Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15খোলা বাজার২৪॥ সোমবা্বার৩০ নভেম্বর ২০১৫ : ত্যিই তাঁরা কি যমজ বোন? পথে বের হলে এই প্রশ্ন তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে। আসলে তিনি কড়ি না কোমল, তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। তাই তো পথে বের হলে অনেকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন, তুমি কড়ি নাকি কোমল? তোমার কি যমজ বোন আছে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখিও প্রায়ই হতে হয় তাঁকে। পশ্চিমবঙ্গের ‘জি বাংলা’ চ্যানেলের জনপ্রিয় ‘রাগে অনুরাগে’ ধারাবাহিকের যমজ বোন কড়ি-কোমলের চেনা মুখ তিনি। আসলে ওই টিভি ধারাবাহিকের দ্বৈত চরিত্রে একাই অভিনয় করছেন তিনি। কড়ি ও কমল তিনি একাই। আসল নাম টুম্পা ঘোষ।
পশ্চিমবঙ্গের শান্তিপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে তিনি। ট্রেনে চড়েই প্রথম প্রথম অভিনয় করতে আসতেন। আজ খ্যাতির শীর্ষে উঠেছেন। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর তুমুল জনপ্রিয়তা। সম্প্রতি নিজের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে অভিনয়জীবন নিয়ে অনেক কথাই জানালেন সংবাদমাধ্যমের কাছে।
ছোট বয়স থেকেই নাচ শিখতেন টুম্পা। স্কুলে থাকাকালে টুকটাক অভিনয়ও করতেন। সেই থেকেই অভিনয়ের প্রতি একটি গোপন ভালোবাসা জন্ম নেয় টুম্পা ঘোষের। এর পর একটি অ্যাক্টিং কোর্সেও ভর্তি হন তিনি। তার পরই চলে আসে সুযোগ। জীবনে প্রথম অভিনয় করেন সানন্দা টিভি চ্যানেলের মেগাধারাবাহিক ‘আমার নাম জয়িতা’তে। ছোট্ট একটা চরিত্রে সেই সময় অভিনয় করেন। এর পর অদম্য আগ্রহ এবং ভালো অভিনয় করার ইচ্ছাকে মনে পুষে রেখে ফিল্মি ইন্ডাস্ট্রিতে লড়াই চালাতে থাকেন টুম্পা। অবশেষে ‘রাগে অনুরাগে’ ধারাবাহিকে কড়ি ও কোমলের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ আসে। আর দ্বৈত এই চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয়ও করে নিলেন। সংবাদমাধ্যমকে টুম্পা জানিয়েছেন, ‘রাগে অনুরাগে’ ধারাবাহিকে দুটি যমজ বোনের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। একজনের নাম কড়ি, অন্যজনের নাম কোমল। কড়ি হচ্ছে নেগেটিভ চরিত্র আর কোমল হচ্ছে পজিটিভ চরিত্র। অবশ্য এই দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করতে এসে এক মজার ঘটনা ঘটেছিল বলে জানিয়েছেন টুম্পা।
প্রথম অডিশন দেওয়ার সময় তাঁকে নেগেটিভ চরিত্রটিতে অভিনয় করে দেখাতে বলা হয়েছিল। আসলে প্রথম থেকেই নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করার খুব বেশি ইচ্ছে টুম্পার ছিল না। তার ওপর গল্পটাও তাঁকে জানানো হয়নি। ফলে কোনোরকমে দায়সারা গোছের অভিনয় করেন নেগেটিভ চরিত্রে। এর পর টুম্পাকে পজিটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে বলা হয়। সে সময় জান-প্রাণ নিয়ে নিজের বেস্টটাকে দেওয়ার চেষ্টা করেন টুম্পা। এর পরেই ব্যাপারটা বুঝে অডিশন কর্তৃপক্ষ তাঁকে যমজ বোনের ব্যাপারটা বলে। তার পরেই নেগেটিভ চরিত্রেও ঠিকঠাক অভিনয় করেন টুম্পা। পরে লুক টেস্টে উতরে গিয়ে এই ধারাবাহিকে স্থান পান তিনি। নিজেই জানালেন, কড়ি ও কোমল চরিত্র দুটি একে অপরের বিপরীত। তবে তিনি সব সময় অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে চরিত্র দুটি করার চেষ্টা করেন।
