খোলাবাজার২৪.বৃহস্পতিবার ০৯ আগস্ট , ২০১৮ঃ নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু করেছে, তাকে ‘সরকারের নির্মম আগ্রসন’ হিসেবে দেখছে বিএনপি।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আপনাদের প্রতি রইল আš@রিক শুভেচ্ছা। আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤ক্সাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন দেশে নাকি নানা অশুভ খেলা চলছে। সাধারণ স¤ক্সাদককে মনে করিয়ে দিতে চাই, দেশে অশুভ সরকার থাকলে জনগণ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে খেলায় অবতীর্ণ হয় তা প্রকাশ্য ও ন্যায় সঙ্গত। অশুভ সরকার ক্ষমতায় থাকলে তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান সমালোচনা, প্রতিবাদ, প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ হচ্ছে জনগণের পক্ষের শক্তির শুভ খেলা। এখানে কোন অদৃশ্য খেলা নেই। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন ন্যায্য ও বিবেক জাগনিয়া, তারা গোপন কিছু করেনি, তাদের আন্দোলন প্রকাশ্য ও জনসমর্থিত। কিš@ তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কাদের সাহেবরা প্রথম কয়েকদিন করুণামাখা কথা বলছেন। সরকারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রায় সবাই বলেছেন কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি ন্যায় সঙ্গত। তাহলে এখন তাদের ওপর এই সহিংসতা কেন? আসলে আন্দোলনের প্রথম দিকে পড়ূয়াদের আন্দোলন নিয়ে সরকারের সহানুভূতি ছিল ছলনামাত্র। ম–লতঃ অš@রালে ছাত্রলীগ-যুবলীগ দিয়ে আন্দোলন দমানোর জনা প্রস্তুতি চলছিল। এর প্রমাণ দুইদিন পরেই দেখা গেল। অশুভ সরকারের স্বমুর্তিতে আÍপ্রকাশ হওয়া দেখা গেল যখন হেলমেট পরিহিত আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে কচি শিশু-কিশোরদের ওপর। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের রক্ত দেখে আনন্দিত হলো সরকার। সোনার ছেলেদের কীর্তি স্বর্ণাক্ষরে লেখার হয়তো এখন প্রস্তুতি নিবে ক্ষমতাসীনরা। সেজন্যই আমরা দেখলাম ছাত্রলীগের আক্রমণকারীদের দেখতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আক্রাš@ শিশু-কিশোর ও সাংবাদিকদেরকেও দেখতে যাননি তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতিসংঘসহ আš@র্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়, উন্নয়ন সহযোগী দেশ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের এই সশস্ত্র হামলাকে সহিংস হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ছাত্রলীগ আš@র্জাতিকভাবে টেরোরিস্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের সাহেবরা সেই ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বাঁচাতেই হাসপাতালে ভর্তি দেখিয়ে তামাশা করছেন। তাদের বাঁচানোর পাঁয়তারা করছেন। কিন্তু এরা রেহাই পাবে না। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ভিডিও ও ছবি পরিচয়সহ যেমন দেশীবিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
নির্যাতিত আš@র্জাতিক খ্যাতিস¤ক্সন্ন আলোকচিত্রি ড. শহিদুল আলমকে উচ্চ আদালত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ সরকারের হুকুমে তাঁকে ভর্তি নেয়নি। এরা কতটা নিষ্ঠুর যে, একজন নির্যাতনে অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালেত আপিল করেছেন, যেন শহিদুল আলম হাসপাতালে সুচিকিৎসা না পান। এই ঘটনায় আবারো কি প্রমাণ করার দরকার আছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই পিজি হাসপাতালে সুচিকিৎসা পাবেন? ঐ হাসপাতালে সরকারী নির্দেশের বাইরে কোন চিকিৎসা হয় না। ভিন্ন মতালম্বীরা সেখানে কোন সুচিকিৎসার সুযোগ নেই।
