Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫: চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচার শুরু করা যায়নি।

অভিযোগ গঠনের পর মামলা খারিজ চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেছিল আসামি পক্ষ। তাতেই নিম্ন আদালতে আটকে যায় বিচার এবং সেই জট এখনও খোলেনি।

তার ১০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এখন মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছেন না। আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও বলছেন না কিছু।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোহেলের মা নূরজাহান বেগম এবং স্ত্রী চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতি এক সময় মামলার খোঁজ খবর নিতেন।
দিতি নিজেই এখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। তাদের দুই সন্তান রয়েছেন বিদেশে । নূরজাহান বেগম জীবিত নেই।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।

এই অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।

১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

অন্য আসামিরা হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আশীষ চৌধুরী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন, আদনান সিদ্দিকী, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ও ফারুক আব্বাসী।

ওই মামলায় ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়।

কিন্তু আসামিদের মধ্যে তারিক সাঈদ মামুনের পক্ষে হাই কোর্টে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত একটি রুল দেয়; সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আসে।

সম্প্রতি নিম্ন আদালতের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত ১০ বছরেও ওই রুলের নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

জানতে চাইলে ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি শামসুল হক বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ মামলা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমি তো অভিযোগ গঠনের অনেক পরে এ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পেয়েছি।”

মামলাটির বিষয়ে ওই আদালতের পেশকারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন এই আইনজীবী। পেশকার কামাল হোসেন হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের বাইরে আর কিছু জানাতে পারেননি।
মামলাটি নিয়ে উচ্চ আদালতের দায়িত্বরত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়ের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি বলেন, এত মামলার ভিড়ে এ মামলাটির সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তাদের হাতে নেই।

“তথ্য থাকার বাস্তবতাও নেই। তবে এতদিন মামলার স্থগিতাদেশ পড়ে থাকার কথা না,” বলে তিনি হাই কোর্টের মুভিং সেকশনে খোঁজ নিতে বলেন।

হাই কোর্টে মামুনের আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মামলাটিতে রুল হয়েছিল। কিন্তু এরপর তো আর কিছু বলতে পারছি না।”

তার কনিষ্ঠ আইনজীবী মোসলেম উদ্দিন এ মামলা নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, আসামিদের মধ্যে ইমন কারাগারে এবং আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ সাত আসামি জামিনে আছেন। আশীষ চৌধুরী পলাতক।

বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় ট্রাম্পস ক্লাব, যা অভিজাত এলাকায় তরুণদের আড্ডার জন্য পরিচিত ছিল।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে কথিত এক বান্ধবীকে নিয়ে ওই ক্লাবের মধ্যে সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের তর্কাতর্কি হয়। তখন উত্তেজিত হয়ে সোহেল ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গালাগালি করেন। তার প্রতিশোধ হিসেবে সোহেলকে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের দিন রাত ১টার দিকে সোহেল বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন, তবে তাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এরপর রাত আড়াইটার দিকে ফের ঢোকার চেষ্টা করলে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান সোহেলকে লক্ষ্য করে গুলি চালান বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। খুনের পরপরই আসামি আদনান ধরা পড়েছিলেন।

১৯৮৪ সালে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রুপালি জগতে পা রাখেন দিতি ও সোহেল। কয়েক বছর পর দুজনে বিয়ে করেন। দিতি ঢালিউডে তার আসন পাকাপোক্ত করতে পারলেও সোহেল সেভাবে সফল হননি।

সোহেল হত্যাকাণ্ডের বেশ পরে আরেক চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করেছিলেন দিতি। কাঞ্চনের প্রথম স্ত্রী জাহানারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।