Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16খোলা বাজার২৪ ॥বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫: বাস্তব জীবনে তাঁদের দাম্পত্য অটুট। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও ব্র্যাড পিট সম্পর্কে বিশ্ববাসী এমনটাই জানে। কিন্তু বাই দ্য সি ছবির গল্পটা বিপরীত। এতে জোলি-পিট জুটি অভিনয় করেছেন গত শতকের সত্তর দশকের এক অসুখী দম্পতির চরিত্রে। কিছুদিনের জন্য তাঁরা বেড়াতে যান ফ্রান্সের সমুদ্র তীরবর্তী একটি শহরে। সেই অবকাশে অন্য পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মিশে তাঁরা নিজেদের জীবনের অমীমাংসিত কিছু বিষয়ের মুখোমুখি হন।
এ কাহিনি সেলুলয়েডের পর্দায় জীবন্ত করে তোলার জন্য নিজেদের মধ্যে কৃত্রিম দূরত্ব তৈরি করে নিতে হয়েছিল হলিউডের শীর্ষস্থানীয় তারকা দম্পতি জোলি-পিটকে। সেটা কী রকম? একাধারে ছবির পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক জোলি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, তাঁদের অবস্থাটা হয়েছিল মুষ্টিযোদ্ধার মতো, স্বামী-স্ত্রীর মতো নয়। একেকটা দৃশ্যে পরস্পরের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ পর্যন্ত করার সুযোগ ছিল না! পেশাগত প্রয়োজনে এমন ‘অসুন্দর’ হওয়ার কাজটা ছিল সত্যিই বেশ কঠিন।
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, চেঁচামেচি, কান্না, মদ্যপান, ধূমপান এবং একপর্যায়ে লাথি মারার দৃশ্য পর্যন্ত রয়েছে বাই দ্য সি ছবিতে।
ভক্ত-দর্শকেরা ‘ব্র্যাঞ্জেলিনার’ এমন জীবনযাপনকে কীভাবে নেবেন? জোলির জবাব, ‘লোকে যদি মনে করে, আমরা বাস্তবেও ঠিক এ রকম জীবনই যাপন করি, তবে তা ভুল। কিন্তু আমরা তো মানুষই, তাই না? আমাদেরও অনেক ত্রুটি ও অপূর্ণতা আছে। আমরাও আবেগপ্রবণ হই, কখনো কষ্ট পাই।’
বাই দ্য সি ছবির দৃশ্যজোলি-পিট জুটি ২০০৫ সালে গোয়েন্দা-থ্রিলার ধাঁচের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ ছবিতে অভিনয় করেন। তবে বাই দ্য সি চলচ্চিত্রে জোলির চরিত্রটি বিষণœতায় আক্রান্ত একজন সাবেক নর্তকীর। আর তাঁর স্বামী ব্র্যাড পিটের অভিনয় একজন মদ্যপ লেখকের চরিত্রে। ১৪ বছরের দাম্পত্যে তাঁরা নিঃসন্তান। নানা টানাপোড়েনের জেরে সম্পর্কটা ভাঙনের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। জীবনযাপন তাঁদের কাছে গতানুগতিক, এমনকি অবকাশেও। লেখক রোল্যান্ড দিন কাটান বাইরে মাতলামি করে। আর তাঁর স্ত্রী ভানেসা বেশির ভাগ সময় অবসন্ন পড়ে থাকেন ঘরে। জীবনের প্রতি তাঁর নিদারুণ হেলাফেলা। কোনো দৃশ্যে দেখা যায়, তিনি বই পড়ছেন, আর কখনো ওষুধ খাচ্ছেন। একই ঘরে অবস্থান করাটা যেন অসম্ভব হয়ে পড়ে ওই দম্পতির। তবু তাঁদের মধ্যে ভালোবাসা হারিয়ে গেছে—এমনটাও মনে হয় না। পাশের ঘরে আরেক দম্পতিকে দেখে ভানেসার স্মৃতিতে ভেসে ওঠে নিজেদের সুখময় অতীতের দিনগুলো।
গত শতকের ষাট ও সত্তর দশকের ইউরোপীয় আর্ট ফিল্মের প্রভাব রয়েছে ছবিতে। জোলি বলেন, ‘আমি জানি, কিছু মানুষ এই ছবি অপছন্দ করবে। নিশ্চয়ই ভালোও লাগবে অনেকের। বাই দ্য সিতে কাজ করে আবার নিজেকে একজন শিল্পী মনে হয়েছে আমার। তাই আমার কাছে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
জোলি আরও বলেন, ‘ছবিতে কাজ করতে গিয়ে নিজেকে নতুন করে বুঝতে হয়েছে। মনের অনেক দুঃখ-যন্ত্রণার গভীর উপলব্ধি অর্জন করতে হয়েছে। অথচ এসব একেবারেই অজানা ছিল তাঁর। দুঃখকে জানা আর পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়াই ছবিটির বিষয়বস্তু। ২০০৭ সালে নিজের মাকে হারানোর ব্যথা থেকে তিনি এ কাহিনির প্রেরণা পেয়েছেন।’
জোলির এই ছবির আগে ব্র্যাড পিট কোনো নারী পরিচালকের অধীনে কাজ করেননি। হলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাণে নারীদের অংশগ্রহণ এমনিতেই খুব কম। এ ক্ষেত্রে জেন্ডার-বৈষম্য আছে কি না, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার তদন্ত পর্যন্ত করেছে! ছবি বানাতে গিয়ে কোনো ধরনের বাধার মুখোমুখি হয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জোলি বলেন, পুরুষের প্রাধান্য সব শিল্পেই আছে। তবে তিনি নিজের সেরা কাজটা করে দেখানোর চেষ্টাই করেন সব সময়।
সমালোচকদের মতে, বাই দ্য সি ছবিতে সংলাপের চেয়ে নীরবতার প্রাধান্য বেশি। কাহিনির গতিও অনেকটা ধীর। তবে এসব বৈশিষ্ট্য ইতিবাচক বলেও গণ্য হতে পারে। গতিময় কাহিনির চলচ্চিত্র নির্মাণের এই যুগে এ ছবি ভালো ব্যবসা করবে, এমন আশা কম। কিন্তু জোলির অভিনয়জীবনে এই চলচ্চিত্র এক বড় অর্জন হয়ে থাকবে। সব মিলিয়ে এটা এক প্রশংসনীয় কাজ। পরিচালক হিসেবে জোলির এটা তৃতীয় ছবি। তাঁর আগের ছবি আনব্রোকেন গত বছর বিশ্বজুড়ে ১৬ কোটি ১০ লাখ ডলার আয় করেছে। ‘ব্র্যাঞ্জেলিনার’ নতুন ছবিটিকে দর্শকেরা কতটা গ্রহণ করেন, সেটাই দেখার বিষয়।
নিউইয়র্ক টাইমস ও ভ্যারাইটি অবলম্বনে