Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

8খোলা বাজার২৪,মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬: খ্যাতি ছাড়িয়েও দীপিকা মাঝেমধ্যেই কথা বলেন একজন সাধারণ মানুষের মতো। সেসব কথায় কোনো জড়তা থাকে না, থাকে না এতটুকু সতর্কতা বা লুকোচুরি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছেন আর দশজন নারীর মতই, যার মধ্যে ভালোবাসা-ঈর্ষা-প্রেম-হতাশা-কামনা সবকিছুই রয়েছে সাবলীলভাবে। অকপটে বলেছেন রণবীর সিংয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে।
প্রশ্ন : ‘বাজিরাও মাস্তানি’র সেটে ছিলেন সঞ্জয় লীলার মতো পারফেকশনিস্ট আর রণবীরের (সিং) মতো উদ্যমী পুরুষ। আপনি কীভাবে তাল মিলিয়েছেন?
দীপিকা : আমি কারো সঙ্গেই তাল মেলাতে যাইনি। আমি নিজের এনার্জি সম্বন্ধে জানি, পরিচালকের সঙ্গেও আমার ঠিকঠাক বোঝাপড়া ছিল। রণবীর আর আমি একেবারেই আলাদা। সঞ্জয় স্যার আর রণবীরও আলাদা। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হলো, আমাদের উদ্যম একসঙ্গে কাজ করেছে। আর সব মিলিয়ে আমরা ছন্দ খুঁজে পেয়েছি। আমরা একসঙ্গে ‘রামলীলা’, যেটা আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে কঠিন ছবি মনে হয়েছিল, সেটা করেছি। ‘বাজিরাও মাস্তানি’র পর কিন্তু আমার এই ধারণাটা বদলেছে! এই ছবিতে বনসালি স্যার আমাকে তেমন কোনো নির্দেশনাই দেননি! আমাদের বোঝাপড়া আর সংযোগটা ভিন্ন, আমাদের তেমন একটা কথা বলার দরকার পড়েনি। তিনি আমার দিকে তাকিয়েছেন, আর আমি যা বোঝার বুঝে নিয়েছি। ছবি নিয়ে আমাকে তাঁর তেমন কোনো কথাই বুঝিয়ে বলতে হয়নি।
প্রশ্ন : কিন্তু পরিচালক হিসেবে তিনি কি খুব ‘ডিমান্ডিং’ নন, মানে তাঁর ‘এমনটাই চাই’ ধরনের ইচ্ছা থাকত না? আপনি তো কিছু দৃশ্যতে কাজ করতে গিয়ে ভেঙেও পড়েছেন।
দীপিকা : আমি এমন কোনো মানুষ আজো পাইনি, যিনি বনসালির মতো সিনেমায় এতটা আগ্রহী, মত্ত। তাঁর মানসিকতা অসামান্য, কাব্যিক, সংবেদনশীল, কামনাময় এবং কঠিন—সব মিলিয়ে জাদুকরি! তিনি বলেন যে সিনেমা ছাড়া তাঁর জীবনে আর কিছুই নেই। তাঁর অন্য জীবনে শুধুই তাঁর মা, বোন, পোষা কুকুর আর দুজন বন্ধু। ‘যা হোক, এতেই চলবে’ মানসিকতা একটুও নেই তাঁর মধ্যে। কত্থক নাচের একটা সিকোয়েন্সে আমি একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম, কারণ আমি একেবারেই বুঝতে পারছিলাম না কী করা দরকার।
প্রশ্ন : রণবীর সিং এই ছবির মধ্যে একেবারে বুঁদ হয়ে গিয়েছিলেন। আর আপনি তো অন্য ছবির কাজও করছিলেন। আপনি নিজেকে কী বলবেন, ‘টার্ন-অন’ নাকি ‘টার্ন-অফ’ অভিনেত্রী?
দীপিকা : ব্যাপারটা অনেক বেশি আত্মিক। আমি দুটো ছবির কাজ সমানতালে করেছি, কোনোটার মধ্যে একেবারে আটকে যাইনি। আমি মনে করি, নারীরা একই সঙ্গে বিভিন্ন কাজ করায় পারদর্শী। আর বনসালির সঙ্গে যতই রিহার্সেল করুন, ব্যাপারটা অর্থহীন। মনে করুন, আগের দিন যা রিহার্সেল করেছেন, তা একেবারে ঠিকঠাক ক্যামেরার সামনে পরদিন করলেন। উনি ক্যামেরার পেছনে চুপচাপ বসে চানাচুর-বুট চিবুবেন বিরক্ত আর নিরাসক্ত ভঙ্গিতে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি তাঁর পুরো আক্কেল গুড়ুম না করে দেবেন, তার আগ পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করতেই থাকবেন। কীভাবে কাজটা করব, সেটা কোনো বিষয় ছিল না। কাজ ছিল একটাই; কাজটা তাঁর মনমতো করা এবং দেখানো।
প্রশ্ন : দেখা গেল, রণবীর সিং আর রণবীর কাপুর একে অন্যের ছবির প্রচার করছেন। তাহলে কি ধরে নেব, ইন্ডাস্ট্রিতে আসলে তেমন একটা আগ্রাসী প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই?
