Sat. Jun 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪,মঙ্গলবার,০৮ফেব্রুয়ারি,২০২২ঃ স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করে আমদানি নিরুৎসাহ করতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। বাজেটে স্থানীয় শিল্পে করছাড়সহ নানা নীতি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শিল্প, সেবা, কৃষি খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু বিটুমিনশিল্প।

সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের অন্যতম উপকরণ বিটুমিনশিল্প করবৈষম্যের শিকার।

উদ্যোক্তারা জানান, বিপুল বিনিয়োগে গড়ে ওঠা দেশীয় বিটুমিনশিল্পে উৎপাদন পর্যায়ে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত কর ধার্য আছে। কিন্তু আমদানির ক্ষেত্রে কর কম। দেশে বিটুমিনের কাঁচামাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু পরিশোধিত বিটুমিন আমদানিতে কোনো ভ্যাট নেই। আমদানি করা বিটুমিনের সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট মাত্র ৫ শতাংশ।আর দেশে উৎপাদিত বিটুমিনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এই বৈষম্যমূলক কর কাঠামোকে শিল্প সহায়ক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয়ভাবে অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, বিটুমিন উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সেসব সুবিধা নিশ্চিত করা উচিত সরকারের।বাজারে অসম প্রতিযোগিতা থাকলে দেশীয় বিটুমিন উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দেশীয় শিল্প সুরক্ষার স্বার্থে কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক কর কাঠামো দেখতে চাই না। যেখানে তৈরি পণ্য আমদানিতে ভ্যাট নেই, সেখানে দেশীয় শিল্পের উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অযৌক্তিক ও অন্যায়।দেশীয় বিটুমিন সরবরাহ পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাটও অপ্রত্যাশিত। ’ দেশীয় বিটুমিনশিল্পের সুরক্ষায় যৌক্তিক কর নির্ধারণে পরামর্শ দেন তিনি।

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক খান মাহমুদ আমানত বলেন, ‘যত দিন আমদানি নিরুৎসাহ করতে সরকার কঠোর নীতিমালা না করবে, তত দিন পর্যন্ত বিদেশ থেকে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করার সুযোগথাকবে। দেশি শিল্পকে উৎসাহিত করবে, নাকি আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতেই থাকবে, এটা সরকারকেই ঠিক করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমদানির চেয়ে দেশীয় শিল্প-কারখানায় উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাড়তি কর আরোপ করা হলে তা হবে দেশীয় শিল্পের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম সরকারের দেশীয় শিল্প সুরক্ষা নীতিরও পরিপন্থী। এই বৈষম্যমূলক কর কাঠামো সংশোধন করা উচিত।

বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমদানি পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি ও তদারকি না থাকায় নিম্নমানের বিটুমিন আনা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে আর অধিক মুনাফার আশায় কিছু সংস্থা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করছে। এর খেসারত গুনতে হচ্ছে সরকার ও জনগণকে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে দেশে বিটুমিনের বার্ষিক চাহিদা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন। অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিবছরই চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে বিটুমিন উৎপাদনের জন্য প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে পেট্রোলিয়াম অয়েলস অ্যান্ড অয়েলস অবটেইন্ড মিনারেলস, ক্রুড। এই কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কর ৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, আগাম কর ৩ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ।৫ শতাংশ সিডিসহ মোট আমদানি শুল্ক দাঁড়িয়েছে ২৬ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতি ব্যারেলের ট্যারিফ মূল্য ৪০ মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে তৈরি বিটুমিন আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টনের শুল্ক কর নির্ধারিত রয়েছে চার হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ এবং আগাম কর ৫ শতাংশ। কেউ বাল্ক আকারে আমদানি করলে প্রতি টনে তিন হাজার ৫০০ টাকা আমদানি শুল্ক নির্ধারিত রয়েছে।এর সঙ্গে এআইটি ২ শতাংশ এবং এটি ৩ শতাংশ।

এ অবস্থায় কাঁচামাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ৫ শতাংশ শুল্ক কর মওকুফ চান বিটুমিন উৎপাদকরা। তাঁরা বলছেন, দেশে এ খাতে বিনিয়োগের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।একই সঙ্গে বিদেশে বিটুমিন রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ আছে। এখন দরকার যথাযথ নীতি সহায়তা ও যৌক্তিক কর কাঠামো।

পাশের দেশ ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ তাদের স্থানীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণার্থে শিল্পের মূল কাঁচামালের ওপর থেকে শুল্ক ও অন্যান্য কর প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশের স্বার্থে ফিনিশড পণ্যের ওপর বিভিন্ন রকমের শুল্ক ও অন্যান্য কর আরোপ করেছে।

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হাসিব মোহাম্মদ আহসান বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান যদি দেশে বিটুমিন উৎপাদন করতে চায়, তাহলে আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। দেশে একটা শিল্প হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে দেশে উৎপাদন হলে বিটুমিনের মান নিয়ন্ত্রণ দেশেই করতে পারব আমরা। ’