খােলাবাজার২৪, সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০: বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতীয় সংসদে সোচ্চার হয়েছে বিএনপি। দলটির দুজন সাংসদ দাবি করেছেন, গত এক যুগে তিন হাজারের বেশি মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে প্রথমে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তোলেন। পরে একই বিষয়ে কথা বলেন আরেক সাংসদ রুমিন ফারহানা। এ বিষয়ে সরকারদলীয় কোনো সাংসদ বক্তৃতা করেননি। তবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান বিচারবহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে বিএনপিও দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন।
হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আজ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিষয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে গত ১০–১২ বছরে তিন হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ যারা স্বজনকে হারিয়েছে, গুম হয়েছে বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তারা কি আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার পাবে না? সংবিধানের এই বিধানগুলো কি আমরা স্থগিত করে দিয়েছি?’
নিজের নির্বাচনী এলাকা তিনটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ দিয়ে বিএনপির এই সাংসদ বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর বলা হয় পুলিশের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ। এটা কি সম্ভব? এসব ঘটনায় যে উদ্ধার দেখানো হয়, তা হাতে তৈরি বাটাল, পিস্তল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উঠিয়ে নিয়ে উপর্যুপরি হত্যা করছে। আর নাটক বানাচ্ছে। সরকার সেগুলোর সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, সব সত্য। এক ইঞ্চিও মিথ্যা বলছি না।’
রুমিন ফারহানা গত তিন বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের হিসেবে তুলে ধরে বলেন, প্রতিদিন গড়ে একজনের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ১২ বছরে তিন হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। কক্সবাজারে সিনহা হত্যাকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অতিসম্প্রতি একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সবার দৃষ্টি কেড়েছে। বারবার বলা হচ্ছে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর একটিও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’
রুমিন ফারহানা আরও বলেন, টেকনাফের কুখ্যাত ওসি প্রদীপ ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পেয়েছেন। ওই পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ছয়টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়, তার প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পুরস্কারস্বরূপ কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি সর্বোচ্চ পদক পেয়ে থাকেন, তাহলে সেটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করবে, এটাই স্বাভাবিক। আর কেবল পদক নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পেছনে অর্থ লেনদেনের বিষয় জড়িত রয়েছে। সাধারণ পরিবার থেকে ধরে নিয়ে অর্থ দাবি করা হয়। অর্থ না পেলে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়।
পরে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বিএনপির দুই সাংসদের বক্তব্যের জবাবে বলেন, তাঁরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে। এখানে ওসি প্রদীপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দায় কেউই এড়াতে পারেন না। ওসি প্রদীপের প্রথম পদোন্নতিটি বিএনপির আমলে হয়েছে। অপারেশন ক্লিনহার্ট বিএনপি সরকারের আমলে হয়েছিল। ওই ক্লিনহার্টের সময় অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে সেই নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ময়মনসিংহ সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী ও মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছিল।