Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শুক্রবার, ০৫ এপ্রিল ২০১৯ঃ দেখতে বিশালাকার হলেও হাতি বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিছক একটা বিনোদনের প্রাণী হিসেবেই পরিচিত। দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা, পার্ক কিংবা সার্কাসে হরহামেশাই প্রাণীটির দেখা মেলে এবং এটা দেখার জন্য খরচ করতে হয় নগদ টাকাও। কিন্তু বর্তমানে মানুষের মনোরঞ্জন করা এই অবলা প্রাণীটিকে দিয়ে একদল সংঘবদ্ধ চক্র ঢাকার বিভিন্ন অলিতেগলিতে চাঁদাবাজিতে নেমেছে।

চক্রটি সামনে হাতি দাঁড় করিয়ে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের গতিরোধ করছে। আর তাতে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। গাড়ির চালকরা টাকা না দিলেই স্থির দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে ১০-২০ মিনিট। আর এতে যানচলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। কিছু জায়গায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানযটও। তাতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে অনেকটা নিরুপায় হয়েই অনেকেই এই হাতির চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও পকেট থেকে বের করে দিচ্ছেন টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার অন্তত ২০টি পয়েন্টে এভাবেই হাতিকে হাতিয়ার করে চাঁদাবাজির কৌশল কাজে লাগানো হচ্ছে। দোকানি, পথচারী এবং গাড়িচালকদের কাছ থেকে সুকৌশলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর এই কাজে সহায়তা করছে একটা সংঘবদ্ধ চক্র। কিছু কিছু জায়গায় পর্দার আড়ালে থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও।

গেল বুধবার রাজধানীর ইস্কাটন রোডে সরেজমিনে দেখা যায়, হাতি ‘বেঙ্গলের’ পিঠে বসে আছেন ২০ বছরের যুবক বখতিয়ার হোসেন। ‘দ্য ডন সার্কাস’র হাতির মাহুত তিনি। পিচঢালা রাস্তায় চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের পাশাপাশি মাহুতকে পিঠে নিয়ে হেলেদুলে রাস্তার একপাশ দিয়ে চলছে হাতি ‘বেঙ্গল’। কিন্তু হাতিটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন যানবাহন চালকদের। উদ্দেশ্য একটাই তাদের পথরোধ করে টাকা আদায় করা।

শুধু যানবাহনের চালকদের কাছ থেকেই নয়, রাস্তার পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিককে শুঁড় উঁচু করে জানাচ্ছে সালাম। উদ্দেশ্য একটাই- তা হলো টাকা নেয়া। টাকা পেলেই তা ধরিয়ে দিচ্ছে পিঠে বসা মাহুতকে। এভাবেই দোকানে দোকানে সালাম দিয়ে আদায় করছে কাড়ি কাড়ি টাকা। দোকান মালিকদের কেউ ১০ টাকার কম দিলে ওই টাকা না নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে হাতি। ১০ টাকা দেয়ার পর শুঁড় দিয়ে ওই টাকা নিয়ে তার পিঠে বসা মাহুতকে ধরিয়ে দিয়ে, সেখান থেকে আরেক দোকানে গিয়ে একই কায়দায় আদায় করে চাঁদা।

ওই দিন আরেক পথচারী কামরুল হাসানকেও শুঁড় উঁচিয়ে সালাম দিতে দেখা গেল। অবশেষে তাকে ১০ টাকা ধরিয়ে দিলেন কামরুল। তবে মাঝেমধ্যেই ব্যস্ত সড়কে সামনে দাঁড়িয়ে শুঁড় উচিয়ে যানবাহনের গতিরোধ করায় দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠলেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কে হাতি দিয়ে এ ধরনের চাঁদাবাজির দৃশ্য দেখা যায় প্রায় নিয়মিতই।

পথচারী আবদুর রউফ  জানান, হাতিকে ২০ টাকা করে দিতে হবে। কারণ হাতি শুঁড় দিয়ে চেপে ধরছে। ২০ টাকার কম দিলে তা গ্রহণ করছে না। বড়চওনা বাজারের ব্যবসায়ী সুজাত আলী জানান, হাতি দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালে ক্রেতারা ভয়ে দোকানে ঢুকতে সাহস পান না। বিড়ম্বনা এড়াতে দোকান মালিকরা বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে দেন।

ঢাকার ইস্কাটন রোডের চা দোকানি আফজাল হোসেন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘সড়কে চলাচলকারী যানবাহন থামিয়েও টাকা আদায় করেও ক্ষ্যান্ত হচ্ছে না। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই টাকা আদায়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। হাতি দিয়ে জোরজবরদস্তি করে টাকা তোলা হচ্ছে। সেটা প্রশাসনের লোকদের সামনেই করা হচ্ছে। কিন্তু তারা কিছুই বলছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি সামান্য চায়ের দোকানদার। আমার কাছ থেকেও পঞ্চাশ টাকা আদায় করে ছাড়লো। আর এটা এই এলাকায় প্রায়ই হয়। হাতি দিয়ে এভাবে টাকা তোলার থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।’

হাতি দিয়ে কেন এভাবে মানুষ ঠেকিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে? এ বিষয়টি নিজে জানতে চাওয়া হয় খোদ হাতির এক মাহুত বখতিয়ার হোসেনের কাছে।

জবাবে বখতিয়ার বলেন, ‘আমরা কারো কাছে থেকে জোর করে টাকা নেই না। হাতি দেখে ভাল লাগে তাই মানুষে টাকা দেয়। মানুষ চিড়িয়াখানায় গিয়ে হাতি দেখে টাকা দিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের কিছু টাকা দিলেই তাদের কষ্ট হয়। আর একটা হাতি পুষতে অনেক পয়সা খরচ করতে হয়। তাই আমরা হাতি দিয়ে যে টাকাটা রোজগার করি সেটা হাতির পেছনেই খরচ করি। নিজেরাও খেয়েপড়ে বেঁচে থাকি।’

ইস্কাটন রোডে জোর করে হাতি দিয়ে টাকা তোলার ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘হাতি দিয়ে জোর করে টাকা তোলার বিষয়টি আমি অবগত নই। এটা নিয়ে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগও আসেনি। হাতি দিয়ে চাঁদাবাজির কোনও অভিযোগ পেলে পুলিশ অবশ্যই সেটা খতিয়ে দেখবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’

পথচারীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার হাতির মাধ্যমে এই টাকা আদায়কে নিছক বিনোদন হিসেবেই দেখছেন। আবার কারও কারও অভিযোগ- এটা একটা ঠান্ডা মাথার চাঁদাবাজি।