খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৮ মে ২০১৬: কান ফেস্টিভাল মানেই ফ্যাশন আর ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। তার উপস্থিতি আর অভিজ্ঞতার কথা যেন কানের অন্যতম আকর্ষণ।এবারও এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। ৪২ বছর বয়সী এই তারকা এবার উপস্থিত হয়েছিলেন একটু ভিন্ন রূপে। আর সেই ভিন্ন রূপেরই সমালোচনা চলছে ভারত জুড়ে।
ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুক থেকে টুইটারে হাসির খোরাক হচ্ছেন বচ্চন-বউমা। স্বামীর কেরিয়ারের চেয়ে লিপস্টিক অনেক বেশি কনট্রোভার্সি তৈরি করছে। কেউ বলছেন ঐশ্বর্যাকে দেখে মনে হচ্ছে সবেমাত্র ব্ল্যাক কারেন্ট আইসক্রিম খেয়েছেন। কেউ লিখছেন, নায়িকা কি ‘রঙ’এর বিজ্ঞাপন করছেন?
শুধু ঐশ্বর্যই নন, তার মেক আপ ম্যানকে একহাত নিচ্ছেন। তাকে নিয়েও প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা চলছে। তাকে উদ্দেশ্য করে অনেকেই মন্তব্য করেছেন- তিনি নিশ্চয়ই ‘সাবোতাজ’ করেছেন। নয়তো ওরকম সম্মোহনী চাহনিতে এমন খটখটে শুকনো ঠোঁট কেন?
পনেরো বছর ধরে, কান-এর রেড কার্পেটে ঐশ্বর্য ছড়়াচ্ছেন তিনি। কিন্তু শেষ দু’বছর তাঁর পোশাক নিয়ে কানাঘুষো বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল। আরাধ্যার জন্মের পর ওজন বেড়ে গিয়েছিল অ্যাশের। তাতেও কুছ পরোয়া নেহি। ওজন বেড়ে গেলেও গাউনকেই বেছে নেন। পিছু ছাড়েননি সমালোচকরা।
এবার আরো জোরালো বিতর্ক। কুয়েতের ডিজাইনার আলি ইওনস-এর গাউন পরে সকলের নজর কাড়লেও স্কিন হাগিং পোশাক থেকে লক্ষ করা যায়, বেবি বাম্পস।
টুইটারে আবার বন্যা! ‘ঐশ্বর্য কি আবার মা হচ্ছেন?’
‘ঐশ্বর্য যে বিউটি নিয়ে জন্মেছে, সেখানে ও যাই পরুক, যেভাবেই পরুক সেটাই ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে যাবে। ওর চুল থেকে পায়ের নখ এতটাই গ্ল্যামারাস, যে ওকে কোনও দিন অন্য মেয়েদের মতো শরীরের বিভিন্ন অংশের সৌন্দর্য নিয়ে আলাদা করে ভাবতে দেখিনি। ও ভারতকে কান-এ রিপ্রেজেন্ট করছে। এটাই গর্বের। ও কী রঙের লিপস্টিক পরল তা নিয়ে বিতর্ক তৈরির কোনও মানে হয় না,’ মুম্বই থেকে বললেন অ্যা়ড ফিল্ম ডিরেক্টর প্রহ্লাদ কক্কর।
ঐশ্বর্যার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন মেক আপ আর্টিস্ট বিপুল ভগত। ঐশ্বর্যার বেগুনি ঠোঁট দেখে অস্বস্তিতে পড়েছেন তিনি। তার মনে হচ্ছে, এবার হয়তো যে কেউই অফিস বা পার্টিতে এই রং লাগিয়ে হাজির হবে এবং হাসির খোরাক হবে। তবে একই সঙ্গে ঐশ্বর্যকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন তিনি। ‘বেশিরভাগ সময়ই হলিউডই ফ্যাশন ট্রেন্ড সেট করে দেয়। হলিউডকেই অনুসরণ করি আমরা। কিন্তু এবার যেন ঠিক উল্টোটাই হতে চলেছে। অ্যাশ বেগুনি ঠোঁটের চ্যালে়ঞ্জ ছুড়ে দিলেন হলিউডকে।’
