খোলা বাজার ২৪.শনিবার,২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮: সামনে আসছে জাতীয় নির্বাচন। আর এ নিয়ে সবার মাঝেই কাজ করছে অন্য রকমের এক উত্তেজনা। সব নেতাকর্মীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে গ্রহন করছেন বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ। একের পর এক বৈঠকে বসছেন উচ্চ পদস্থ সব নেতাকর্মীরা। এছাড়াও বিভিন্ন দাবি দাবা নিয়েও মাঠে নামছেন অনেকে।
যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, শুধু স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ভারসাম্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য বেগবান হতে পারে। আমার পবিত্র স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, আমার পবিত্র পতাকার বিরুদ্ধে, লক্ষ, লক্ষ মানুষের রক্তে ভেজা, লক্ষ মানুষের চোখের পানিতে ভেজা এই মাটির বিরুদ্ধে যারা ছিল, যারা আছে তাদের সাথে ঐক্য করবো না।
‘আমরা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি এবং বিএনপির সাথে আলোচনা করছি। সবাই ইতিবাচক স্বপ্নে জেগে উঠতে চাই। স্বপ্নভঙ্গের অধ্যায় রচনা করতে নয়।’
শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপিসহ আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর জোট গড়ার লক্ষ্যে ড কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এই নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে।
বক্তব্যে বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকারের প্রতি ১০টি প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন।
মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ: এই সরকারের কাছে জনগণের প্রশ্ন, যে স্বাধীনতা আনতে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয়েছে, এর মূল্যবোধ কেনো পদদলিত?
গুম-আতঙ্ক: দিন-রাত প্রতিটি ঘন্টা নিয়ে কেন মা-বোনেরা আতংকে থাকবে? কেনো পুলিশ, র্যাব, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের ছাড় দিবে?
স্পিড মানি: কেনো ঘুষ দুর্নীতিকে ‘স্পিড মানি’ বলে সরকারিকরণ করা হলো? সমস্ত জাতির নৈতিকতাবোধকে পদদলিত করা হলো? এই অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের? কিশোর আন্দোলন: নিরাপদ সড়কের দাবিতে কচি-কিশোরদের রাস্তায় নামতে হবে কেনো?
কোটা সংস্কার: কোটা সংস্কারের পক্ষে মেধাবী ছাত্রদের কেনো আন্দোলন করতে হবে? মেধাবী ছাত্রদের কী অপরাধ? কেনো তাদের গুণ্ডা দিয়ে, হাতুড়ি-চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করা হবে? এজন্যই কি স্বাধীনতা?
পুলিশের অনুমতি প্রসঙ্গ: আপনাদের অপরাধের প্রতিবাদে কথা বলার জন্য সভা-সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি কেন নিতে হবে? অথচ আপনারা যখন-তখন, যত্রতত্র সভা সমাবেশ করতে পারেন।
ইভিএম বিতর্ক: কেনো আমার ভোট আমি দিতে পারবো না? ভোটের অধিকারকে কেনো দলীয়করণ করা হলো? সারা পৃথিবীতে ইভিএম পরিত্যক্ত, ইভিএম কেউ চায় না। কেনো আপনাদের সুবিধার জন্য ইভিএম গ্রহণ করতে হবে?
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি: কেনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দলীয়করণ করা হলো? কেনো তাদের সবসময় ভয়-ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে, কেনো?
নির্যাতন প্রসঙ্গ: স্বাধীন দেশের মা-বোনদের ও শিশুদের উপর কেন নির্যাতন হচ্ছে? গঙ্গা-তিস্তার পানি: আমাদের রাষ্ট্র তুমি কোথায়? আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গী আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কোথায়? কেনো গঙ্গার পানি পাবো না? কেনো বন্ধু রাষ্ট্র তিস্তার পানি দিবে না?
সরকারের প্রতি এই ১০ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বদরুদ্দোজা। বলেন, ‘একটি স্বেচ্ছাচারী, গণতন্ত্রবিরোধী সরকার গত ১০ বছরে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, একই রকম সরকারের ঝুঁকি আমরা নিতে পারি কি?’
‘সংসদ, মন্ত্রিসভা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করতেই হবে। না হলে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশের নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করা যাবে না।
সমাবেশে সপতিত্ব করেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আবম মোস্তফা আমিনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।