ইইউর সদস্যপদ পাবে বলে অনেকের ধারণা। মন্টেনিগ্রোর জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ স্লোভাক অর্থোডক্স আর ২৫ শতাংশ মুসলিম। এর বেশির ভাগই বসনিয়ান। এর মধ্যে কিছু মুসলিম আছে, যারা আলবেনিয়ার নাগরিক। মন্টেনিগ্রোর মুসলমানরা তাদের ধর্ম-কর্ম সহজেই পালন করতে পারছে।
গ্রিস
এক লাখ ৩১ হাজার ৯৫৭ বর্গকিলোমিটার আয়তন ও ১১ মিলিয়ন জনসংখ্যার আরেকটি বলকান দেশ গ্রিস। দেশটির রাজধানী এথেন্স। জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ অর্থোডক্স ও ১.৮ শতাংশ মুসলিম। গ্রিসের দক্ষিণ-পশ্চিমে মেডিটারিনিয়ান ও লোনিয়ান সাগর, উত্তরে আলবেনিয়া, মেসিডোনিয়া ও বুলগেরিয়া আর পূর্বে তুরস্ক। গ্রিস ন্যাটো ও ইইউর সদস্য হলেও এর বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে অনেক সমস্যা। তবে বলকানে অনুকূল ভূমিকা রাখার মতো সামর্থ্য দেশটির নেই। গ্রিসের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। ইউরো জোনে দেশটির অবস্থা সবচেয়ে নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর কল্যাণে দেশটি কোনো রকমে চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রিসের অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থা আলবেনিয়ার ওপরও খানিকটা প্রভাব বিস্তার করছে। এখানকার মুসলমানদের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা ততটা ভালো না হলেও মুসলমানরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
বুলগেরিয়া
কমিউনিস্ট ধ্যান-ধারণার চারণভূমি বুলগেরিয়ার আয়তন এক লাখ ১০ হাজার ৯৯৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা সাত মিলিয়ন। দেশটির রাজধানী সোফিয়া। বুলগেরিয়ার উত্তরে বসনিয়া, পশ্চিমে সার্বিয়া ও মেসিডোনিয়া, দক্ষিণে গ্রিস ও তুরস্ক এবং পূর্বে ব্ল্যাক সি। বুলগেরিয়া ইইউ ও ন্যাটোর সদস্য। এখানকার সরকার ও জনগণ সব সময় মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলিম জনগোষ্ঠী। বুলগেরিয়ার মানুষ কখনো মুসলমানদের শ্রদ্ধার চোখে দেখেনি।
মেসিডোনিয়া
২৫ হাজার ৭১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ মেসিডোনিয়ার জনসংখ্যা প্রায় দুই মিলিয়ন। এর রাজধানী স্কোপজে। দেশটির উত্তর-পশ্চিমে কসোভো, উত্তরে সার্বিয়া, পূর্বে বুলগেরিয়া, দক্ষিণে গ্রিস ও পশ্চিমে আলবেনিয়া। যুগোস্লাভিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর দেশটি এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। এ দেশের সঙ্গে রয়েছে গ্রিসের দীর্ঘ বিরোধ। এই বিরোধ হলো ভাষা ও ইতিহাস নিয়ে। গ্রিস মেসিডোনিয়ার ভাষা ও ইতিহাস মানতে চাচ্ছে না। ফলে বিরোধ মীমাংসারও কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। আর এই বিরোধ দেশটিকে ইইউর সদস্যপদ লাভ করার ক্ষেত্রে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার্বিয়ার সঙ্গেও চার্চ বিষয়ে মেসিডোনিয়ার বিরোধ দীর্ঘদিনের। তবে মেসিডোনিয়া তার নিজের মতো করে দেশের পরিচিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। দেশটির সমস্যার প্রেক্ষাপটে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। ফলে দেশটির অর্থনীতি আছে ঝুঁকির মধ্যে। দেশের ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে মতবিরোধ ও বৈপরীত্য। এখানে জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মুসলিম। এদের বেশির ভাগ আলবেনিয়ার নাগরিক। তা ছাড়া আছে তুর্কি, বসনিয়া ও রুমানিয়ার অধিবাসী। কমিউনিস্ট শাসনের সময় দেশটির মসজিদগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এরপর এখনো সেখানে নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণের সুযোগ দিচ্ছে না বর্তমান সরকার। ফলে মুসলমানদের পক্ষে ধর্মীয় আচার পালন করা কঠিন হচ্ছে।
আলবেনিয়া
বলকান দেশ আলবেনিয়ার আয়তন ২৮ হাজার ৭৪৮ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ২.৮ মিলিয়ন। এর রাজধানীর নাম তিরানা। দেশটি দীর্ঘ সময় ধরে কমিউনিস্ট শাসনের অভিজ্ঞতা ধারণ করছে। বর্তমানে দেশটির রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় হালচাল খুব একটা সুখকর নয়। দেশটির এ অবস্থা কসোভো, মেসিডোনিয়া ও গ্রিসের আলবেনীয়দের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। আলবেনিয়া ন্যাটোর সদস্য হলেও বলকান এলাকার ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে দেশটি তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আলবেনিয়ায় ইতালি ও গ্রিসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব লক্ষণীয়। দেশটির ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থার ওপরও দেশগুলোর পরোক্ষ প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। তিরানা সফরে গেলে চোখে পড়বে মুসলিম ও ইসলামী ঐতিহ্যের ক্রমহ্রাসমান অবস্থা। এখানে এখন দেখা যাবে বড় বড় ক্যাথলিক ক্যাথেড্রাল ও অর্থোডক্স চার্চ। দীর্ঘ কমিউনিস্ট শাসন ও মুসলিম নিপীড়নের পরও আলবেনিয়ায় দেখা যাবে ‘এথেম বে মসজিদ’ এবং আরো বহু ছোট ছোট মসজিদ। এগুলো আলবেনিয়ায় মুসলিম অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে। আলবেনিয়ায় দীর্ঘ কমিউনিস্ট শাসনের সময় মুসলমানদের চিহ্ন ও অস্তিত্ব মুছে ফেলার সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে। এত কিছুর পরও আলবেনিয়ায় রয়েছে ৭০ শতাংশ মুসলমান। তবে ধর্মচর্চা ও পালনের ক্ষেত্রে আলবেনিয়ার মুসলমানদের সুযোগ-সুবিধা খুব কমে এসেছে।
লেখক : শিশুসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড