Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

74খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৫: দুর্দান্ত কিছু অ্যাকশন সিকোয়েন্স, বন্ড গার্লদের সঙ্গে রসায়ন, এজেন্ট ০০৭ – এর পৌরুষদীপ্ত বুদ্ধির ঝলক – ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের সিনেমা থেকে অন্তত এটুকু আশা করেন দর্শক। সিরিজের নতুন সিনেমার বেলায় শুরুটা ভালো হলেও শেষে এসে গল্পের গাঁথুনির দুর্বলতায় একেবারেই দিশা হারিয়েছে ‘স্পেক্টার’।
সিনেমার শুরুতেই ডে অফ দ্য ডেড বা মৃতের দিন উদযাপনে মাতোয়ারা মেক্সিকোর রাস্তায় পাঁচ মিনিটের ট্র্যাকিং শটে বন্ডের সঙ্গে লুসিয়া সিকারার একটি অ্যাকশন দৃশ্য। উৎসবের আমেজে ছদ্মবেশী বন্ডের সঙ্গে মেক্সিকান সুন্দরীর কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্ত, মার্টিনিতে চুমুক আর সেখান থেকে এক রহস্যময় চরিত্রের উত্থান, আঘাত-পাল্টা আঘাত এবং সবশেষে হেলিকপ্টারে দুর্দান্ত একটি হ্যান্ড-টু-হ্যান্ড কমব্যাট! সবমিলে প্রথম পাঁচ মিনিটেই বন্ড অনুরাগীদের প্রত্যাশার পারদ পৌঁছাবে চরমে।
সত্যি বলতে বন্ড সিনেমা ইতিহাসে এই পাঁচ মিনিটের কর্তনবিহীন টানা ট্র্যাকিং শটটিকে সবচেয়ে দুর্দান্ত সূচনা বলা যেতেই পারে। তবে দারুণ এই সূচনার পর আর দুর্দান্ত কিছু চোখে পড়ে না পুরো সিনেমায়। যেরকম চমক দেখিয়ে বন্ড হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছিলেন ড্যানিয়েল ক্রেইগ, ‘ক্যাসিনো রয়াল’- এ যার অভিনয়ে ভক্তরা বলেছিলেন, আধুনিক যুগের বন্ড হবার যোগ্য একমাত্র ক্রেইগ, সেই ক্রেইগই হতাশ করলেন তার শেষ সিনেমায় এসে।
এবার গল্পের গাঁথুনির নিয়ে আলাপ করা যাক। ‘স্পেকটার’ গল্পটি নিয়ে ষাটের দশক থেকে মাতামাতি হয়েছিল অনেক। এমনকি ইয়ান ফ্লেমিংকে গল্পটির স্বত্ত্বের দাবী পেতে দৌঁড়াতে হয়েছে আদালত পর্যন্ত। অবশেষে ইঅন প্রোডাকশন্সের হাতে গল্পটি এলো ২০১৩ সালে,এরপর ২০১৫ তেই বড় পর্দায় হাজির ‘স্পেকটার’।
কিন্তু যেই কোয়ান্টামের নাশকতা এবং ভয়াবহতা নিয়ে এগিয়েছে আগের তিনটি সিনেমা, যেখানে মি. ওয়াইট ছিলেন গল্পের অন্যতমকেন্দ্রীয় চরিত্র; ‘স্পেকটার’এ এসে যেন সেই সংগঠনটি পড়ে গেল ছায়ার আড়ালে। আর সেটা ঘটেছে কোনো বিশ্বাসযোগ্য বিশ্লেষন ছাড়াই।
‘স্কাইফল’ নির্মাণে নান্দনিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন স্যাম মেন্ডেজ। সেখানে চরিত্রগুলোর সঙ্গে ঘটনাবলীর সামঞ্জস্য ছিল। কিন্তু এবার যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। চিত্রনাট্যের দুর্বলতার কারণে কোনো চরিত্রই সিনেমাতে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হবার সুযোগ পায়নি,অনেক প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি।
সবচেয়ে বর্ষীয়ান ‘বন্ড গার্ল’ মনিকা বেলুচ্চিকে নিয়ে যেভাবে মাতামাতি হয়েছে, তাতে ক্রেইগের সঙ্গে তার রসায়নটা জমে ওঠার জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলেন দর্শক। কিন্তু পর্দায় বেলুচ্চির উপস্থিতি রীতিমতো হতাশ করবে দর্শককে। অনেকে হয়তো ‘স্পেকটার’-এ আসলেই বেলুচ্চিকে ‘বন্ড গার্ল’ হিসেবে দেখেছেন কি না তা ভেবে বিভ্রান্ত হতে পারেন।
