Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

45খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৫: চলচ্চিত্র পরিচালনায় আমি একমাত্র নারী যে কি-না কোন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষে সরাসরি পরিচালনায় এবং প্রথম ছবির ‘মেঘলা আকাশ’ করে সফল হয়েছি। ৬টি ক্যাটাগড়িতে ছবিটি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। কথা বলছিলেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক নারগিস আক্তার, জানিয়েছেন তার সফল হয়ে ওঠার গল্প।
কথার শুরুতেই জানালেন, পরিচালক হয়ে যখন এসেছি তখন আমি নারী হয়ে নয়, একজন পরিচালক হয়ে এসেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শেষ করে সরাসরি পরিচালনায়। আমার প্রথম ছবি ‘মেঘলা আকাশ’ । ২০০২ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। ছবিটি দর্শক ও চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ৬টি ক্যাটাগড়িতে ছবিটি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে। তিনি বলেন, এ ছবিতে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত অভিনেত্রী শাবানা আজমী ও আইয়ুব খান অভিনয় করেছিলেন। এদেশের অভিনয় করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমি, পূর্ণিমা, অমিত হাসান, সাকিল খান, শহিদুল ইসলাম সাচ্চু প্রমুখ। মরণব্যাধি এইডস নিয়ে জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমী এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এটা আমার জন্য গর্বের। এর পরের ছবিগুলো যেমন, ‘চার সতিনের ঘর’, ‘মেঘের কোলে রোদ’ ‘অবুঝ বউ’ ও ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ‘মেঘের কোলে রোদ’ ছবিতে নায়িকা পপিও পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পরিচালক হিসেবে এখানে আমি সফল হয়েছি। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, সমাজের অবুঝ মানুষগুলোকে বিনোদনের মাধ্যমে কিছু শেখানোর জন্যই আমার চলচ্চিত্র নির্মাণের আয়োজন । আমার প্রতিটি ছবিতেই শিক্ষণীয় মেসেজ আছে। চলচ্চিত্র নির্মানে এসেছি কিছুটা দায়বদ্ধতা থেকে। এই দায়বদ্ধতা শেষ হবে সমাজের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারলে। সে পথেই এখন এগোচ্ছি আমি।
বর্তমানে নারগিস আক্তার নির্মাণ করছেন প্রয়াত সেলিম আল দীনের লেখা ‘যৈবতী কন্যার মন’। সরকারি অনুদানে নির্মিত এ ছবিটি নির্মান কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তিনি বলেন আরো নতুন একটি ছবির কথাও চুড়ান্ত হয়েছে। মুক্তির মিছিলে রয়েছে নারগিস আক্তারের পরিচালিত ‘পৌষ মাসের পিরিতি’, ‘শটকাটে বড়লোক’। সফলভাবে এ ছবিগুলো নির্মানের আগে অসংখ্য তথ্যচিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে গুনী এ পরিচালকের।
নানা প্রতিকুলতার মধ্যে অনেক সাহসী পদক্ষেপে চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে এসেছেন নারগিস আক্তার । গঠনমূলক এবং শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্যই যেন তার জন্ম। নারী হয়েও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জগতে অশ্লীল ছবিকে তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিয়ে সামাজিক ছবির আগমন ঘটিয়েছেন সফলতার সাথে। সফল এ চলচ্চিত্র নির্মাতার সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তার সহজ উত্তর হল, চলচ্চিত্রে আমার কোন সংগ্রাম করতে হয়নি। আমি কারো সহকারী পরিচালক ছিলাম না। পড়াশুনা করে সরাসরি পরিচালনায় এসেছি। যে কারনে কেউ বিপাকে ফেলতে পারেনি। তবে স্টাগল না থাকলেও চলচ্চিত্র পরিচালনায় এসে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। টালা ১৬ ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে কাজ করতে হয়েছে। নিজেকে নারী ভাবলে এটা সম্ভব হতো না। পরিচালক বলেই এটা করতে পেরেছি।
নারীরা চলচ্চিত্র পরিচালনায় কম কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নারগিস আত্তার বলেন, প্রথমত শারীরিক সমস্যার কারনে পরিচালনায় আসতে সাহস পায়না। এরপর রোদে দাড়িয়ে সারাদিন কাজ করলে ত্বক পুড়ে যাবে এই ভয়ে, এছাড়া সমাজ ও পরিবারের দু-মুখো নীতি তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে নারীদের পরিচালক হওয়াটা কঠিন। আমার বেলায় সম্ভব হয়েছে কারন পরিবারের সবাই আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে। এমনকি আমার ৫ বছরের ছেলে পর্যন্ত আমাকে বিরক্ত করতো না। পরিবারের সহযোগিতায় আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমার এ পর্যন্ত আশার পেছনে আরো একটি বড় কারন আমার প্রথম ছবিটি সফল হয়েছে। সফল হলে দেখবেন, সবাই বাহবা দেয়। আর এই সফলতা পেতে হলে অনেক কষ্ট করতে হয়। কখনো এমনি এমনি সফলতা আসেনা।
নারগিস আক্তারের জন্ম ২০ নভেম্বর । তার পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর জেলায়।