দীপিকা : আমি তো বলেছি, শিল্পীদের যতটা বলা হয় বা দেখানো হয়, তাঁরা ততটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে নেই। এটা নেহাত এভাবে দেখানো এবং বোঝানো হয়। যেসব নেতিবাচক খবর প্রকাশ হয়, তার প্রায় সবই বানানো।
প্রশ্ন : আপনি কি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নন?
দীপকা : অবশ্যই আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, তবে এর একটা ভিন্ন ধরন রয়েছে। আমি কারো সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িত নই। আমি নিজের আগের ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করি, অন্য শিল্পীদের অভিনয় দেখি; কিন্তু কোনোটাই অনুসরণ করি না। আমি এটাও জানি না যে, কে কোন ছবি করছেন আর কোন ছবি সামনে মুক্তি পাচ্ছে।
প্রশ্ন : এর কারণ কি এ রকম যে আপনি ভালো অবস্থানে রয়েছেন, শীর্ষে রয়েছেন?
দীপিকা : সত্যি বলছি, আমি জানি না যে আমি কোথায় আছি আর সেটা নিয়ে নিজেকে জানানোরও কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আমার আশপাশের সবাই আমাকে এসব বোঝানোর চেষ্টা করে। আমার স্বপ্ন আর ইচ্ছা এসবের ঊর্ধ্বে।
প্রশ্ন : ‘পিঙ্গা’ গানের নাচের সময় প্রিয়াংকাকে হারিয়ে দিতে ইচ্ছা করেনি?
দীপিকা : আমাদের চরিত্রের মধ্যে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। তবে সেটে সেটা আনা কঠিন ছিল। এমনকি সঞ্জয় স্যার তো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন, কারণ আমার আর প্রিয়াংকার মধ্যে একটুও ঝামেলা বা লড়াই নেই!
প্রশ্ন : রণবীর সিং আর রণবীর কাপুরের সঙ্গে আপনার কেমিস্ট্রি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। ব্যাপারটা আপনার কেমন লাগে?
দীপিকা : দেখুন, মানুষ কিন্তু এটাও বলে যে ‘পিকু’ ছবিতে আমার আর ইরফান খানের দারুণ কেমিস্ট্রি ছিল; কিন্তু তখন কেউ এমন আজব প্রশ্ন করেনি। কিন্তু ওদের ক্ষেত্রেই (রণবীর কাপুর ও সিং) এ প্রশ্নটা বারবার করা হয়, কার সঙ্গে আমাকে বেশি হট দেখায়? এটা খুবই অস্বস্তিকর। এখানে তো তুলনা করার কোনো দরকার নেই। বিষয়টা মোটেও এত জটিল নয়। যদি দেখা যায় যে আমার সঙ্গে ওদের অভিনয় করা চরিত্রগুলো উল্টে নতুন করে করা হয়, তখন একটা তুলনার বিষয় আসতে পারে।
প্রশ্ন : আপনি কি রোমান্টিক?
দীপিকা : অবশ্যই। আমি খুবই রোমান্টিক। আমার একেবারে টিপিক্যাল ক্যান্ডল লাইট ডিনার, ফুল, মনোযোগ—এসব খুবই ভালো লাগে। এগুলো কিন্তু ছোট্ট বিষয়। এগুলো যদি একজন পুরুষের ব্যক্তিত্ব থেকে আসে, তাহলে ভালো। তবে এগুলো যদি কেউ নেহাতই আমাকে প্রলুব্ধ করার জন্য করে, তাহলে আমি সেটা বুঝে ফেলব।
প্রশ্ন : প্রেম আর বিয়ের জন্য কখনো কি ক্যারিয়ার বিসর্জন দেবেন?
দীপিকা : পারিবারিক জীবনের জন্য ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দেওয়া আমার কাছে কোনো অপশন নয়। আমি দুটোই চাই আর আমি দুটোই পাব। এই দুটোর মধ্যে কেন মেয়েদের কোনো একটাকে বেছে নিতে হয়, এটা ভেবে আমি অবাক হই। এমনটা তো কখনো ছেলেদের বেলায় হয় না!
প্রশ্ন : রণবীর সিং বলেছেন, আপনার সঙ্গে তিনি স্বর্গীয় একটা সম্পর্ক বা সংযোগ অনুভব করেন। আপনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কেমন?
দীপিকা : ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড (আর ব্যাপারটা মোটেই হালকা নয়!)। আমি আবেগপ্রবণ, নাজুক, অনেক কিছুতেই ভেঙে পড়ি, কষ্ট পাই। আমি রণবীরের সামনে নিজের সবকিছু মেলে ধরতে পারি। আর আমি জানি, ও আমাকে কখনোই আঘাত করবে না। আমাদের মধ্যে এতটাই বিশ্বাস আর বোঝাপড়া রয়েছে। এ জন্যই আমি ওকে এতটা ভালোবাসি, বিশ্বাস করি, নিরাপদ অনুভব করি। এটাকে যদি স্বর্গীয় সংযোগ বলা হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের সম্পর্ক স্বর্গীয়!
প্রশ্ন : মনে হচ্ছে, আপনার অভিনীত প্রথম হলিউড ছবি আসতে যাচ্ছে শিগগিরই? ভিন ডিজেলের সঙ্গে ছবি তো বলিউডে রীতিমতো আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে!
দীপিকা : (গর্বের সঙ্গে বিশাল হাসি দিয়ে) পুরো পৃথিবী জানবে সবকিছু, শিগগিরই জানবে