খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০১৫ : টালিউডের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় জনপ্রিয়তায় শীর্ষে যার নাম তিনি ঋতুপর্ণা সেন। বাংলাদেশেও তিনি কম জনপ্রিয় নন। ঢালিউডেও একসময় ঋতুপর্ণা মানেই সেক্স সিম্বল হট নায়িকা। টালিউডেও তাকে এখনো তেমন করেই দেখা হচ্ছে। ৪৩ বছর বয়সেও যে কোন যুবকের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে একের পর এক ভালো ভালো ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে অন্য উ”চতায় নিয়ে যাচ্ছেন ঋতুপর্ণা। সম্প্রতি সৃজিতের ‘রাজকাহিনী’তে অভিনয় করে ফের আলোচনায় তিনি। এ ছবিতে বাংলাদেশের জয়াও আছেন। সম্প্রতি ঋতুপর্ণার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে ওপার বাংলার ‘এই সময়’। এ বাংলার পাঠকের জন্য তা উপস্থাপিত হল।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত টলিউডের বাকি নায়িকাদের অনায়াসে পেছনে ফেলে দেবেন, তাতে আর চমক কী!
প্লিজ, এইটা একটু বড়-বড় করে লিখুন!
কোনটা? যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এই মুহূর্তে টলিউডের এক নম্বর নায়িকা আর সেটা তিনি নিজে জানেন?
হ্যাৃঁ(হাসি)
‘রাজকাহিনী’ নিয়ে প্রথমে কথা হোক। এই ছবির আগে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওপর তো আপনার রাগ ছিল!
ছিল। এদিক-ওদিক দেখা হত। কিন্তু আমাকে তো কখনও ছবি অফার করেনি। অভিমান হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু সৃজিত আপনাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলেনৃবড় কিছুর জন্য।
হিন্ট দিয়েছিল। তবে সেটা সত্যিই ঘটাবে বুঝিনি। যতক্ষণ না ঘটনাটা ঘটছে আপনি বুঝবেন কী করে? কিন্তু ‘রাজকাহিনী’ নিয়ে যখন আমার কাছে এল, আমি গলে জল হয়ে গেলাম। একটা তীব্র ভাললাগা অনুভব করলাম, যে সৃজিত ওঁর কথা রেখেছে। আমাকে বেগমজান অফার করেছে।
‘রাজকাহিনী’তে ঋতুপর্ণার লুক
তারপর যখন আপনি, একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের শ্যুটিং ফ্লোরে গিয়ে দাঁড়ালেন, তখন পুরো ইউনিটের সামনে, যেখানে আপনার থেকে জুনিয়র নায়িকারা দাঁড়িয়ে, তাঁদের সকলের সামনে সৃজিত আপনাকে বারংবার বলতে লাগলেন- আপনি যে অভিনয়টা করছেন, সেটা কিচ্ছু হচ্ছে না! সৃজিত বলেছেন, ‘ঋতু ‘সুজনসখী’টা চাইছি না’। সৃজিত বলেছেন, ‘তুমি এতে রাবীন্দ্রিক কেন? ওটা ছুঁড়ে ফেলে দাও!’ এরকম আরও সাংঘাতিক কিছু লাইন সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত পৌঁছেছে।
(ঠা-া গলায়) আমিও হয়ত তখন কিছুটাৃ(থামলেন। আবার বলতে শুরু করলেন) আমি কিন্তু প্রথমে ধরতে পারিনি, ও আমার থেকে ঠিক কী চাইছে। সেই সময় দাঁড়িয়ে মনে হত, সৃজিত যেরকম বলছে, সেরকমভাবে আমায় পারতেই হবে। না হলে অপমানে মরে যাব! একটা কথা বলি, সৃজিতের সঙ্গে আমার যা মান-অভিমান, সব কিন্তু ‘বেগমজান’-এর জন্য।
চরিত্রখানা তো রগরগে। কোঠিবাড়ির কর্ত্রী। চরিত্রের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন। মুখে অশ্লীল ভাষা। অবশ্য প্রয়োজনেৃ
পরিশ্রম, তীব্র পরিশ্রম করে এই বেগমজান আমি উতরেছি। বলতে দ্বিধা নেই সৃজিত আমায় দিয়ে করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় কোনটা লাগে জানেন? ছবি যখন দেখবেন, বুঝবেন, বেগমজান কিন্তু একটা মেটাফর। একটা রূপক। যাবতীয় রগরগে জিনিসের উর্ধ্বে সেটা যখন অনুভব করবেন, চোখে জল আসবে!
তারপর?
সৃজিতই কিন্তু আমাকেই জড়িয়ে ধরে বলেছে, ইউ আর মাই বেগমজান।
‘রাজকাহিনী’র একটি দৃশ্যে ঋতুপর্ণা, জয়াও আছেনৃ
পাখিপড়ার মতো করে যে ডাবিং সৃজিত মুখোপাধ্যায় আপনাকে দিয়ে করালেন, সেটা আর কেউ পারত?
