খােলা বাজার২৪। বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের পর্দা কাঁপানো নায়িকারা ফের চিত্রজগতে ফিরতে চান। তাদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমা, সিমলা, রেসি, কেয়া, রত্না ও আঁচল। চলচ্চিত্রের প্রতি এই জনপ্রিয় নায়িকাদের আগ্রহ থাকলেও মানসম্মত গল্পের অভাবে দূরে আছেন তারা। শুধু বয়স ও ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী শক্তিশালী গল্প পেলেই তারা চলচ্চিত্রে ফিরবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ওইসব তারকাকে নিয়ে যায়যায়দিন বিনোদনের আজকের আয়োজন-
শাবনূর
চলচ্চিত্র থার্টিফাইভ থেকে ডিজিটালে রূপান্ত্মিত হওয়ার পর দেশীয় চলচ্চিত্রের সংশিস্নষ্টরা দ্বিধায় পড়ে গেছেন। আমি মনে করি, পুরো বিষয়টি গুছিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে। আমাদের দেশে মেধাবী শিল্পীর অভাব নেই। তাই চলচ্চিত্র সংশিস্নষ্টদের ভালো গল্প, নির্মাণ, টেকনিক্যাল দিক, মেকআপ, পোশাক, কোরিওগ্রাফি এসব বিষয়ে নজর নিতে হবে। আর আমি মনে করি, চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গল্পের ভিন্নতা আনতে হবে। শুধু একজোড়া তরম্নণ-তরম্নণীর গল্প নিয়ে কাজ করলে এখন দর্শককে প্রেক্ষাগৃহমুখী সম্ভব নয়। বলিউডে গত কয়েক বছরের ছবিগুলোর দিকে নজর দিলে দেখবেন কিভাবে ব্যতিক্রমী সব ছবি তারা বানাচ্ছেন। আর সেগুলোই দর্শক লুফে নিচ্ছেন। সেখানে অনেক পুরনো নায়িকা নিয়মিত কাজ করছেন এবং তাদের ছবি ব্যবসাসফল হচ্ছে। আমি মনে করি, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো গল্পের প্রয়োজন। ভালো গল্পের দর্শক এখনও আমাদের দেশে আছে। এসব বিষয় অবশ্যই একজন ভালো মানের প্রযোজক ও পরিচালককে দেখতে হবে। আমার ক্ষেত্রে বলব, আজকেই একটা চমৎকার গল্প আনুন যেটি আমার সঙ্গে মানানসই, আমি কাল থেকে শুটিং শুরম্ন করব। নতুন শিল্পীর অবশ্যই দরকার আছে ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র তৈরি করতে গেলে নতুন ও সিনিয়র শিল্পীদের সঠিক মেলবন্ধন তৈরি করে ছবি করতে হবে।
পপি
সম্প্রতি সিনিয়র নায়িকাদের বেশ কিছু ছবি ভালো ব্যবসা করেনি। কিন্তু নতুন যেসব নায়িকা চলচ্চিত্রে আসছে তাদের সিনেমাও যে হিট হচ্ছে তা কিন্তু নয়। অর্থাৎ এটা বোঝাই যাচ্ছে গল্প ভালো হচ্ছে না বলেই দর্শক ছবি গ্রহণ করছে না। আমার ক্ষেত্রেও একই কথা, আগের মতো ভালো গল্প মিলছে না বলে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হতে পারছি না। আমাদের দর্শক চাহিদা আছে কিনা সেটা তো কোনো জনসম্মুখে গেলেই বুঝতে পারি। ক্যারিয়ারের শুরম্নর সময়ের মতো এখনো আমার প্রতি দর্শকের ভালোবাসা অটুট। সুতরাং এটা কেউ বলতে পারবে না যে আমাদের মতো সিনিয়র শিল্পীদের দর্শক চাহিদা নেই বলে আমরা কাজ পাচ্ছি না। আসল কথা হলো আমরা যেসব ছবির প্রস্ত্মাব পাই করার চেয়ে না করাটাকে শ্রেয় মনে করি। কারণ ওইসব গল্প নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হলে এতদিনের অর্জিত সুনাম আরও নষ্ট করে। সেটা একজন সফল শিল্পী হিসাবে আমি কিছুতেই চাই না। ছবির গল্প আমার পছন্দ হলে অবশ্যই কাজ করব।
