খােলা বাজার২৪। সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭: শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নামে ২০১০ সালে। ইতোমধ্যে পার হয়েছে ৭ বছর। কিন্তু এখনো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুরোপুরি আস্থা ফেরেনি। বরং বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ২০১৫ সালে ৩২ লাখ ২৩ হাজার বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাব ছিল। চলতি বছরের নভেম্বর মাস শেষে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ১০ হজার ১৮৮টিতে। আর গত এক বছরে বিও হিসাব কমেছে ২ লাখ ১১ হাজার ৪৮টি। সিডিবিএল সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাস শেষে বিও হিসাবের পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ২১ হাজার ২৩৬টি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি বিও হিসাব বন্ধ হওযা কাম্য নয়। তাদের মতে, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পেরেই তারা পুঁজিবাজার ছাড়ছেন।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, প্রতি বছর বিও হিসাব সংরক্ষণে চার্জ কাটা হয়। বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারী ২০০৯ এবং ২০১০ সালে এসেছিলেন। যাদের অনেকের ইক্যুইটি অর্ধেক হয়েছে। আর অনেকেই আইপিওর আশায় বিও হিসাব পরিচালনা করতেন। কিন্তু সম্প্রতি তারা খুব বেশি আইপিও পান না তাই তারা বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, শেয়ারবাজার ধসের পর ৪ বছরে বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারীর আগমন ঘটে পুঁজিবাজারে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে পুঁজিবাজার সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারায় তারা বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের বাজার ছেড়ে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। তদের মতে, শেয়ারবাজারে ভরসা রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় এসব বিনিয়োগকারী আগ্রহ হারিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক পরিচালক বলেন, যে কারণেই হোক বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ায় তারা অন্যদিকে বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। আমাদের পুঁজিবাজারে গতি না আসায় তারা বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। ডিএসই ও বিএসইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেকেই শুধু প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আবেদনের জন্য আত্মীয়, পরিজন, বন্ধুবান্ধবের নামে বিও হিসাব খুলে সেগুলোর মাধ্যমে আবেদন করতেন। এ জন্য বছরে যে পরিমাণ মাশুল দিতে হয় তা দিয়ে একসঙ্গে অনেক হিসাব সক্রিয় রাখাকে লাভজনক মনে করছেন না অনেকে। তাই এসব হিসাব কমিয়ে ফেলছেন। কারণ আইপিও থেকে যে লাভ আসে তাতে হয়তো এখন আর পোষায় না।
প্রসঙ্গত, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে সিডিবিএলের আওতাধীন যে কোনো ডিপিতে (ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট) একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলতে হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাব রক্ষণ ফি প্রদান করে হিসাব নবায়ন করতে হয়।
বিএসইসি ও সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ বিও হিসাব শুধু প্রাথমিক শেয়ার বরাদ্দের আবেদনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এর সংখ্যা মোট বিও হিসাবের প্রায় ৬০ ভাগ। সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, ২৪ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুসারে ২৬ লাখ বিও হিসাবের মধ্যে ব্যালেন্স ছিল ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৬০টি। আর ব্যালেন্স ছাড়া বিও সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬টি। আর অব্যবহৃত বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ২২৬টি।
সূত্র : মানবকণ্ঠ