Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

19খোলা বাজার২৪, সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : বাংলাদেশের দর্শক দেশি নাটক দেখেন না। তাদের পছন্দের তালিকায় আছে মুম্বাই ও কলকাতা ভিত্তিক সিরিয়াল। যার সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ‘সুলতান সুলেমান’ নামের ডাব করা তুর্কি সিরিয়াল। টিভি দর্শকদের ‘আলিফ লায়লা’ বা ‘থিফ অব বাগদাদ’র যুগে নিয়ে গেছে সিরিয়ালটি। ২০১৫ সালে নভেম্বরে চালু হওয়া দীপ্ত চ্যানেলে সপ্তাহে ৬দিন দেখা যায় ‘সুলতান সুলেমান’। টিআরপি দৌড়ে বর্তমানে এক নম্বর অনুষ্ঠান এ সিরিয়াল।
সবচেয়ে বেশিদিন শাসন করা অটোমান শাসক সুলেমানের নামে নির্মিত সিরিয়ালটির তুর্কি নাম ‘মুহতেশেম ইউযিউয়েল’। ইতিহাস ও কল্পনার আশ্রয়ে নির্মিত সিরিজটির লেখক মেরল ওকে ও ইলমাজ সাহিন। ৪টি সিজনে (২০১১-১৪) ১৩৯টি পর্বে বিভক্ত সিরিয়ালটির পরিচালকও চারজন। প্রথম থেকে তৃতীয় সিজন পরিচালনা করেছেন ইয়াগমুর তাইলান ও দুরুল তাইলান। শেষ সিজনে ছিলেন মার্ট বাইকল ও ইয়াগিজ আল্প আকাইদিন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একই শিল্পীরা অভিনয় করেননি। পরের দিকে পাল্টে যাবে কয়েকটি চরিত্রের তারকা।
‘সুলতান সুলেমান’ প্রথম প্রচার হয় তুরস্কের শো টিভি নামের চ্যানেলে, পরে দেখা যায় স্টার টিভিতে। প্রিমিয়ার হয় ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি। প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন খালিদ এরগেঞ্চ (সুলতান সুলেমান প্রথম), মারিয়াম উজালরি ও ওয়াহিদে পারচিন (হুররেম সুলতান) ও ওকান ইয়ালাবিক (পারগালি ইব্রাহিম পাশা)।
নানা কারণে তুরস্কের ইতিহাস সুলেমানের সময়কাল গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ঐতিহ্য নির্মাণে তার ভূমিকা রয়েছে। আরও রয়েছে বর্ণাঢ্য জীবন। সব মিলিয়ে দীর্ঘ সিরিয়ালের জন্য আকর্ষণীয় চরিত্র। তাই কাজে লাগিয়েছেন নির্মাতা। কিন্তু নাটক মানে মুহূর্তে মুহূর্তে নাটকীয়তার ছটা! তা কী বাস্তব চরিত্রকে তুলে ধরতে পারে? এমন বিতর্ক ‘সুলতান সুলেমান’র পিছু ছাড়েনি।
সুলতান সুলেমানের জন্ম ১৪৯৪ সালের ৬ নভেম্বর, মৃত্যু ১৫৬৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। তিনি ১৫২০ সাল থেকে ১৫৬৬ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্য সফলভাবে শাসন করেন। তার ঐশ্বর্য, শৌর্য-বীর্যের খবর ইউরোপে অজানা ছিল না। রোমান সাম্রাজ্যের একাধিক শহরের পতন ঘটে তার হাত। ভিয়েনাও প্রায় দখল করে নিয়েছিলেন। সে সূত্রে ইউরোপের অটোমান ভীতি ইতিহাস আগ্রহীদের না জানার কথা নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া ‘ড্রাকুলা আনটোল্ড’ তেমন একটি সিনেমা। সুলেমানের নৌবাহিনীর ছিল ভূ-মধ্য সাগর থেকে শুরু করে লোলিত সাগর পর্যন্ত সদর্প বিচরণ। সমাজ, শিক্ষা, অর্থনীতি ও আইনের সংস্কারে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া ছিলেন নামজাদা কবি ও অলংকার প্রস্তুতকারক। অটোমানদের প্রচলিত ধারা লঙ্ঘন করে রোক্সেলানা নামে এক খৃস্টান দাসীকে বিয়ে করেন সুলেমান। যার ধর্মান্তরিত নাম হুররেম সুলতান। এর আগেও দুই বিয়ে করেন সুলেমান। হুররেমের গর্ভে জন্ম নেওয়া সেলিম দ্বিতীয় সাম্রাজ্যের হাল ধরেন পরবর্তীতে।