এবার আসা যাক বন্ডের প্রসঙ্গে। শেষ বারের মতো বন্ডের চরিত্রে পর্দায় ধরা দিলেন ড্যানিয়েল ক্রেইগ। বন্ডসুলভ সেই মেজাজ একদমই ধরে রাখতে পারেননি এই ব্রিটিশ অভিনেতা। গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যগুলোতে কিছুটা আঁচ পাওয়া গেলেও পুরো সিনেমায় তার অভিনয়ে আন্তরিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়নি।
চলনশীল অভিনয় দিয়ে উতরে গেছেন আরেক বন্ড গালর্ লিয়া সেড্যু। ২০০০ এর পর এসে বন্ড ভক্তরা পেয়েছেন ভ্যাসপার লিন্ড কিংবা ক্যামিলার মত বন্ড গার্লদের। তাদের মতো জৌলুস দেখানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলেন তিনি।
যারা ভেবেছিলেন জুডি ডেঞ্চ অভিনীত এম চরিত্রে নতুন সংযুক্তি র্যাল্ফ ফিয়েনেস নতুনত্বের স্বাদ দেবেন, সবচেয়ে বেশি হতাশ হবেন তারাই।
বিবিসির জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘শার্লক’-এর খলচরিত্র মরিয়াটির্ অ্যান্ড্রু স্কটকেও কাজে লাগানো যায়নি এ সিনেমায়। গোয়েন্দাপ্রধান সি হিসেবে এম – এর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন নির্মাতারা।
প্রতিবার বন্ডকে টেক্কা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে এমন এক খল চরিত্র যার নিষ্ঠুরতা দর্শকের দেহে ভয়ের শীতল স্রোত বইয়ে দেয়। এবার সে দায়িত্ব বর্তেছিল দুজনের ওপর। মি. হিঙ্কস চরিত্রের অভিনেতা ডেভ বাতিস্তা মল্লযোদ্ধা হিসেবে পেশাদার হলেও ক্যামেরার সামনে এখনও ততোটা সাবলীল হয়ে ওঠেননি। তবে ট্রেনে বন্ডের সঙ্গে তার সম্মুখ লড়াইয়ের দৃশ্যটি প্রশংসনীয়। এ দৃশ্যটি দর্শকদের বন্ড ক্লাসিক ‘ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ’- এর কথা মনে করিয়ে দিবে।
তবে মি. হিঙ্কস পর্দায় যেটুকু সময় পেয়েছেন, তা যদি আরেক খলনায়ক ক্রিস্তফ ওয়াল্টজ পেতেন – তবে ‘স্পেকটার’ এর গতিবিধির পরিবর্তনটা হতো লক্ষণীয়। দুঁদে এই অভিনেতাকে একেবারেই দেওয়া হয়নি চরিত্রটি বিকশিত করার সুযোগ।
এক ভয়ঙ্কর খুনে ব্যক্তিত্ব, যার সঙ্গে বন্ডের রয়েছে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া – ক্লাইম্যাক্সে এসে সেই ব্যক্তিটি একরকম উধাও হয়ে গেলেন।ফ্রাঞ্জ ওবেনহাউজার তথা ওয়াল্টজ হতে পারতেন বন্ড ইতিহাসের অন্যতম সেরা ভিলেইন, কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না।
কিউ হিসেবে বেন উইশ সিনেমায় হাস্য রসের খোরাক যুগিয়েছেন। বুদ্ধিদীপ্ত এবং চটুল সংলাপ গুলো এসেছে একমাত্র তার কাছ থেকেই।
তবে, সিনেমাটির চিত্র গ্রহণ নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই। একই কথা বলা চলে, সিনেমাটির নেপথ্য সঙ্গীতের বেলায়ও।
‘স্পেকটার’ – এর সঙ্গে ‘মিশন ইম্পসিবল’ সিরিজের পঞ্চম সিনেমা ‘রোউগ নেইশন’- কাহিনিকাঠামো মিলে যায় অনেকটাই। প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির আদর্শিক লড়াই, এমআই সিক্স-সিআইএ এর শীতল সম্পর্ক, রহস্যময় এক ব্যক্তির খোঁজ এবং সবশেষে প্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করবার প্রবণতা – এসব কিছুই মিলে যায়।
‘স্পেকটার’ নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ সিনেমা হতো যদি ‘রৌগ নেইশন’-এর মতো গল্পের সাবলীলতা বজায় থাকতো। শেষদিকে এসে সিনেমাটি অনুমেয় হয়ে পড়েছিল।
সব মিলিয়ে ‘স্পেকটার’ বন্ড হিসেবে ক্রেইগের মর্যাদা না কমালেও, প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। ৪৭ বছর বয়সী এই অভিনেতা যেন বুঝিয়ে দিলেন ‘বন্ড’ হওয়ার পালা চুকেছে তার। এখন পরবর্তী এজেন্ট ০০৭ এর অপেক্ষার পালা।