খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ : বাতাসে শীতের ছোঁয়া, চারিদিকে উৎসবের আমেজ। ক্রিসমাস এসে গেলো। ঈদ আর দিওয়ালিতে নতুন ছবি মুক্তির মতো ক্রিসমাসেও নতুন সিনেমা মুক্তির রেওয়াজ রয়েছে। ক্রিসমাসে মুক্তি পেলেও অবশ্য সব ছবি ক্রিসমাসের চলচ্চিত্র হয়ে উঠতে পারে না। সার্থক ক্রিসমাস মুভি সেটিকেই বলা যায় উৎসবের আমেজের সঙ্গে ধারণ করে শুভবোধ আর মানবতার চেতনাকে। কাহিনি, অভিনয়, বিনোদন ও শিল্পগুণে কয়েকটি ক্রিসমাসের সিনেমা তাই ছাড়িয়ে গেছে বাকি গুলোকে।
‘ইট’স আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ’: সেরা ক্রিসমাস-মুভির তালিকায় প্রথমেই আসে ‘ইট’স আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ’ সিনেমাটি। আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউটের মতে এটি সর্বকালের সেরা ১০০ মার্কিন চলচ্চিত্রের অন্যতম। ১৯৪৬ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির পরিচালক ছিলেন ফ্রাংক কাপরা। জীবনসংগ্রাম ও অর্থ সঙ্কটে হতাশ এক ব্যক্তি ক্রিসমাসের আগের সন্ধ্যায় আত্মহত্যা করতে যায়। কিন্তু তার অভিভাবক দেবদূতের চেষ্টায় সে রক্ষা পায়। দেবদূত তাকে দেখায় সে যদি না জন্মাতো তাহলে অন্যদের জন্য জীবনটা কত দুঃখময় হতো। অবশেষে হতাশা ঝেড়ে ফেলে সে ফিরে আসে জীবনের পথে। ফিলিপ ভ্যান ডোরেন স্টার্নের লেখা ‘দ্য গ্রেটেস্ট গিফট’ গল্প অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেন ফ্রাংক কাপরা। এতে প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেন জেমস স্টুয়ার্ট, হেনরি ট্রেভার্স, ডোনা রিড, লিওনেল ব্যারিমোর।। ছবিটি মুক্তির পর অবশ্য বক্স-অফিসে তাৎক্ষণিক সাফল্য পায়নি। কিন্তু পরবর্তীতে কাহিনি, অভিনয়গুণ ও জনপ্রিয়তায় ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পায়।
‘মিরাকেল অন থার্টিফোর্থ স্টিট’: ‘মিরাকেল অন থার্টিফোর্থ স্টিট’ মুক্তি পায় ১৯৪৭ সালে। শপিং মলে সান্টা ক্লজ হিসেবে নতুন নিয়োগ পান ক্রিস ক্রিংগল নামে এক বৃদ্ধ। তিনি অন্যান্য শপিং মল সান্টার মতো শিশুদের নিজের দোকানের খেলনা কেনার পরামর্শ দেয়ার বদলে সত্যিকারের ভালো জিনিস বেছে নেয়ার পরামর্শ দিতে থাকেন। তিনি নিজেকে সত্যিকারের সান্টা ক্লজ বলে দাবি করেন। তার প্রভাবে জীবনের মধুর দিকগুলোর প্রতি বিশ্বাস ফিরে পান একক মা হিসেবে সন্তানকে পালনকারী তরুণী ডোরিস ওয়াকার। তার মেয়ে ছোট্ট সুজানও বিশ্বাস করে এই ব্যক্তি সান্টা ক্লজ। ডোরিস ওয়াকার, সুজান এবং ডোরিসের প্রেমিক তরুণ আইনজীবী ফ্রেড গেইলি একটি পরিবার হয়ে উঠেছৈ। হয়তো ক্রিস সত্যিই সান্টা ক্লজ ছিলেন, এমন একটি ধোঁয়াশার মধ্যে শেষ হয় ছবি। ছবির মানবিক বার্তা, সান্টা ক্লজের কৌতুক আর চমক এটিকে পরিণত করেছে ক্ল্যাসিকে। ভ্যালেন্টাইন ডেভিসের ছোট গল্প অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি পরিচালনা করেন জর্জ সিয়াটন। এতে অভিনয় করেন মাওরিন ও হারা, জন পেনি, নাটালি উড এবং এডমন্ড গেন। ছবিটি অনেকগুলো অস্কার জয় করে। ছবিটি এর পর চারবার রিমেইক হয়েছে। প্রতিবারই ব্যাপক বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছে।