গতকাল সকল বেসরকারী ভিসিদের সাথে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে সকল উপাচার্য সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেছে, কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী তা নাকোচ করে দিয়েছেন। ক্ষমতাপিপাসা কত তীব্র হলে শিক্ষামন্ত্রী মাসুম শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন। এতই প্রমাণিত হয় মন্ত্রীদের একমাত্র আরাধ্য হচ্ছে ক্ষমতা। আর এই অবৈধ ক্ষমতার জন্য এরা ন্যায়-নীতি, মানবিক ম–ল্যবোধ, মনুষত্য এবং শিশু-কিশোরদের দাবিকেও পদদলিত করছে। ক্ষমতামায়ায় শিক্ষামন্ত্রী শিশু-কিশোরদের প্রতি মমত্বকেও অগ্রাহ্য করলেন।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সহিংস অপকর্ম ঢাকতে এবং সরকারের প্রতারণা আড়াল করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ণ অত্যুগ্র মাত্রায় উপনীত হয়েছে। দলীয় পান্ডাদের দিয়ে শিশু-কিশোরদের রক্ত নিঙড়ে নেয়ার পরেও ক্ষাš@ হয়নি সরকার। এখন চলছে র্যাব-পুলিশ দিয়ে বর্বর ক্র্যাক-ডাউন। রাজধানীর ১৮ থানায় ৩৫টি মামলা দেয়া হয়েছে, যে মামলায় অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের জড়িত করা হবে এবং ইতিমধ্যে ৪৫ জনকে আটকের কথা পুলিশ স্বীকার করেছে এবং ২২ জন রিমান্ডে আছে। নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের আটক করার পর কোমরে দড়ি বেঁধে রিমান্ডে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে। গতকাল সারাদেশ জুড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হানাদারি অভিযানে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এই অভিযান সরাসরি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর এক নির্মম আগ্রাসন। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী স্কুল-কলেজের পড়ূয়াদের অভিভাবকরা অজানা আতঙ্কে উৎকন্ঠিত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকারের ক্রোধের আগুনে পড়া পড়ূয়া সš@ানদের ওপর কি বিভীষিকা নেমে আসবে তা নিয়ে শিহরিত হয়ে উঠেছে অভিভাবকরা। গতকাল বসুন্ধরাসহ ঢাকা মহানগরীতে হাজার হাজার সরকারি বাহিনীর সদস্যরা চিরুণী অভিযান চালিয়েছে। অরাজনৈতিক কিশোর-কিশোরী ছাত্র-ছাত্রীদের এই ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর জন্যই পুলিশ রাতভর সমগ্র বসুন্ধরা এলাকা আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে।
রাষ্ট্র, গণতন্ত্র, সামাজিক অগ্রগতি ও সভ্যতার শত্র“ বর্তমান একদলীয় আওয়ামী সরকার। এরা মানসীক বৈকল্যগ্রস্থ, ক্ষমতায় থাকার জন্য শিশু-কিশোরদের রক্ত ঝরাতেও দ্বিধা করেনি। শিশু-কিশোরদের জেগে ওঠাতে ভয় পেয়েছে সরকার। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন প্রচলিত আন্দোলন নয়, এটি ভিন্ন ধারার প্রতিবাদের এক অনন্য স্বতন্ত্র রুপ। সরকার এখন প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছে। কিন্তু এই জাগরণতো বন্ধ করা যাবে না। শিশুদের জাগরণের ঢেউ লেগেছে শহর থেকে গ্রামে আনাচে কানাচে। এই জাগরণ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। যতোই যড়যন্ত্র ও তৎপরতার কথা বলুক না কেন আওয়ামী নেতারা, দুঃশাসনের বিদায়ের বাঁশি বাজতে শুরু করেছে। অবিলম্বে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের হয়রাণি বন্ধ করুণ।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের ওপর সরকারী আক্রমণ থামছেই না। গতকালও ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়ন যুবদল নেতা মোঃ রিপনকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় এবং পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। আমি এই বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোক সš@প্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। আমি অবিলম্বে তার হত্যাকারীদের খ–ঁজে বের করে দৃষ্টাš@ম–লক শা¯ি@র জোর দাবি জানাচ্ছি।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, রফিক শিকদার ও শাহজাহান সম্রাট উপস্থিত ছিলেন।