খোলা বাজার২৪॥ রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৫ : মাত্র মিনিট পাঁচেকের শর্ট ফিল্ম। তাতেই উঠে এসেছে ভারতের অসংখ্য পুরুষের বহুবিবাহের এক অজানা কারণ। জয়দীপ সরকার পরিচালিত শর্ট ফিল্ম ‘দ্য ওয়াইভস’, বহুবিবাহের সূত্রেই আলো ফেলেছে এ দেশে জারি থাকা এক গভীর সংকটের দিকে।
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে এক ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি তৃতীয়বারের জন্য বিবাহ করতে চলেছেন। প্রত্যাশিতভাবেই তা নিয়ে অসন্তুষ্ট তাঁর সন্তানসম্ভবা দ্বিতীয় স্ত্রী। যদিও প্রথম স্ত্রীর এতে তেমন হেলদোল নেই। ওই ব্যক্তি অবশ্য জানাচ্ছেন, তিনি বিয়ে করতে চলেছেন তাঁর অন্য দুই স্ত্রীর কথা ভেবেই।
আপাতভাবে এটি পুরুষের সাফাই বলেই মনে হয়। স্বভাবে ‘পলিগ্যামি’ পুরুষ বিয়ের জন্য নতুন অজুহাত খাড়া করছে বলে মনে হয়। বিয়ে হয়েও যায়। ছবি এগোয় ক্লাইম্যাক্সে। দেখা যায় নবপরিণীতা বধূটি জল আনতে যাচ্ছে এবং কিছুতেই দুটি কলসিকে মাথায় তুলতে পারছে না। তখন এগিয়ে আসে ব্যক্তিটির দ্বিতীয় স্ত্রী। সাহায্য করে। জানা যায়, এদেশের এমন অনেক খরাপ্রবণ গ্রাম আছে যেখানে জলের জন্য পুরুষরা একাধিক বিবাহ করেন।
ছবিতে যা দেখান হয়েছে তা কিন্তু কাল্পনিক নয়। বরং এক নির্জলা সত্যি। পশ্চিম মহারাষ্ট্রের এরকমই একটি প্রত্যন্ত গ্রাম দেঙ্গানমল। প্রায় ৫০০ অধিবাসী আছেন এই গ্রামে। কিন্তু আছেন তীব্র জলকষ্টে। গ্রামে কোনও জলের কল নেই। আছে বলতে দুটি কুয়ো। তাও গ্রাম থেকে জল আনতে ৮৫ মাইল দূরে। সেখান থেকে জল আনেন গ্রামের মহিলারা। কিন্তু যখন তাঁরা সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন, কিংবা অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তখন জলকষ্টে থাকে পরিবার।
সেই খামতি পূরণ করতে আবার একটি বিয়ে করে পরিবারের পুরুষ। এটাই সেই গ্রামের রেওয়াজ। এই একবিংশ সভ্যতাতেও না উন্নয়নের আলো পৌঁছেছে এই গ্রামে, না বদলেছে এ রেওয়াজ। ৬৬ বছরের ভগত ও তাঁর তিন স্ত্রীর কাহিনিটা ছিল এরকমই। ভগতদের কাহিনিই ছবির বিষয় হয়ে উঠে এসেছে।
সরকারী হিসাবমতো দেশের প্রায় ১৯ হাজার গ্রামে এখনও পানীয় জল পৌঁছয়নি। এই নিদারুণ সত্যি আবার সামনে উঠে এসেছে এই শর্ট ফিল্মের দৌলতে। সিনেমা সমাজ বদলাতে হয়ত পারে না, কিন্তু সচেতন তো করতে পারে। এই ছবি নির্জলা সত্যিকে জলজ্যান্ত করে সামনে তুলে এনে ছড়িয়ে দিতে পারবে সেই প্রত্যাশিত সচেতনতা, এ আশা করাই যায়।