খোলা বাজার ২৪.শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮: আগামী সাধারণ নির্বাচনের সময় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা হতে পারে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিরোধী দলীয় নেত্রীর (রওশন এরশাদ) সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। তারা যদি চান আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব রাজনৈতিক দল যদি চায়, তাহলে আমরা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে হয়তো একটি সরকার গঠন করে নির্বাচনটা পরিচালনা করতে পারি। কিন্তু, এখানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো ডেফিনেশন নেই।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার আত্মজীবনীমূলক ‘এ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামের বইটি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এ ব্যাপারে জানি, কিন্তু আমি আপনাদের বলব না। বরং আমি আপনাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে জানতে চাই এবং আমি চাই এই বই প্রকাশের পেছনে কারা রয়েছে তা আপনারা খুঁজে বের করবেন।
তিনি বলেন, ‘এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি কতবার বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে আনা হয় তা সাংবাদিকদের খুঁজে বের করতে হবে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বই প্রকাশনায় কারা অর্থ দিয়েছে এবং আপনাদের মতো কোনো সংবাদপত্রের সাংবাদিক এর সঙ্গে জড়িত কিনা এবং কি পরিমাণ অর্থ দিয়েছে তা অনুগ্রহ করে উন্মোচন করুন।’
‘কোনো বড় আইনজীবী এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংশোধন করে দিয়েছেন কিনা অথবা কোনো সংবাদপত্র অথবা এর মালিক এর পৃষ্ঠপোষক কিনা তা আপনারা খুঁজে বের করুন।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী বাংলাদেশি এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, সাবেক এই প্রধান বিচারপতির নিউ জার্সিতে বাড়ি রয়েছে। সে বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কি-না।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে বাড়ি কেনা কঠিন কিছু নয়। বিপুল দামের কারণে বাংলাদেশে কেনা কঠিন। অর্থ জমা করলে যুক্তরাষ্ট্রে যে কোনো ব্যক্তি বাড়ি কিনতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘কে এবং কীভাবে এই বাড়ি ক্রয় করেছে সে ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আপনারা খুঁজে বের করুন এবং তথ্য দিন। যদি কোনো ব্যক্তি এ ব্যাপারে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধ এখন একটি আলোচ্য বিষয়। সব দেশ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে এই আইন প্রণয়ন করেছি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পর সাইবার অপরাধ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাংবাদিকদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সবসময় আইনের শুধু একদিক দেখেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদেও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই এ ব্যাপারে শঙ্কিত। কারণ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমকে সাইবারের মাধ্যমে উসকে দেয়া হয়।
শিশু থেকে তরুণ পর্যন্ত সবাই যখন ভুল পথে চলে যাচ্ছে অথবা মানসিক ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলছে, তখন বিভিন্ন সামাজিক ও ডিজিটাল মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য কিনা প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন।
তিনি বলেন, যদি কোন সাংবাদিক সুষ্ঠু সাংবাদিকতার চর্চা করেন তাহলে তিনি কেন শঙ্কিত হবেন?
রোহিঙ্গা নিয়ে ভারত ও চীনের অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি নেতিবাচকভাবে না দেখার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রত্যেকটা দেশই কিন্তু এগিয়ে। ভারত এগিয়ে এসেছে। ভারত তো ওখানে তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। চীনও তাদেরকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। মিয়ানমরাকে তারাও চাপ দিচ্ছে; যেন এদেরকে ফেরত নিয়ে যায়। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব কাজ করার একটা নীতি থাকে বা ভঙ্গি থাকে। এটা নেগেটিভলি দেখলে চলবে না’।