খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৫: চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক আট লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন চলচ্চিত্র সমন্বয় সমিতি। গত ১৯ অক্টোবর সকাল সারে ১১টায় প্রযোজক সমিতিতে এক জরুরি বৈঠকের আয়োজন করে চলচ্চিত্র সমন্বয় সমিতি। এতে অংশ নেন পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, প্রযোজক সমিতি, পরিবেশক সমিতি, চিত্রগ্রাহক সমিতি, নৃত্যপরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র সম্পাদক সমিতিসহ অন্য সমিতির সভাপতি ও তাঁদের প্রতিনিধিরা। এ সময় এ ছাড়াও চুক্তিবদ্ধ শিল্পীদের দৈনিক যাতায়াত ভাতা থেকে শুরু করে অন্যান্য বাড়তি খরচ বাতিল করার কথা বলা হয়।
এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র সমন্বয় সমিতির অন্যতম সদস্য ও পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করেই এ ধরনের প্রস্থাব আনা হয়েছে। এখন প্রডাকশন খরচ ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার ওপরে গেলে আর পুঁজি ফেরত আসে না। কিন্তু একজন শিল্পীই যদি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন, তাহলে অন্যান্য শিল্পীসহ ছবিপ্রতি শিল্পীর ব্যয় দাঁড়ায় অন্তত ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা। আর ছবি প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত যেতে ব্যয় হয় দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টাকা। যেটা ফেরত আসার আর কোনো উপায় থাকে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আগামী মিটিংয়ে সবার সঙ্গে বসে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।’
এমন সিন্ধান্তকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের অনেক শিল্পীই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ এটাকে সিনিয়রদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ চলচ্চিত্র উন্নয়নে পরামর্শও দিয়েছেন। ঢাকাই চলচ্চিত্রের দশ তারকার মন্তব্য তুলে ধরা হলো।
অমিত হাসান (চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক)
শিল্পীদের পারিশ্রমিকের বিষয়টা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শিল্পীসমিতির সভাপতিসহ আমরা তাদের সঙ্গে বসবো। আসলে এভাবে হবে না। আর এটা হয়তো কেউ মানবে না। প্রযোজকরাইতো মানবেন না। অতীতে এ রকম আরো অনেক নিয়ম হয়েছে। দেখা গেছে, যারা এ নিয়ম করেছে তারাই আবার শিল্পীদের বাসায় গিয়ে টাকা দিয়ে আসছে।
আমিন খান (অভিনেতা)
যদি সব সমিতি মিলে এ সিন্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টা ভালো হবে। কারণ সবাইতো ফিল্মের ভালো দিকটাই চিন্তা করে কাজটি করবেন। সব সমিতি মিলে কাজটি করলে অবশ্যই ভালো হবে। কারণ তারা মিটিংয়ে বসে এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন। এখানে ভালো বিষয়টাই থাকবে।
রতœা (অভিনেত্রী)
খুব সুন্দর সিন্ধান্ত হয়েছে। এ রকম সিন্ধান্ত আরো আগে নিলে ভালো হতো।
ইমন (অভিনেতা)
আমি বাংলা ছবি বিশেষ করে আমাদের দেশের ছবির ভালোর জন্য যা যা করলে ভালো তার সঙ্গে আছি। কিন্তু শুধু টাকা কমালেই হবে না, হলের মানও ভালো করতে হবে
নিরব (অভিনেতা)
আমাদের চলচ্চিত্রে যারা সিনিয়র আছেন তারা বিষয়টা বুঝেই করবেন। আমাদের চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থার কথা ভেবেই হয়তো তারা এই সিন্ধান্ত নিয়েছেন। শিল্পীদের একটা পারিশ্রমিক আছে, ক্যামেরার একটা ভাড়া আছে, প্রজেকশনের একটা ভাড়া আছে সব বিষয়টাকে মাথায় রেখেই কাজটি যদি করা যায় তাহলে বিষয়টি ভালো হবে। শুধু শিল্পীদের পারিশ্রমিক নয়। সব সেক্টর থেকেই যেন এ বিষয়টা হয়।
বাপ্পি চৌধুরী (অভিনেতা)
আসলে এটা কোনো সমস্যাই না। আমাদের চলচ্চিত্রের প্রযোজকরা অনেক সময় পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। এটা যদি আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য ভালো হয় তাহলে ভালো।
ববি হক (অভিনেত্রী)
আমাদের সিনেমার সিষ্টেমটা অস্পষ্ট। সিনেমার সিস্টেমটাকে স্বচ্ছ করতে হবে। দর্শক হলে যাচ্ছে। সিনেমার টাকাও উঠে আসে। সিনেমা হিট হয়। কিন্তু প্রযোজক টাকা হাতে পাচ্ছে না। মাঝখানে যারা থাকছেন তারা টাকাটাকে খেয়ে ফেলে। এটা আমাদের বড় সমস্যা বলে মনে হয়। ফিল্মের কথা চিন্তা করে যে কোন সিন্ধান্ত নেয়াই ভালো। তবে সবার সাথে আলাপ করে নিলে ভালো হয়।
সাইমন সাদিক (অভিনেতা)
প্রযোজক সিনেমা থেকে লাভ করতে পারছে না। এটা শুধু শিল্পীদের পারিশ্রমিকের কারণে নয়। এর পিছনে আরো অনেক কারণ রয়েছে। সবদিকে নজর দিলে হয়তো চলচ্চিত্রের টাকা ফেরত প্রডিসাররা ফেরৎ পাবেন।
পরীমনি (অভিনেত্রী)
সবার আগে চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি না থাকলে আমরা থাকবো না। ইন্ডাস্ট্রি সঙ্গে এসব এখনকার সময়ের জন্য ঠিক আছে। তবে আমি মনে করি শিল্পীদের এত টাকা দেওয়া হচ্ছে বলেই যে তাদের লোকশান হচ্ছে সবসময় তা যুক্তি সংগত নয়। সবার আগে ভালো ছবি চাই। আমাদের দেশের ছবি। অনেক উদাহরণমূলক ছবি আছে যেটা খুব কম বাজেটের কিন্তু অনেক বেশি সফল। তার কারণ একটাই গল্প। প্রকৃত পক্ষে একটা দিক নিয়ে পরে থাকলে হবে না। সব দিক ভাবতে হবে।