Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

26kখোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৬ মার্চ ২০১৬ : ক্তিযুদ্ধ দেখেননি তারা, জন্ম হয়েছে স্বাধীন দেশে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির চেতনা সম্পর্কে উদাসীন কিংবা অজ্ঞাতও নন। বিদ্যা সিনহা মিম, এবিএম সুমন, আশনা হাবিব ভাবনা, আশিক চৌধুরী, সাবিলা নূর, মনোজ কুমার – তারা সবাই সহস্রাব্দ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পী। তাদের সামনে যখন প্রশ্ন রাখা হয়েছে – স্বাধীনতা মানে কি? কেউ বলেছেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতার কথা, কেউ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রকৃত স্বাধীনতা কী মিলেছে? নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে।
মিম বললেন, “স্বাধীনতা মানেই হলো স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা। যা আমাদের দেশে পারি না। মূলত আমরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবোৃ সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিটি মেয়ে যেন চলাফেরা করতে পারেৃ এটাই হলো স্বাধীনতা। মনের ভেতর একটা শক্তি নিয়ে যে চলাফেরা করবো সেই জিনিসটা এখনো আমাদের দেশে হয়নি। তাহলে সেদিক থেকে আমরা এখনো স্বাধীন না। আমাদের দেশ স্বাধীন কিন্তু আমাদের প্রতিটি মেয়ে এখনো স্বাধীন না। এই স্বাধীনতার জন্য কতো লোক নিজের জীবন দিলোৃ আজকের সময়েও তো জীবন দিচ্ছে। যদি আমরা বিষয়গুলোকে নিয়ে একটু চিন্তা করিৃ তাহলে তো তাই মনে হয়। আসলে আমি অনেকটাই হতাশ।”
সুমন বললেন, “আমরা এখনো স্বাধীনতা পাইনি। কারণ এদেশে এখনও মানুষ খুন হয়, ধর্ষণ হয় কিন্তু বিচার হয় না। আর বিচার হবে কোত্থেকে? সেই ১৯৭১ সালে যারা আমাদের দেশের লাখ লাখ নিরীহ মানুষ হত্যা করলোৃ নারীদের ধর্ষণ করলোৃ আমরা এখনো তো সেই সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারছি না। এখনও নিরীহ মানুষের উপর বোমা হামলা হয়, মানুষের প্রাণের নিরাপত্তা থাকে না। সেক্ষেত্রে আমরা তো এখনও স্বাধীনতা পাইনি। প্রকৃত স্বাধীনতা এখনো আমাদের জীবনে ধরা দেয়নি। আমরা কেবল কাগজে কলমে একটি মানচিত্র আর লাল-সবুজের পতাকা হাতে পেয়েছিৃ শুধু এতটুকুই। স্বাধীনতা পাইনিৃ স্বাধীনতা কই? ২৬শে র্মাচ স্বাধীনতা দিবস কেবলই উদযাপনের দিন। আর কিছুই নয়, আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে।”
ভাবনা বললেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমার গর্বের বিষয়। আর ‘বাংলাদেশ স্টাডি’ বিষয়ে পড়তে গিয়ে দেশ সম্পর্কে আমাকে প্রাতষ্ঠানিকভাবে পড়াশোনা করতে হয়েছে। আমি গভীরভাবে জানতে পেরেছি দেশ, দেশ স্বাধীনের ধারাবাহিক সংগ্রামের ইতিহাস, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিশ্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে। এর সঙ্গে আরো জেনেছি দেশের সংবিধান, আইন কানুন। সেদিক থেকে আমার নিজেকে বেশ দুর্ভাগা মনে হয়। আমার মনে হয়, আমি কেন ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মালাম না। জন্মালে ওই বিক্ষুদ্ধ সময়ের, বিক্ষোভের অংশ আমিও হতে পারতাম। আমিও নিজেকে সংগ্রামী হিসেবে পরিচয় দিতে পারতাম। অংশীদার দাবি করতে পারতাম। তবে আমার প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম কম আছে বলবো না। বরং বেশিই আছে এবং এর প্রকাশও আছে। কিন্তু সচেতনতার অভাব আছে বলে মনে করি আমি। দেশের প্রতি কর্তব্য, নিষ্ঠায় তাদের কমতি আছে। অন্য দেশে গিয়ে একজন বাংলাদেশি হিসেবে সেদেশের আইন মেনে বা সভ্য মানুষের মতোই আচরণ করি আমরা। অথচ নিজের দেশে সেই আচরণের অনুপস্থিতি আমাকে কষ্ট দেয়। আমি যেখানে সেখানে থুতু ফেলি, নোংরা-আবর্জনা ছড়াই ইচ্ছেমতো। আমরা সবাই সরকারকে দোষ দেই, কিন্তু কতোটা করার থাকে যদি আমি নিজে সে বিষয়ে উদ্যোগী, উদ্যমী, সচেতন না হই। কি ফলাফল আসবে সরকারের কোনো একটা ভালো উদ্যোগের। আর একটা খারাপ দিক হলো ভাষা নিয়ে আমাদের উন্নাসিকতা প্রবল। বাংলা ভাষা জানি না, এটাই যেন আজকের গর্বের বিষয়।”