শ২অভিনয়জীবনের প্রথমে বাবার সঙ্গে শান্তিপুর স্টেশন থেকে ভোর ৩টায় ট্রেন ধরে কলকাতায় আসতেন। এমন দিনও গেছে, যখন রাতে ফেরার সময় লাস্ট ট্রেনটাও মিস করেছেন। প্রথম জীবনের এই স্ট্রাগলে বাবা-মাকে সব সময় পাশে পেয়েছেন বলেই জানালেন টুম্পা। বাড়িতে বাবা-মা আর এক দাদা। গ্রামের বাঘআছরা হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে এখন স্থানীয় নেতাজিনগর গার্লস কলেজে বিএ সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী তিনি। মোটের ওপর শান্ত প্রকৃতির মেয়ে বলে এলাকায় পরিচিত হলেও বাড়িতে কিন্তু একটু-আধটু দুষ্টুমিতে বেশ নামডাক আছে তাঁর। আজ নামডাকা হয়েছে। কাজের সুবাদে কলকাতায় থাকেন। তবে প্রেমটেম এখনো জীবনে আসেনি। বললেন, প্রস্তাব অনেক এসেছে। কিন্তু আমার দ্বারা প্রেমটা হয়ে ওঠেনি। আপাতত বিয়ে নিয়ে ভাবছেন না টুম্পা। ইচ্ছা, ভবিষ্যতে আরো ভালো কাজ করার। তবে সংসার বাঁধতে হলে সাদাসিধে গোছের পুরুষকেই পছন্দ করবেন তিনি, যে তাঁর সুখ-দুঃখ বুঝবে; তাঁর বাবা-মাকে ভালোবাসবে। ভালো বন্ধু হবে। তেমন পুরুষকেই পছন্দ করবেন টুম্পা। বিয়ে মানেই একটি মিষ্টি সম্পর্কের স্বপ্ন দেখেন টুম্পা। যে সম্পর্কে রাগ-দুঃখ-অভিমান সবই থাকবে। অথচ তার মধ্যেই থাকবে দুজনে দুজনের প্রতি ভরসা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা। জানালেন, বহু
ঞঁসঢ়ধ এযড়ংয)১১ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়েরা সংসারের জন্য সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে; কিন্তু এই একতরফা ত্যাগ মোটেই উচিত নয়। ঘরকন্না অনেকটাই জানেন টুম্পা। জানালেন, একদম ছোট্ট থেকে রান্না করতে পারেন তিনি।
মায়ের চোখের অসুখের কারণেই ছোট থেকে রান্না শিখতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। মাটির উনুনেও রান্না করেছেন। ফলে আগামী দিনে সংসার নিয়ে নো টেনশন।
শ১আজ নিজেই অনেক টাকা রোজগার করছেন। কিন্তু হাতে টাকা থাকে না টুম্পার। বললেন, পারফিউম কেনার পেছনে বেশির ভাগ টাকাই খরচ করে ফেলেন তিনি। ভীষণ ভালোবাসেন পারফিউম। তবে আজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠলেও নিজেকে পাল্টাতে চান না। আগামী দিনেও নিজেকে পাল্টাতে চান না তিনি। কলেজে বন্ধুরা আজ তাঁকে দেখে হেজিটেট বোধ করলেও নিজে থেকেই তাদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে আগের মতো সহজ হতে চান। আজ অভিনয়ের সাফল্য বলতে টুম্পা মনে করেন, বাইরে বের হলে বয়স্ক নারীরা তাঁর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন, এটাই বড় পাওনা। আগামী দিনে অভিনয়ের মাধ্যমে সবার মনের মধ্যে যাতে প্রবেশ করতে পারেন, সেই কামনা তাঁর।
অভিনয়ের পাশাপাশি পশুপাখি পোষার শখও রয়েছে টুম্পার। বাড়িতে থাকতে একটা টিয়া পাখি আর কুকুর ছিল তাঁর। দুঃখ করে জানালেন, কলকাতায় চলে আসার এক বছরের মাথায় টিয়া পাখিটা মারা গেছে। আজ নিজের দক্ষতায় সাফল্য পেলেও ভগবানে বিশ্বাস রাখেন টুম্পা। পাশাপাশি ভূতেও ভয় পান। তবে ভূতের থেকে মানুষকে ভয় পান বেশি। পরজন্মে-টরজন্মে বিশ্বাস একেবারেই রাখেন না। বললেন, ‘এই জন্মের কর্মফল এই জন্মেই ভোগ করতে হবে বলেই বিশ্বাস করি আমি।’ আর কাজের ফাঁকে অবসর পেলে টানা ঘুম, নয়তো সিনেমা কিংবা ছবি এঁকেই সময় পার করে দেন।