আপনি দেখলেন, আমি গলা কীরকম পালটে ফেলেছি? (মুখে গর্বের হাসি) আমি তো কীরকম রাবীন্দ্রিক বলুন! ছোটবেলা থেকে নাচ করি। একটা অসম্ভব মেয়েলি ব্যাপার আছে আমার মধ্যে। ‘রাজকাহিনী’-তে সেই মেয়েলি ব্যপারটা একেবারে ছুঁড়ে ফেলে করে দিতে হয়েছে। ডাবিংয়ের আগে আমি চিৎকার করতাম। যাতে গলা ভেঙে যায়। তারপর ডাবিং করতাম!
নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘বেলাশেষে’ ১৫০ দিন সম্পূর্ণ করল। যে ছবিতে আপনি রয়েছেন। ছবিটা এবার পুজোতেও চলবে বলে সকলের আশা। আবার একই সঙ্গে এবার পুজোর সবচেয়ে ‘আলোচিত’ ছবি ‘রাজকাহিনী’-তে মুখ্যচরিত্র আপনি। মাঝে আবার ‘তিনকাহন’-এ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এদিকে প্রসেনজিতের ‘লড়াই’ ফ্লপ! অর্থাৎ ২০১৫-এ বক্সঅফিসের হিসেবে তো আপনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে টেক্কা দিলেন!
(মুচকি হেসে) আপনি ২০১৫টা শুধু দেখছেন? বাকি বছরগুলো দেখুন। আমি কিন্তু প্রত্যেক বছর হিট দিয়েছি। শুধু হিট বলবো কি? মানে আমি বলতে চাইছি, প্রত্যেক বছর একটা করে ভীষণ গুরুত্বপুর্ণ ছবি আমি দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
সব বছরে আপনি কী করে এগিয়ে থাকবেন? সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধেই তো প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ‘অটোগ্রাফ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর মতো হিট দিয়েছেন! সেগুলো আপনি দেখেননি?
আমি বলছি, সেইসব বছরে আমারও একটা করে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছবি রয়েছে। ‘মুক্তধারা’, ‘অলীক সুখ’। সৃজিতের ছবির মধ্যে আমি ‘অটোগ্রাফ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’ দেখেছি। আর ‘জাতিস্মর’ কিছুটা।
এই তিন ছবিরই নায়ক তো প্রসেনজিত!
হ্যাঁ। (হেসে গড়িয়ে গেলেন)
আচ্ছা পর-পর এত ভাল ছবি করছেন, তাও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলে সার্চ দিলে কেন ‘ঋতুপর্ণা সেনগুন্ত হট সিনস’ সবচেয়ে আগে আস্তে আপনি নাকি ছেলেকে বলেছেন ওগুলো না দেখতে?
(খুব হেসে) আমি বলেছি, হট সিনস দেখো! তবে মা সেই হট সিনে থাকলে দেখো না!
এবার একটু বুঝে, ভেবে ছবি করবেন কি? এটা অনুরোধ নয়। দাবি।
করব। কত ছবির অফার আসছে, না করে দিচ্ছি তো! বেশ কয়েকটা ছবির ব্যকলগ ছিল। সেগুলো শেষের দিকে। এরপর তো নন্দিতাদি আর শিবুর ‘প্রাক্তন’ করবো। আর অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘গহীন হৃদয়’ করব। ওটাও সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস অবলম্বনে। আর রেবতীর সঙ্গে কাজ করছি, পরিচালক সঞ্জয় নাগের ছবিতে।
অর্থাৎ সুচিত্রা সেনের মত ‘আমি নিজেকে নিজের মত ‘লুকিয়ে’ নিয়েছি’টা আপনার ফিউচার প্ল্যান নয়?
আমার ফিউচার প্ল্যান পরিশ্রম করে যাওয়া। যেদিন থেকে এই অভিনয় জীবন শুরু হয়েছে, কনস্টান্ট পরিশ্রম করছি। ওই যে আপনি বলছিলেন না, আমি ২০১৫-তে হিট দিয়েছি, সেটাও ওই পরিশ্রমের ফল। আমি সামনের বছর খুব বড় একটা নাচের অনুষ্ঠানও করতে চাই। প্ল্যান করছি!
এই সাক্ষাৎকারে সৃজিতকে কি বলতে চান?
টেনশন মাস্টার, টেনশন করবেন না। সাক্ষাৎকারটা হয়ে গিয়েছে! (খুব হাসি) যোগ করি একটু? সৃজিতের সব ছবির জন্য আমার শুভেচ্ছা। আর এটা কোনও ‘সাজানো’ লাইন নয়। একদম হৃদয় ঠেলে বেরিয়ে আসা একটা লাইন।