খোলাবাজার২৪.বুধবার ,১১ জুলাই, ২০১৮ঃ (সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোঃ মিজানুর রাহমান) কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্য বা তার দলের নেতারা ১১ দিন ধরে চেষ্টা করেও দেখা করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার সকালে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জেলকোডের বিধানমতে খালেদা জিয়ার সাথে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের দেখা না করতে দেওয়া তাঁর এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘন। কারণ-
১। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে আটক রাখার পর তিনি কারাবিধির ৬১৭ বিধি অনুসারে ডিভিশন-১ প্রাপ্ত হন। ডিভিশন-১ প্রাপ্ত বন্দীর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য কারাবিধির সপ্তদশ অধ্যায়ে (বিধি-৬৬৩-৬৮১) বর্ণিত অধিকারে খালেদা জিয়ার সাথে তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী/বন্ধুবান্ধবের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি বিশদভাবে বলা আছে।
২। উপরোক্ত বিধানের অতিরিক্ত হিসাবে আরও বলা যায় যে, খালেদা জিয়া যেহেতু সাজার মামলায় জামিনে আছেন, সেহেতু তাঁকে সাজাপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে বিবেচনা না করে বিচারাধীন মামলায় বন্দী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সে হিসেবেও কারাবিধির সপ্তবিংশ অধ্যয়ে (বিধি-৯০৯-৯১০) অনুসারে তিনি প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন প্রাপ্ত বন্দী। সেখানেও তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী/বন্ধুদের সাক্ষাতের অধিকার বিধি-৬৮২-তে প্রদান করা আছে।
৩। শুধু তাই নয়, কারাবিধির ৮০ (৪) বিধি অনুসারে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতকালে কারাগারের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাক্ষাৎ প্রার্থীর মতামত অন্তর্ভূক্তির জন্য নির্ধারিত ভিজিট বই রাখার বিধানও করা হয়েছে।
৪। বেগম খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে কারাবিধি অনুসারে এখন গণ্য হবেন না। কারণ তিনি সাজার মামলায় জামিনে আছেন। ফলে বিচারাধীন মামলায় আসামী হিসেবে কারাবিধির ৬৮২-তে প্রদত্ত অধিকার বাদেও কারা আইন ১৮৯৪ এর ধারা ৪০ এর বিধানমতে তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী/বন্ধুদের সাক্ষাতের অধিকার রাখেন।
৫। এখানে একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বেগম খালেদা জিয়ার সাথে একজন নারী কর্মীকে থাকার অনুমতি দিয়ে সরকার যে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করছেন তা জাতির সাথে ধোকাবাজি করা। কারণ কারাবিধি ৯৪৮ অনুসারে সরকার একজন মহিলা কর্মী দিতে বাধ্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১০ দিন পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বার বার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এটি নিয়ে তারা কোনো কথা না বলে কারাবিধির অজুহাত দেখাচ্ছে।অথচ কারাবিধি অনুসারে, জেল সুপারই যথেষ্ট। কিন্তু জেল সুপারকে বললে তিনি বলেন, আইজি প্রিজনের কাছে যান। আইজি প্রিজনের কাছে গেলে তিনি বলেন, মন্ত্রীর কাছে যান। মন্ত্রীর কাছে গেলে বলেন, ১ নম্বর ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া আমি কিছু করতে পারব না, যোগ করেন মির্জা আলমগীর।
মির্জা আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য যদি সরকারের প্রধানের কাছে অনুমতির জন্য যেতে হয়, তাহলে এটা কি আইনের শাসন? জেলকোড লঙ্ঘন করে বেগম খালেদা জিয়াকে তার পরিবার ও বন্ধু এবং রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মামলার ফাঁদ পাতা হয়েছে। আর এসব মামলার ফাঁদে ফেলে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এমন মামলা হাজার হাজার পেন্ডিং আছে। অথচ বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আইন লঙ্ঘন করে আলাদা আদালত গঠন করে দ্রুত সময়ে তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার মূল কারণ তাঁকে এবং বিএনপিকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল দীর্ঘায়িত করা। কারণ, তিনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন।
তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। যদিও তিনি মূল মামলায় জামিন পেয়েছেন, কিন্তু অন্য মামলায় তার জামিন বিলম্বিত করা হচ্ছে। যাতে তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখা যায়।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের শুভচিন্তার উদয় হোক। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। না হলে জনগণের তুমুল জনরোষ থেকে রেহাই পাবেন না। ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাবিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী শপু, সহ দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।