Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বুধবার , ২১ মার্চ ২০১৮ :  দেশে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর হলেও গুণগত কর্মসংস্থান সেভাবে হচ্ছে না। সিংহভাগ কর্মসংস্থানই এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭’-এর তথ্য অনুযায়ী এ হার ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ।

‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনটি গতকাল প্রকাশ করে বিবিএস। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছর অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ হলেও আগের বছরগুলোয় এ হার আরো বেশি ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার ছিল ৮৬ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া ২০১০ সালে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৫ ও ২০১৩ সালে ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এ হিসাবে সর্বশেষ জরিপে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার কিছুটা কমেছে।

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমশক্তির রূপান্তর হচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানান বিবিএসের ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড লেবার উইংয়ের পরিচালক কবির উদ্দিন আহাম্মদ। তিনি বলেন, গৃহস্থালি কাজে বিনাবেতনে কর্মে নিয়োজিতদের সংখ্যা কমে আসছে। অধিকহারে নারীরা আনপেইড থেকে পেইড কর্মসংস্থানে আসছে। আনপেইড ফ্যামিলি হেলপার সংখ্যা এক বছরের ব্যবধানে ১৪ লাখ কমে ৭২ লাখে নেমে এসেছে।

প্রান্তিক হিসাবে গত অর্থবছর অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হারে ওঠানামা লক্ষ করা গেছে। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের হিসাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান ছিল ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা কিছুটা কমে হয় ৮৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া তৃতীয় অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার দাঁড়ায় ৮৫ দশমিক ৪ ও চতুর্থ প্রান্তিকে ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

দেশে কর্মসংস্থানের মান নিয়ে এখন মনোযোগ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত তাদের এক পর্যবেক্ষণে বলেছে, অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর ঘটলেও এখনো অধিকাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন। নারী ও তরুণদের উল্লেখযোগ্য অংশ কর্মসংস্থানের বাইরে রয়েছে। এতে দেশের শ্রমবাজার সেভাবে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না।

বিবিএসের জরিপের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মোট শ্রমশক্তি ছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৩৫ লাখ এবং নারী ২ কোটি। মোট শ্রমশক্তির নিয়োজিত ২ কোটি ৪৭ লাখ কৃষিতে, ২ কোটি ৩৭ লাখ সেবা খাতে এবং ১ কোটি ২৪ লাখ শিল্প খাতে নিয়োজিত রয়েছে। এতে বলা হয়, দেশে কৃষি খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তির ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশই এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক। আর শিল্পে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের হার ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া সেবা খাতে এখনো ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত রয়েছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে বেকারত্বের হার আগের অর্থবছরের মতো ৪ দশমিক ২ শতাংশ ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে ২৬ লাখ ৮০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। নারীদের ৬ দশমিক ৭ এবং পুরুষের ৩ দশমিক ১ শতাংশ এখনো বেকার রয়ে গেছে। এ সময় নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৭ এবং নারীর ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে।

কম বয়সী শ্রমশক্তিরাই বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫-২৪ বছর বয়সী শ্রমশক্তির ৯১ দশমিক ৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ছিল। এছাড়া ২৫-৩৫ বছর বয়সীদের ৮৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৩৫-৪৪ বছর বয়সীদের ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৪৫-৫৪ বছর বয়সীদের ৮২ দশমিক ১ শতাংশ, ৫৫-৬৪ বছর বয়সীদের ৮২ দশমিক ৯ শতাংশ শ্রমশক্তি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ছিল।

খাতভিত্তিক কর্মসংস্থানের তথ্যে দেখা গেছে, কৃষি খাতে কর্মসংস্থান আগের অর্থবছরের চেয়ে সাত লাখ কমেছে। কৃষিকাজে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৫৪ লাখ নিয়োজিত থাকলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ছিল ২ কোটি ৪৭ লাখ। সেবা খাতে বেড়েছে ১৭ লাখ এবং শিল্প খাতে বেড়েছে দুই লাখ। ২০১৩ সালে শিল্প খাতে ১ কোটি ২১ লাখ শ্রমশক্তি নিয়োজিত ছিল। এ সংখ্যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ কোটি ২২ লাখ ছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাত্র দুই লাখ বেড়ে ১ কোটি ২৪ লাখে উন্নীত হয়েছে। সেবা খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ কোটি ২০ লাখ নিয়োজিত থাকলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ নিয়োজিত ছিল। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে সেবা খাতে নতুন কর্মসংস্থান ১৭ লাখ বেড়েছে। তবে কৃষি খাতে ৭ লাখ কমার কারণে সার্বিকভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মক্ষম শ্রমশক্তির মধ্যে ৪ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ শ্রমশক্তির মধ্যে নেই। শ্রমশক্তির মধ্যে যারা কোনো ধরনের শিক্ষা, কর্ম ও প্রশিক্ষণের মধ্যে নেই, তাদের ৮৭ শতাংশই নারী এবং ১৩ শতাংশ পুরুষ।

প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে দেখা গেছে, কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন শ্রমশক্তির ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষিতদের ১০ দশমিক ৮, সেকেন্ডারি শিক্ষা নিয়ে ১৯ দশমিক ১, উচ্চ মাধ্যমিকের ৩২ শতাংশ এবং টারশিয়ারি শিক্ষা গ্রহণকারীর ৪৮ দশমিক ৩ এবং অন্যান্য পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণকারীর ১১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। সূত্র : বণিক বার্তা