পূর্ণিমা
একজন প্রযোজক আর পরিচালকে বুঝে নিতে হবে যে, ছবি একজন আর্টিস্টের জন্য হিট ফ্লপ হয় না। যা হয় সেটি শুধু গল্পের কারণে। এ ছাড়া তাদের খেয়াল রাখতে হবে কোন গল্পের সঙ্গে কোন শিল্পী মানানসই। আমি তো এখন কলেজে যাওয়া মেয়ের চরিত্রে প্রস্ত্মাব পেলে করব না। কারণ আমি মনে করি, এ ধরনের চরিত্র এখন আমাকে মানাবে না। আমার দীর্ঘদিনের তারকা ইমেজ ঠিক রেখে একটি ভালো ছবিতে কাজ করতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছবি এমন কোনো ছবিতে আমি অভিনয় করলে তা দর্শক দারম্নণভাবে গ্রহণ করবেন।
সিমলা
চলচ্চিত্র থেকে যে আমরা দূরে সরে তা কিন্তু নয়। আসলে আমাদের নিয়ে সবাই কাজ করার সাহস পায় না, বরং ভয় পায়। কেননা আমাদের নিয়ে যদি ছবি ফ্লপ হয়। কিন্তু তারা যাদের নিয়ে কাজ করেছেন তাদের সব ছবিই কি ব্যবসাসফল হচ্ছে? কাউকে দিয়ে ছবি করালেই তা ববসাসফল হবে না যদি এখনকার মতো গৎবাঁধা গল্পের ছবি নির্মিত হতে থাকে। আমাদের দেশে আগে দেখেছি একটি ছবির গল্পের প্রয়োজনে সবাইকে নিয়েই কাজ করতেন পরিচালকরা। শাবানা ম্যাডাম যেমন নায়িকা হিসাবে সফল, তেমনি বোন-ভাবি-মা হিসাবেও পর্দায় সফল। সে সময় শাবানা-কবরী-ববিতা ম্যাডামদের নিয়ে গল্প তৈরি হতো। কিন্তু এখন সব গল্পতেই অল্প বয়সী দুটি চরিত্রকে প্রাধ্যান্য দিয়ে ছবি হচ্ছে। তাই একই জিনিস দেখতে দেখতে দর্শক বিরক্ত হচ্ছে।
রেসি
আমার সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে ডিপজল ভাইয়ের সঙ্গে। সবগুলো ছবিই দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাই আমি আবারও চলচ্চিত্রে ফিরতে চাই। কিন্তু বয়স উপযোগী গল্প নেই বলেই-তা সম্ভব হচ্ছে না। প্রযোজক-পরিচালকরা চাইলেই আমাদের নিয়ে ভালো ভালো গল্পে কাজ করতে পারেন।
রত্না
আমি ক্যারিয়ারে যে কটি ছবি করেছি প্রায় সবই ব্যবসায়িকভাবে সফল। তারপরও এখনো অনেকেই আমার কাছে ছবির প্রস্ত্মাব নিয়ে আসছে। কিন্তু ভালো গল্পের অভাবে আমি তা সবিনয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছি।
কেয়া
ইদানীং দেখা যায় একটি ছবি নির্মাণের আগেই এসে টাকা পয়সা নিয়ে দর কষাকষি শুরম্ন করে দেয় প্রযোজক। আগে তো ছবির গল্প শুনতে হবে। এমন তো হতে পারে আমি ছবিটি ফ্রিতেও করে দিতে পারি। সব মিলিয়ে একটি কথা বলতে পারি, আপনারা আমাদের ভালো গল্প দিন। আমরা ভালো কাজ দিতে প্রস্তুত আছি।
আঁচল
ভালো কাজ পেলে অবশ্যই করব। ইদানীং আমাকে তো কিছু প্রযোজক বিনা পারিশ্রমিকের ছবিতে কাজ করার প্রস্ত্মাব দিচ্ছে। অনেক পরিচালক আবার বলছেন ছবি চললে তুমি টাকা পাবা। বিষয়গুলো আমার কাছে বিব্রতকর। আমি এখনো প্রচুর ছবির প্রস্ত্মাব পাচ্ছি কিন্তু গল্প, বাজেট আর নানা জটিলতার জন্য সিনেমা থেকে একটু দূরে সরে আছি।