‘এলফ’: ক্রিসমাস, সান্টা ক্লজ, এলফ আর উত্তর মেরুতে খেলনার জগৎ নিয়ে দুর্দান্ত কমেডি ছবি ‘এলফ’। ছবির কাহিনিতে দেখা যায়, ক্রিসমাস ইভে এক ছোট্ট শিশু ভুল করে উঠে পড়ে সান্টা ক্লজের স্লেজে। চলে যায় নর্থ পোলে। সেখানে এলফদের কাছে বড় হয় সে। সান্টা ক্লজ তার নাম দেন বাডি। এলফদের মতোই বাডি খেলনা তৈরি করতে শেখে। বড় হয়ে ওঠার পর একদিন বাডি জানতে পারে সে আসলে এলফ নয় মানুষ। নিউ ইয়র্কে আসে তরুণ বাডি তার জন্মদাতা বাবার খোঁজে। সরল ও শিশুসুলভ বাডি মানুষের জটিল সামাজিক রীতিনীতি কিছুই জানে না।। একের পর এক মজার কাণ্ড ঘটায় সে।। ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া ব্লক বাস্টার হিট ছবি ‘এলফ’-এর পরিচালক জন ফাভরিউ। ছবিতে অভিনয় করেছেন উইল ফেরেল, জেমস কান, জুয়ে ডেসশ্যানেল, মেরি স্টিনবারগেন, ড্যানিয়েল টে, এড অ্যাসনার এবং বব নিউহার্ট।
‘আ ক্রিসমাস ক্যারোল’: ‘ক্রিসমাস ক্যারোল’কে বাদ দিয়ে ক্রিসমাসের কথা ভাবাই চলে না। মহান সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সের অমর সাহিত্যকীর্তি ‘ক্রিসমাস ক্যারোল’। এক হাড়কিপটে বুড়োর বদলে যাওয়ার গল্প। ধনী কিন্তু ভীষণ কৃপণ ও কঠোর-হৃদয় বুড়ো এবেনেজার স্ক্রুজের সঙ্গে ক্রিসমাসের পূর্ব সন্ধ্যায় তার সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার ও বন্ধুর প্রেতাত্মা দেখা করে। তারপর তিনটি আত্মা আসে স্ক্রুজের কাছে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের তিনটি স্বপ্ন দেখায় স্ক্রুজকে। স্ক্রুজের শৈশবের আনন্দময় ক্রিসমাস, বর্তমানের নিরানন্দ ক্রিসমাস এবং ভবিষ্যতের ভয়াবহ একাকীত্ব ও মৃত্যু স্বপ্নে প্রত্যক্ষ করে স্ক্রুজ। মনের পরিবর্তন ঘটে তার। ক্রিসমাসের ভোরে এক নতুন ও ভালো মনের মানুষ হয়ে ওঠে স্ক্রুজ। চার্লস ডিকেন্সের এই কাহিনি নিয়ে প্রথম সবাক সিনেমা হয় ১৯৩৮ সালে। ছবিটি পরিচালনা করেন এডুইন এল ম্যারিন। অভিনয় করেন রেজিনাল্ড ওয়েন, জিন লকহার্ট, ক্যাথলিন লকহার্ট, টেরি কিলবার্ন, ব্যারি ম্যাকেই। ছবিটি ভালো ব্যবসা করে। ক্রিসমাস ক্যারোল পরবর্তিতে ‘দ্য স্ক্রুজ’ নামে ১৯৫১ সালে এবং বিভিন্ন নামে ১৯৭০, ১৯৮৪সহ বিভিন্ন সময়ে অনেকবার রিমেইক হয়েছে। বলা যায়, ক্রিসমাস মুভির ধ্যান-ধারণাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে ক্রিসমাস ক্যারোলের গল্প। মিকি মাউস, টম অ্যান্ড জেরিসহ অনেক কার্টুন ছবিতেও দেখা গেছে এই মূল ভাবনা। আশির দশকের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘ফ্যামিলি টাইজ’সহ বিভিন্ন সিরিজে দেখা গেছে ক্রিসমাস ক্যারোলের কাহিনির ছায়া। টিভি, মঞ্চ, সিনেমা প্রতিটি মাধ্যমেই রূপায়িত হয়েছে এই কাহিনি।
‘ক্রিসমাস ভ্যাকেশন’: ‘ন্যাশনাল ল্যামপুন’স ক্রিসমাস ভ্যাকেশন’ ছবিটিকে বলা যায় আধুনিক জীবনে ক্রিসমাসের প্রকৃত চেতনার পুনরাবিস্কার। ন্যাশনাল ল্যামপুনের ভ্যাকেশন সিরিজের তৃতীয় ছবি এটি। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। ছবিটি পরিচালনা করেন জেরেমিয়াহ চেচিক। এত অভিনয় করেন শেভি চেইজ, বেভারলি ডি’অ্যানজেলো, র্যান্ডি কুয়েইড।
শিকাগো শহরের বাসিন্দা ক্লার্ক গ্রিসওয়ল্ড, তার স্ত্রী এলেন, মেয়ে অড্রেই এবং ছেলে রাস্টি ক্রিসমাসের কয়েক সপ্তাহ আগে শহরের বাইরে গ্রামীণ এলাকা থেকে একটি বড় গাছ সংগ্রহ করতে যায়। সেই গাছ সংগ্রহ, সেটা ঘরে নিয়ে আসা, সাজানো –সব মিলিয়ে ঘটে মজার সব ঘটনা। ক্লার্ক ও এলেনের বাবা-মায়েরা আসে তাদের সঙ্গে ক্রিসমাসের ছুটি কাটাতে। সারা বাড়ি আলো দিয়ে সাজাতে চায় গ্রিসওয়ল্ড। এসব নিয়ে ঘটে দমফাটানো হাসির সব ঘটনা। তবে শেষ পর্যন্ত গ্রিসওয়ল্ড বুঝতে পারে যে ক্রিসমাসের গাছ সাজানো, নৈশভোজ, আলোকসজ্জা, এসবের চেয়ে অনেক বড় বিষয় হলো ক্রিসমাসের সত্যিকারের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করা। সবাইকে ভালোবাসতে পারা এবং নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে সবাইকে খুশি করা।