যাকে নিয়ে এত বিতর্কের ঝড়, সেই ঐশ্বর্য নিজে কোনও দিন ফ্যাশন ট্রেন্ড নিয়ে মাথা ঘামাননি। নিজের মুড অনুযায়ী তৈরি করেছেন নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট। তাঁর নতুন ছবি ‘সর্বজিৎ’-এর প্রোমোশন নিয়ে তিনি এতটাই ব্যস্ত ছিলেন, যে কানে ঠিক কী পরা উচিত, কী পরা উচিত নয় তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় পাননি। এমনকী বন্ধুমহলে মজা করেই বলেছেন, ‘রেড কার্পেটে হোয়াইট শার্ট আর ব্লু জিনস পরে পৌঁছে যাব।’
আমি ওর রূপে মুগ্ধ। ও যেভাবে দুম করে ঠোঁটের রং পাল্টে সারা দুনিয়াকে নিজের দিকে টেনে নিল সেটা দেখার। আমি কোনও দিন ওঁকে নিয়ে শ্যুট করলে, ওঁর বেগুনি ঠোঁটের ছবিই তুলব।’ মুম্বই থেকে বললেন ফোটোগ্রাফার ডাব্বু রতনানি।
দ্রুত বদলাচ্ছে সময়। এখন ফ্যাশন মানে শুধুই কাঁধ খোলা পোশাক বা ক্লিভেজ দেখানো নয়। চোখের ভাষা থেকে শরীরী আবেদন, সবক্ষেত্রেই ডিমান্ড করছে নতুন চমক। সেই চমকের রাস্তাতেই হেঁটেছেন অ্যাশ। একসময় কান-এর রেড কার্পেট থেকেই লাল লিপস্টিকের উষ্ণতা ছড়িয়েছিলেন। মেক আপ আর্টিস্ট মিকি কনট্রাক্টরের কথায়, ভারতীয় ত্বকে পিচ রং, হলুদ রং, অরেঞ্জ ও ফুসিয়ার নানা শেড ভাল যায়। গরমের মেকআপে এই রংগুলো একটা স্টানিং লুক তৈরি করে। মিকি বলছেন, ‘ঐশ্বর্যার স্কিনটাই এমন, যে কোনও রংই মানিয়ে যায়।’
ফ্যাশন ডিজাইনার দেব-নীল জুটির নবনীল যেমন বললেন, ‘ঐশ্বর্যকে পারপল লিপস্টিকে ভাল কী খারাপ লাগছে সেই বিতর্কে যেতে চাই না। ফ্যাশন যদি কোনও কন্ট্রোভার্সির জন্মই না দেয়, তা হলে সেটা আর ফ্যাশন হল কী! হ্যাটস অফ টু ঐশ্বর্যা। তাঁর বোল্ড অ্যাটেম্পটের জন্য। ডিফারেন্ট কিছু করার সাহস অ্যাশকে আরও জনপ্রিয় করে তুলল।’
আদৌ কি জনপ্রিয় হলেন ঐশ্বর্যা? সে প্রশ্ন আরও জোরালো হল, যখন রেড কার্পেটে দুধসাদা গাউনে ‘মল দে পিয়ারেস’ ছবির স্ক্রিনিংয়ে হাঁটলেন ফ্যাশননিস্তা সোনম কপূর। তাঁর খোলা চুলে, নুড লুকে মজলেন সকলে। ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ থেকে মেক আপ আর্টিস্ট সবাই বলছেন যে কোনও অনুষ্ঠানেই সোনমের ফ্যাশন সেন্স আলাদা করে নজর কাড়ে। তার বাহারি গয়না, জুতোর নকশা, হালকা ভেজা ভেজা মেক আপ সোনমকে ঐশ্বর্যার চেয়ে হয়তো বা এগিয়েই রাখল।
লড়াই চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সোনমের ঠোঁট ? নাকি অ্যাশের ঠোঁট? বেগুনি নাকি হালকা পিঙ্ক?
পাবলিসিটির নতুন রং কি তবে এ বার বেগুনি? কান-এর গণ্ডি ছাড়িয়ে ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে ছাপ ফেলবেন কে?