Sun. Apr 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

খােলাবাজার২৪, শনিবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০: কম শ্রম এবং কম খরচে সব ধরণের মাটিতে উৎপাদন হওয়ায় তিল চাষে আগ্রহ বাড়ছে জেলার কৃষকদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে যাবে তিল চাষীদের ভাগ্য। জেলার তিল চাষীরা তিলচাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। মেহেরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা ও তিল চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন আবাদের পর ক্ষেত যখন খালি থাকে তখন তিল চাষ করা যায়। এতে ধানের কোন ক্ষতি হয় না। তিল চাষে সার ও কীটনাশক লাগে না বললেই চলে। গরু ছাগলে তিল খায় না তাই রক্ষণাবেক্ষণে কোন খরচ হয় না।কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা জানান, কম খরচে উৎপাদন করে বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে তিল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ বছর জেলায় প্রায় ১ শত হেক্টর জমিতে তিল চাষ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলিত মৌসুমে বীজ সহায়তা হিসেবে কৃষকদের মাঝে তিলের বীজ প্রদান করা হয়। তিল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য তিলের ব্যবহার এবং তিল থেকে উৎপাদিত তেল আমাদের স্বাস্থ্যে সম্মত। এ বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।খরচ কম আর আর্থিকভাবে লাভবান হতে মেহেরপুরে তিল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটির জৈব ঘাটতি পূরণেও লাভজনক হওয়ায় তিল চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাজার ব্যবস্থাপনা সুবিধা পেলে এ জেলার কৃষিতে নতুন সম্ভবনা হতে পারে তিল। মাঝে তিল চাষ অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে ফের তিল চাষ বাড়ছে।গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের তিল চাষী জাহিদুল হাসান বলেন, তিনি তিন বছর ধরে তিল চাষ করছেন। এবার করেছেন দুই বিঘা জমিতে। তার দেখা দেখি ঐ গ্রামের অনেকে তিল চাষ করছেন। তিল চাষে জমির উর্বরা শক্তি বাড়ে। রাসায়নিক সার ও জমি নিড়ানির দরকার হয় না। সামান্য শ্রম ও অল্প খরচে প্রতি বিঘায় পাঁচ থেকে ছয় মণ ফলন মেলে। তিনি বলেন, আলুর জমিতে তেমন চাষের প্রয়োজন হয় না। জমি সমান করে তিলের বীজ ছিটালেই চলে। প্রতি বিঘায় প্রয়োজন ২ কেজি বীজ। সেচ, সার, নিড়ানি ছাড়াই তিন মাসের মধ্যে তিল ওঠে। তিলে কোন রোগবালাই না হওয়ায় কীটনাশকের দরকার হয় না। এক বিঘা জমিতে তিল চাষ করে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ করা যায়।এ তিল চাষ আরও বৃদ্ধি পেলে জেলার ভোজ্য তেলে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে এবার মেহেরপুর জেলায় প্রায় ১ শত হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৬ মণ হারে তিল উৎপাদন হলে ১ হাজার ৮ শত মণ তিল পাওয়া যাবে। প্রতি মণ তিল তিন থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হবে। প্রতি মণ তিলে গড়ে ১৪ কেজি করে তেল পাওয়া যায়। যা জেলার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।তিলের তেল চুলপড়া কমিয়ে দিয়ে কেশ বৃদ্ধি করে, টাকপড়া থেকে রক্ষা করে, ত্বকের পক্ষেও উপকারী। হজমে ও সাহায্য করে তিলের তেল। উপকারিতার জন্য চীনের মতো প্রাচীনভারতে ও তিলের তেলের কদর ছিল। আয়ুর্বেদ মতে, তিলের তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে মাথা ঠান্ডা থাকে।তিলের রয়েছে বহু ব্যবহার। তিলের খাজা খুব সুস্বাদু। তিলের খৈল জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। তাছাড়া তিলের তেল দিয়ে সব ধরনের তরকারি রান্না করা যায়। গাংনী উপজেলার ধলা গ্রামের তিল চাষী আজগর আলী জানান, প্রতি বছর এক বিঘা জমিতে তিল চাষ করি। তিল বীজ বপনের পর একটা নিড়ানি ছাড়া কোনো খরচ নেই।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, ‘আমরা উন্নত মানের তিল বীজ কৃষকদের মধ্যে সরবারহ করে তিল চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এ এলাকায় তিল চাষ প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করায় এবার অর্থকরী ফসল হিসেবে গত বারের চেয়ে তিল চাষ বেশি হয়েছে। মানুষ তিলের তেলব্যবহারে ও উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তিল গাছ শেকড়ের মাধ্যমে মাটিতে নাইট্রোজেন সংযোজিত করে। তাছাড়া তিলের পাতা জমিতে জৈব পদার্থ সংযোজিত করে। এভাবে তিল গাছ জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।