খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫: রওনক হাসান, অপর্ণা ঘোষ, বাপ্পি চৌধুরী, মাহি, মিনার ও পড়শি—তাঁরা এ সময়ের শিল্পী। কাজ করছেন টিভি, চলচ্চিত্র আর সংগীতজগতে। নিজেদের কাজ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে তৈরি করেছেন আলাদা অবস্থান। পেয়েছেন ভালোবাসা। সবাই তাঁদের কাজ পছন্দ করেন। তাঁদের রয়েছে নানা অর্জন। কিন্তু এই শিল্পীরা নিজের কোন অর্জনকে আলাদা করে দেখছেন।
অপর্ণা ঘোষ
আমি চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছি। ওই সময় গাজী রাকায়েত স্যার আমাকে ফোন করলেন। জানালেন, মৃত্তিকা মায়া চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছি। প্রথমে বুঝতে পারিনি। আবার শুনলাম। পুরস্কারের গুরুত্ব তখনো বুঝতে পারিনি। চট্টগ্রাম পৌঁছে মা-বাবাকে জানালাম। তাঁরা খুব খুশি হলেন। পরিচিত সবাইকে ফোন করে জানালেন। আমি অবাক হলাম। বললাম, সবাইকে এমন ঘটা করে জানানোর কী আছে। মনে হচ্ছে তোমাদের মেয়ে এসএসসি পাস করেছে। বাবা বললেন, ‘তুমি জানো না কী পাচ্ছ? এটা জাতীয় পুরস্কার।’ বাবার এই কথা আমার জীবনের সেরা পাওয়া। সেরা অর্জন।
রওনক হাসান
২০০৫ সালে আমি ঘোড়সওয়ারের স্বপ্ন নামে একটা নাটকে অভিনয় করেছিলাম। এর আগ পর্যন্ত ছোট চরিত্রে অভিনয় করতাম। ওটাতেই প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছি। নাটকে আমার গুরু আলী যাকেরও অভিনয় করেছেন। ঘোড়সওয়ারের স্বপ্ন নাটকে অভিনয়ের জন্য আমি ‘মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার’ পেয়েছি। মঞ্চ থেকে নেমে যখন আমার গুরুর সামনে এলাম, তখন তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তোর বয়স কম, হাতে অনেক সময় আছে। বি এক্সপেনসিভ, বি এক্সক্লুসিভ, বি এ গুড অ্যাক্টর, বি হিউম্যান বিয়িং।’ এই নাটকের শুটিংয়ের সময় একটা ঘটনা আছে। রাত তখন তিনটা। বধ্যভূমিতে কাজ করছি। আলী যাকের বললেন, ‘ধর এই নাটকটি প্রচার হলো, তারপর কী করবি?’ বললাম, আমি তো জানি না, তবে এটুকু জানি, নাটক ছাড়া বাঁচব না। তিনি আমার কথা শুনে ছায়ানট নাটকের সংলাপ বললেন, ‘আর যা-ই হোস, ধূমকেতু হইস না।’ গুরুর কাছ থেকে পাওয়া এই দুটি মন্তব্য আমার জীবনের সেরা অর্জন।
মিনার রহমান
এখন পর্যন্ত আমার বড় অর্জন হলো যখন মানুষ আমার লেখা, সুর করা, আমার বানানো গানগুলো গায়। যখন কোনো কনসার্টের মঞ্চে দাঁড়িয়ে গানের প্রথম লাইন গাওয়ার পর আমার আর গাইতে হয় না। দর্শকদের কাছে ছেড়ে দিই। যখন দেখি প্রতিটা লাইন তাদের মুখস্থ, প্রতিটা সুর তাদের মুখস্থ, গলা ছেড়ে নিজের আনন্দে আমার গানগুলো গায়, তখন নিজেকে খুব সুখী মানুষ মনে হয়।
পড়শি
আমি যে গান গাইতে পারছি, এটাই আমার বড় অর্জন। আমাদের আশপাশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা অনেক মেধাবী। তাঁদের গাওয়ার অনেক যোগ্যতা আছে। কিন্তু তাঁরা কোনো সুযোগ পান না। নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না। আমার জীবনে আজকে গান গাওয়ার সুযোগটা তৈরি করে দিয়েছে চ্যানেল আইয়ের খুদে গানরাজ প্ল্যাটফর্ম। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না পেলে আমি হয়তো এভাবে গানের জগতে আসতে পারতাম না।
বাপ্পি চৌধুরী
আমি চলচ্চিত্রে আসার পর আমার বাবাকে সবাই বাপ্পি চৌধুরীর বাবা হিসেবে চেনে। যখন শুনি, বাবা সবাইকে যখন বলেন, বাপ্পি চৌধুরী আমার ছেলে; তখন বাবার এই কথা আমার জীবনের বড় অর্জন বলে মনে হয়। আমি অনেক আগে থেকেই লিও ক্লাবের সদস্য। বছর আটেক আগের ঘটনা। একজন মহিলার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। তিনি দেখতে পান না। মহিলা তাঁর চোখের চিকিৎসার জন্য ঘুরছেন। মহিলার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সবকিছু জানার পর লিও ক্লাবের সহযোগিতায় তাঁর চোখের চিকিৎসা করা হয়। একটা সময় মহিলা তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। ওই সময় মহিলা আমাকে দোয়া করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘দোয়া করি, জীবনে তুমি অনেক বড় হও।’
মাহিয়া মাহি
২০১২ সাল। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পর জাজ মাল্টিমিডিয়ার ভালোবাসার রং ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাই। প্রথম কাজ। চলচ্চিত্রের ভাষা বুঝি না। শুটিংয়ের সময় ছিল মানসিক চাপ। ছবিটি মুক্তি পায়। প্রথম দিন প্রেক্ষাগৃহে বসে ভয়ে ভয়ে ছবি দেখছি। আমি নতুন নায়িকা। দর্শক আমাকে চিনতে পারেনি। কিন্তু ছবির কিছু অংশে আমার অভিনয় দেখে দর্শক যেভাবে হাততালি দিয়েছেন, তখন আমার চোখ ভিজে গিয়েছিল। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে? আমার বড় অর্জন দর্শকের ভালোবাসা।