Tue. Aug 26th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


অরুন চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: পাহাড়ি ঢলের সাথে আসা বালুতে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। বালুর অব্যাহত আগ্রাসনে ফসলি জমি হারিয়ে দিশেহারা তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকার দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের কয়েকশত কৃষক পরিবার। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয়রা জানান, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের অসংখ্য ঝর্ণা দিয়ে বৃষ্টির সাথে ধেয়ে আসে বালু। সেই বালু সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের শতাধিক কৃষককের ফসলির জমি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বৃষ্টি নামলেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন এলাকার মানুষ। উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। তন্মধ্যে এ বালুর আগ্রাসনে উত্তর বড়দল ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের পচাশোল, রজনী লাইন, চানপুর বীরন্দ্রেনগর, চারাগাঁও, কলাগাঁও, লাকমাছড়া, বড়ছড়া এসব গ্রামের শতাধিক কৃষক প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভারতের পাহাড়ি ছড়া দিয়ে বৃষ্টির দিনে ঢলের পানির সঙ্গে নেমে আসা বালু ও পাথরে দিন দিন ঢাকা পড়ছে সীমান্তের ২০ কিলোমিটার এলাকার আশপাশ, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে প্রথম বড় ধরনের পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে চাঁনপুর বাজারের পশ্চিম দিক দিয়ে। তখন পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবার। কিন্তু এখনো এর কোনো সমাধান হয়নি। যে সমস্ত জমি বালুতে ঢাকা পড়েছে সে সমস্ত জমিতে বর্তমানে কোন কিছুই ফলানো যাচ্ছে না। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দিনে দিনে এখানকার কৃষিজমি আরও বিপন্ন হবে। স্থানীয়রা জানান, গত ১৬ বছরে ধরে পাহাড়ি বালুর আগ্রাসনে সীমান্তবর্তী এলাকার কমপক্ষে ৫শ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলনের নেতা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য ও সীমান্তবর্তী রাজাই গ্রামের বাসিন্দা এন্ড্রু সলোমার বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের এলাকায় পাহাড়ি বালুর আগ্রাসন বেড়েছে। মেঘালয় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর ফসলি জমি, রাস্তাঘাট আক্রান্ত হচ্ছে। কৃষকরা জমি চাষ করতে পারছেন না। ভারতে অপরিকল্পিতভাবে কয়লা ও চুনাপাথর উত্তোলন এবং পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের ফলে পাহাড় ধস হচ্ছে। চাঁনপুর এলাকায় বালু-পাথরের আগ্রাসনে এলাকার ভূমি পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফসলি জমি ভরাট হয়ে মাঠে হয়েছে। সড়কপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়তেই থাকবে। দুই দেশের কূটনৈতিক পদক্ষেপে এর সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করছেন এই আদিবাসী নেতা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ স¤পাদক প্রভাষক দুলাল মিয়া বলেন, সীমান্তের যেসব কৃষক বালুর আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাছাড়া বালুর আগ্রাসন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমরা তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলবো। তারা চাইলে জমি হতে বালু অপসারণের চেষ্টা করবো।