খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬: প্রেমিকের সঙ্গে লিভটুগেদার করতো মডেল কন্যা সাবিরা। ছয় মাস আগে মায়ের সঙ্গ ছেড়ে রূপনগরের ওই বাসায় গিয়ে ওঠে সে। প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনককে পরিচয় করিয়ে দেয় স্বামী হিসেবে। সপ্তাহের ৩-৪ দিন নির্ঝর ওই বাসায় সাবিরার সঙ্গে রাত কাটাতো। কিন্তু সম্প্রতি সাবিরা আনুষ্ঠানিক বিয়ের চাপ দেয়ায় কিছুটা পিছিয়ে যায় নির্ঝর।
গত সোমবার নির্ঝরদের সাঁতারকুলের বাসায় যায় সাবিরা। সেখানে নির্ঝরের ছোট ভাই প্রত্যয় সিনহা তাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে অভিমানেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সাবিরা। পরে ফেসবুকে আত্মহত্যার চেষ্টার একটি ভিডিও আপলোড করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে আত্মহত্যা করেন তিনি।
পুলিশ জানায়, ভিডিও আপলোডের খবর পেয়েই সাবিরার প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনক ও ছোট ভাই প্রত্যয় সিনহা ওই বাসায় যায়। তারা গিয়ে সাবিরার কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পায়। এরপর বাড়িওয়ালাকে জানায় বিষয়টি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। দরজা ভেঙ্গে দেখা যায় সাবিরার ঝুলন্ত লাশ। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রথমে প্রেমিক নির্ঝর সিনহাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে রাতে আটক করা হয় প্রত্যয় সিনহাকে। রূপনগর থানার পরিদর্শক শাহীন কবির জানান, মঙ্গলবার রাতেই সাবিরার মা দিলশাদ কাদির বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
রূপনগর থানা পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রেমের সম্পর্ক ও বিয়ে করা নিয়ে ঝামেলার কথা স্বীকার করেছে প্রেমিক নির্ঝর সিনহা। এমনকি তার ছোট ভাই প্রত্যয়ও সাবিরাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। তবে তাদের দাবি, এ কারণে যে সাবিরা আত্মহত্যা করতে পারে সে বিষয়টি তাদের চিন্তাতেও ছিল না। পুলিশ জানায়, প্রেমিক নির্ঝর আদালতে নিজের অপরাধ স্বীকার করবে বলে জানালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য তাকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ভাই প্রত্যয়কে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করে পুলিশ। কিন্তু প্রেমিক নির্ঝর আদালতে গিয়ে বেঁকে বসে। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার কথা অস্বীকার করে। পরে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. জাকির হোসেন টিপু দুই ভাইয়ের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস জানান, প্রেমিক নির্ঝরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত মডেল কন্যা সাবিরার লাশ গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মামা মতুর্জা কাদির নিয়ে যান। সন্ধ্যায় তার লাশ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার হাজিগঞ্জের স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সাবিরার দুবাই প্রবাসী বাবা মনির হোসেন দেশে ফেরেন। একমাত্র মেয়ের লাশ দেখে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মামা মতুর্জা কাদির তার ভাগ্নি যাদের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। স্বজনরা জানায়, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একমাত্র মেয়েকে অবলম্বন করেই একাকী সংসার করেছে মা দিলশাদ কাদির। মেয়ের এই অকাল মৃত্যুতে মা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন।