খােলা বাজার২৪। রোববার, ০৪ মার্চ, ২০১৮: ব্যাংকসমূহের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর উদ্যোগে একোব (এসোসিয়েশন অব এন্টি মানি লন্ডারিং কমপ্লিয়েন্স অফিসার অফ ব্যাংক ইন বাংলাদেশ) এর সহযোগীতা গত শুক্রবার কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ সী পার্ল বীচ রিসোর্টে এ সম্মেলনের উদ্বোধন হয়।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এর প্রধান আবু হেনা মোঃ রাজী হাসান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে ব্যাংক। দেশের অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ সম্পাদিত হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। যা আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে সাধারণ জনগনের কাছ থেকে মূলধন গৃহীত হয়ে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হয়। এ কারণে একটি অপরাধ মুক্ত, স্থিতিশীল ও দক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, যথাযথ নীতি ও রেগুলেটরী কাঠামো প্রণয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতের সার্বিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আর এই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় একটি দেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড হিসেবে কাজ করে। মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থ পাচার আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় অপরাধ যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত হয় যা অন্যান্য অপরাধকে বর্ধিত মাত্রায় প্রভাবিত করে। ফলে দেশের মানুষ তার সম্পদের অধিকার হতে বঞ্চিত হয়। পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারনে অর্থ পাচার বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি নির্ভর নিত্য-নতুন সেবা প্রদানের কোন বিকল্প নাই। কাজেই টেকসই ব্যবসায়ের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার আবশ্যক। তবে ব্যবহারের পূর্বেই এগুলোর ঝুঁকি নিরূপনপূর্বক প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংকিং পন্য ও সেবা উদ্ভূত ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী আবার প্রযুক্তিরই সহায়তা নেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যংকের নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এর উপপ্রধান মিজানুর রহমান জোদ্দার। তিনি তার বক্তব্যে প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এ সম্মেলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফিডব্যাক গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা গ্রহণ করে থাকে বলে উল্লেখ করেন। তিনি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহাররোধ এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনে জনসাধারণের সমূহ ক্ষতির বিষয়ে অবহিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ইতোমধ্যেই ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন না করার অনুরোধ সম্বলিত একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ সরকার, বিএফআইইউ, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে যথাযথ ভূমিকা পালন করছে এবং বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বেশী কর্মদক্ষতা প্রমান করেছে।
তিনি জানান, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে বর্তমানে নতুন ধরনের ঝুঁকি ও কর্মপ্রক্রিয়া অনুসরন করা হচ্ছে। যা আমাদের কাজকে আরও বেশী কঠোর করে তুলেছে। এ কারনে এ সম্মেলনে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট, সাইবার ক্রাইম ও সাইবার সিকিউরিটি, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিএফআইইউ, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, সিআইডি ও দুদকের প্রতিনিধিগণের বিভিন্ন উপস্থাপনা থাকবে। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হতে আগত কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ অংশগ্রহণকারীদের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার ও মতবিনিময় করবেন যা সম্মেলনকে সফল করে তুলবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশ এবং একোবের চেয়ারম্যানগণ তাদের বক্তব্যে ক্যামেলকো সম্মেলনে আলোচিত বিভিন্ন বিষয় এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক পরিপালনীয় বিষয়সমূহ তাদের কর্মক্ষেত্রে যথাযথ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বিএফআইইউ এর উপ-মহাব্যবস্থাপক এবিএম জহুরুল হুদা বলেন, সম্মেলন হতে অর্জিত জ্ঞান মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের কাঠামো উন্নয়নে কাজে লাগবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং কোন ব্যাংক যেন মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত না হতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে বলেন। এছাড়া পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে সকল শক্তি দিয়ে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবেলার উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নমুক্ত একটি সুসংহত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।
সম্মেলনে বিএফআইইউ এর পরামর্শক দেবপ্রসাদ দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বিএফআইইউ এর উপমহাব্যবস্থাপক শওকাতুল আলম। এছাড়া অনুষ্ঠানে একোব এর চেয়ারম্যান বোরহানউদ্দিন এবং এসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুব রহমান শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সকল তফসিলি ব্যাংকসমূহের প্রধান ও উপ প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন।সম্মেলনটি রবিবার ৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে।