Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

17খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৫: ভাবুন তো, আজ থেকে শত বছর আগের আফ্রো-আমেরিকানদের কথা। তখনকার দিনের ওই ভূখণ্ডের ধর্মীয় সংগীত যদি বেজে ওঠে আজকের ঢাকায়! সেও এক উৎসবে। আফ্রো-আমেরিকানদের ধর্মীয় সংগীত বিবর্তিত হয়ে আজ হয়েছে জ্যাজ ও ব্লুজ। আর লালন-হাসনের দেশে সেই গান নিয়ে উৎসবের আয়োজন করেছে ব্লুজ কমিউনিকেশনস।
গতকাল শুক্রবার ছিল জ্যাজ অ্যান্ড ব্লুজ ফেস্টিভ্যাল ২০১৫-এর দ্বিতীয় দিন। দ্বিতীয় রাতের এই উৎসব শুরু হলো পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সংগীতের বাদ্য চেলো দিয়ে। বিজয় সরণির সামরিক জাদুঘরের বিস্তীর্ণ মাঠের নীল মঞ্চে দুটি চেলো হাতে উঠে এসেই অপেক্ষারত দর্শকদের মনোযোগ কাড়লেন দুই দেশের দুই চেলোবাদক। একজন ফরাসি শিল্পী ফ্লোরিয়া আতিয়ের, অন্যজন বাংলাদেশের রাজেফ খান। নির্দিষ্ট সময়ের ৪০ মিনিট পর মঞ্চে আসায় কোনো ভূমিকায় যাননি কেউ। দুই হাতের দুই ছড়, চেলোর চার তারের ওপর নেচে গেল বিস্ময়কর নাচ। দর্শক-শ্রোতারা কান পেতে তা শুধু শুনলেন।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে সংগীতশিক্ষা শুরু করেছিলেন ফ্লোরিয়া আতিয়ের। ১৬-তেই জিতে নেন ফ্রাঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার। চেলোর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বটা বোঝা গেল যখন ওই এক যন্ত্রে তিনি বাজিয়ে শোনালেন গিটারের ধ্বনি, বাজিয়ে শোনালেন সমসাময়িক সংগীতের স্বর। ভায়োলিন পরিবারের এ যন্ত্র দিয়ে কীভাবে শাস্ত্রীয় সংগীতের সুর তোলা যায়, কীভাবে ছড় ছাড়াই খালি হাতে বাজানো যায়, সেটা দেখিয়েও তিনি মুগ্ধ করলেন দর্শক-শ্রোতাদের। রাজেফ বললেন, ‘চেলো বাজাতে জানলে, সবগুলো বাদ্য বাজানোর স্বাদ পাওয়া যায়।’ শ্রোতাদের সেই স্বাদ খানিকটা দিয়ে গেলেন ৩৫ মিনিট ধরে।
এই দুই যন্ত্রী মঞ্চ ছাড়লে ঢাকার ব্যান্ড ব্লুজ ব্রাদার্স মঞ্চে আসে। একে একে তারা গেয়ে শোনায়, বি বি কিংয়ের ‘দ্য থ্রিল ইজ গন’, জ্যানেস জপলিনের ‘সামার টাইম’, আর্থা ফ্রাঙ্কলিনের ‘চেইন অব ফুলস’, এলিজাবেথ কটেনের ‘ফ্রেইজ ট্রেইন’সহ নিজেদের বেশ কিছু গান। গানের ফাঁকেই দলের সদস্যদের সঙ্গে দর্শক-শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দেয় তারা। মঞ্চের দেয়ালে ঝোলানো এক গুচ্ছ ফ্রেম থেকে জ্যাজ ও ব্লুজের শিল্পীরা যেন অভিবাদন জানাচ্ছিলেন নতুন এই গানের দলকে।
গান শোনার ফাঁকে ফাঁকে মাঠে ছিল ছোট ছোট আড্ডা। খাবার হাতে সেই আড্ডাগুলোয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি অতিথির দেখা মেলে। ঢাকার জ্যাজ অ্যান্ড ব্লুজ উৎসবের শ্রোতা হিসেবে তাঁদের উপস্থিতি উৎসবকে বৈচিত্র্যময় করেছে। হাতে আধপোড়া ভুট্টা নিয়ে দুলে দুলে গান শোনা ফরাসি এক তরুণীকে দেখা যায় সেখানে। ঘাসে পা ডুবিয়ে গান শুনছিলেন বেশ কজন প্রৌঢ়।
এরপর মঞ্চে এলেন অর্ণব ও তাঁর বন্ধুরা। ‘আমায় ধরে রাখো’, ‘ও বন্ধু’ শিরোনামে দুটি গান শুনিয়ে বিদায় নিলেন তাঁরা।
রাত পৌনে ১০টায় যিনি মঞ্চে এলেন, তাঁকে বলা হয় ভারতীয় জ্যাজের গডফাদার। তিনি লুইস ব্যাংক। মঞ্চে এসে বললেন, ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ, আমি তোমাকে ভালোবাসি। অনেকক্ষণ ব্লুজ শুনলেন, এবার খানিকক্ষণ জ্যাজ শুনুন।’ পিয়ানো, ড্রাম, গিটারের সম্মিলিত যন্ত্রসংগীতে খানিকটা সময় দর্শকদের আন্দোলিত রাখলেন তিনি। ভারতীয় বেশ কিছু সিনেমার গানে সংগীতায়ন করেছেন এই জ্যাজ শিল্পী।
আজ শেষ হচ্ছে তিন দিনের এই উৎসব। এতে আজ গান করবে ব্রাজিলের গানের দল ‘এসড্রাস নোগুয়েরা কোয়ার্টেট’, ভারতের দল ‘সোলমেট’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘এবি ব্লুজ’ এবং ফ্রান্স থেকে আসা সংগীতশিল্পী চায়না মোজেস।