আশিক বললেন, “আমি সবসময় স্বাধীনতার সপক্ষে কথা বলি, স্বাধীনতা আমার অহংকার। কিন্তু আমরা যাদের অবদানে, ত্যাগে স্বাধীনতা পেলাম, তাদের সঠিক মূল্যায়ন করছি কী? ভাবায় আমাকে। যারা শহীদ হলেন তাদের কথা না হয় নাই বললাম, এখনও যতজন জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা আছেন তাদেরও কী যথাযথ মর্যাদা দিলাম, মূল্যায়ন করতে পারলাম আমরা? আমার মনে হয় এদিকে আমাদের আরো বেশি যতœশীল হওয়া উচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনেক উদ্যোগের কথা আমরা শুনি। এরপরও প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে এমনও মুক্তিযোদ্ধার দেখা মেলে যাকে আমরা চিনতে পারিনি। তারা থেকে গেছেন সব কিছুর বাইরে। তাদের প্রতিও নজর দেয়া হোক। প্রয়োজনে সঠিকভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা হোক। আমার এখন মনে হয় দেশ স্বাধীনতা পেলেও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে পাওয়া চারিদিকের খবর আমাকে আতঙ্কিত করছে। আমি কাজ শেষে নিরাপদে ঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছি। তাই আমি চাই সবাই আতঙ্ক মুক্ত হয়ে, নিরাপদে ঘরে ফেরার মাধ্যমে প্রকৃত স্বাধীনতা ভোগ করুক। সুখে, স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করুক। এর মাধ্যমেই আমরা গড়ে তুলতে পারি সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।”
সাবিলা বললেন, “স্বাধীনতা আমার অহংকার। এই স্বাধীনতা আনতে যারা অবদান রেখেছেন, সেই সব শহীদ, জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, লাঞ্ছিত মা-বোনদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা। আজকের এই দিনে এসে আমি আরও মনে করতে চাই, স্বাধীনতার মানে কী? জানতে চাই, কেন আমরা এতো প্রাণ হারালাম, সম্ভ্রম হারালাম, রক্ত দিলাম? স্বাধীনতা মানে কী, প্রচলিত বিধি-বিধান মেনে এবং অন্য কারো ক্ষতি না করে, ক্ষতির কারণ না হয়ে নিজের মতো জীবন-যাপন করা নয়! কিন্তু আজ একজন নারী হিসেবে আমি কী তাই পারছি? সাম্প্রতিককালে সোহাগী জাহান তনুর সঙ্গে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, সেটা একটা উদাহরণ। এরকম অজস্র ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এর অর্থ দাড়ায়, আমি নিরাপদ নই। এমনকি ধর্মীয় পোশাকেও। ধর্মীয় পোশাক শুধু কেন, শালীন যে কোনো পোশাক পরা আমার স্বাধীনতা, আমার অধিকার। অথচ আজ আমিও নানা হরয়ানি শিকার হচ্ছি যত্রতত্র। নারীর প্রতি অবমাননা চলছেই অবিরাম। তাই স্বাধীনতা দিবসে বলতে চাই, স্বাধীন দেশে আমার স্বাধীনতা পেলাম কী?”
মনোজ বললেন, “মানুষ যা মনে করে, চিন্তা করে ও করতে চায়, তা করতে পারাই হলো স্বাধীনতা। একজন মানুষের স্বাধীনতা আরেকজন মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে কিংবা ক্ষুন্ন না করে, সেটাও মনে রাখা কর্তব্য। আর যেদিন আমরা দেশের জন্য স্বাধীনতা পেয়েছি সেই দিনটাকে আমরা আমাদের দেশের সাপেক্ষে স্বাধীনতা দিবস মনে করি। প্রতিটি দিন যেন মানুষ স্বাধীনভাবে তার জীবনযাপন করতে পারে সেই চর্চাটা থাকা উচিত। সেই কারণে প্রতিটি দিনই আসলে স্বাধীনতা দিবস।”