জনপ্রিয় সিরিয়ালটিতে মূলত সুলেমান ও হুররেম সুলতানের কাহিনীকে প্রধান্য দিয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হেরেম, সমকালীন, রাজনীতি, কূটনীতি ও অন্যান্য বিষয়াদি। তবে জোর দেওয়া হয়ে তুর্কিদের ক্ষমতায়। এ সব সত্ত্বেও খোদ তুরস্কে সিরিয়ালটির বিরুদ্ধে অভিযোগ কম নয়। ঐতিহাসিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিদের জীবনী চিত্রায়নে যথেষ্ট সতর্ক না থাকার অভিযোগ উঠে। নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে সম্মানের হানি হয়েছে।
তুরস্কের রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন সুপ্রিম কাউন্সিল জানায়, সিরিয়ালটির বিরুদ্ধে ৭০ হাজারের বেশি অভিযোগ আসে। তাই ঐতিহাসিক ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান করা হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এরগোদানের মতে, ‘সুলতান সুলেমান’ তরুণ প্রজন্মের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। এ সিরিয়ালের কারণে পূর্বপুরুষকে তারা ভুলভাবে জানছে। সুলেমান কখনো এমনটা ছিলেন না। তার ছিল না এমন অবসর। অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তারে ৩০ বছর ঘোড়ার উপর কাটিয়েছেন। একে পার্টির এক সংসদ সদস্য সিরিয়ালটির বিরুদ্ধে ভুল ব্যাখ্যার অভিযোগ তুলেন। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থী কিছু দল স্টুডিওর বাইরে বিক্ষোভও করে। তুরস্কের বাইরেও অনেকে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানান, ‘দে গ্রোটে তুর্ক’ বইয়ের লেখক সাংবাদিক হেঙ্ক বুম মনে করেন, ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে অনেকটা জনপ্রিয় ধারার সোপ অপেরার অদলে। তবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঠিক হবে না।
তবে দুই দিক থেকে সফল ‘সুলতান সুলেমান’। প্রথমত তুরস্কের টেলিভিশন শিল্পে ঐতিহাসিক ঘটনা নির্ভর সিরিয়ালটির ব্যাপক ভূমিকা আছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে ‘সুলতান সুলেমান’ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ৪০টি দেশের চ্যানেলে প্রচার হয়েছে সিরিয়ালটি। পেয়েছে ২০ কোটির বেশি দর্শক।
এক সাংবাদিক এ বিষয়ে মজার একটি তথ্য দেন। একবার বিমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক মন্ত্রী কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করেন, কবে সিরিয়ালটি শেষ হবে। সিরিয়ালটির কারণে স্ত্রীকে টিভির কাছ ছাড় করতে পারছেন না। এমন অবস্থা নাকি অন্য মন্ত্রীদেরও। আইএমডিবিতে প্রকাশিত ২১টি রিভিউতে সিরিয়ালটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা দেখা যায়। তবে গড় রেটিং ৬.৫।
‘সুলতান সুলেমান’র বাংলা ডাবটির দিকে লক্ষ করলে উল্লেখযোগ্য কিছু দিক পাওয়া যায়। বিশেষ করে ভাষার ব্যবহার। বেশ সমৃদ্ধময় কবিত্বের লক্ষণ আছে চিত্রনাট্যে। একে চমৎকার ভাষান্তরের নির্দেশন বলা যায়। এ ছাড়া সিরিয়ালটিতে এক ধরনের ইসলামী আবহ পান অনেক দর্শক। যা এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণও। পাশাপাশি প্রথাগত সিরিয়ালে জাঁকজমকপূর্ণ সকল বৈশিষ্ট্য এতে বিদ্যমান। কিন্তু কতটা স্বস্তিদায়ক তাও অবশ্য প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ সিরিয়ালটির অভিনেত্রীদের পোশাক নিয়ে খোদ দীপ্ত টিভির অস্বস্থি চোখে পড়ার মতো। সিরিয়ালটির জনপ্রিয়তা থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। তার মানে নিশ্চয় অন্ধ অনুকরণ নয়। যার নিদর্শন দীপ্ত নির্মিত তিন সিরিয়াল থেকে স্পষ্ট। তাই হয়ত সেখানে কতটা সফল— তা জানায়নি চ্যানেলেটি। তার থেকে বুঝা যায় অনুকরণের ফল কী