Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: বাংলা সিনেমা দেখেন অথচ কলকাতার ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘প্রেম আমার’ ও ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিনেমা দেখেননি, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। জনপ্রিয় এইসব সিনেমার নির্মাতা রাজ চক্রবর্তী এবার নাম লিখিয়েছেন প্রযোজনায়। ছবির নাম ‘নুরজাহান’। ওপার বাংলার নির্মাতা অভিমন্যু মুখার্জি ও বাংলাদেশের আব্দুল আজিজ এটি পরিচালনা করেছেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি ছবিটি দুই বাংলায় একযোগে মুক্তি পাচ্ছে। এর প্রচারণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসেছিলেন জনপ্রিয় এই নির্মাতা। অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে মুখোমুখি হলেন এই প্রতিবেদকের।

শুরুতেই রাজ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভালো ফিল্ম মার্কেট আর কোথাও নেই। হতেও পারে না। কারণ সব থেকে ভালো বাঙালিয়ানা যদি থাকে, তবে সেটা এখানেই আছে। পাশাপাশি এদেশের মানুষ সাংস্কৃতিক আবহাওয়ায় পরিবেষ্টিত, তা ভালো লাগার। গাড়িতে আসতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম এখানকার মানুষ হিন্দি-ইংরেজি থেকে বাংলাতেই বেশি মনোযোগী। বিষয়টি শুধু হৃদয়ই ছুঁয়ে যায়নি, তৃপ্তিও পেয়েছি। আমার মনে হয় এদেশের মানুষকে যদি ভালো সিনেমা দেওয়া হয়, তবে তা তারা সানন্দ্যে গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, আমরা কলকাতায় কাজ করি। ওখানে আমাদের একটা মার্কেট আছে। কিন্তু যদি এখানেও কাজ করি, মার্কেটটা বড় হবে। দুই বাংলায় সিনেমা বিনিময় হবে। শিল্পী-প্রযোজক-পরিচালকরাও কাজে আগ্রহী হওয়ার পাশাপাশি লাভবান হবেন। এখন বাংলাদেশের শাকিব খান, জয়া আহসান, আরেফিন শুভ, নুসরাত ফারিয়া কলকাতায় কাজ করছেন। এতে তারা গোটা দেশটাকেই রিপ্রেজেন্ট করছেন। বিষয়টি গর্বের। আমি চাই আরো শিল্পী কলকাতায় কাজ করুক, সেখানকার শিল্পীরাও এদেশে আসুক। তবে সেটা অবশ্যই নিয়ম মেনে, ভেঙে নয়।

নতুনদের নিয়ে কাজ করতে ভালবাসেন নির্মাতা রাজ চক্রবর্তী। জানালেন সে কারণও। বলেন, নতুনদের নিয়ে আমি এর আগেও কাজ করেছি, এখনও করছি। এতে আমি আনন্দ পাই। এ কারণে এবারও তার ব্যতিক্রম করিনি। ‘নুরজাহান’ ছবিতে নতুন দুজনকে নিয়ে চ্যালেঞ্জের সাথে কাজ করেছি। পাশাপাশি আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো, মফস্বলের ছেলে আমি। চ্যালেঞ্জ নিতে কখনো ভয় পাই না। এটা অনেকটা মাটি কুপিয়ে চাষ করার মতো। আর এটাই আমার ভালো লাগে। এটাই আমি করতে চাই।

আজকের সফল এই নির্মাতার শুরুর গল্পটা সুখকর ছিল না। ‘আমাদের অর্থনীতি’র এই সাক্ষাৎকারে জানালেন সে কথাও। তিনি বলেন, আমি থিয়েটারের ছেলে। অভিনয় এবং পর্দার প্রতি ভালোবাসার কারণে ছোটবেলা থেকেই জড়িয়ে যাই এই জগতে। এর জন্য পড়াশুনাও ফাঁকি দিয়েছি। কিন্তু তারপরেও কোনোকিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিল না। আসলে সেসময় কাজের সুযোগটাও, এখনকার মতো এত বৃহৎ পরিসরে ছিল না। নিজেরই চলতো না ঠিকঠাক। এমনকি ট্রেনে যাওয়া-আসা করবো, সে ভাড়াটাও থাকতো না পকেটে। এমন সময় বন্ধু রুদ্রনীল (বর্তমান সময়ে কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা-নির্মাতা) বললো, তুই কোথাও একটা অ্যাসিস্ট কর। টেকনিক্যাল কিছু একটা শেখ, যাতে তুই ঠিকঠাক চলতে পারিস। টিকে থাকতে পারিস। কিছুদিন ভাবলাম। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম নির্মাণে জড়াবো। শুরু হল অ্যাসিস্ট করা। টানা ৫ বছর করেছি এই কাজ। এরপর শুরু করি মীরাক্কেল, ড্যান্স বাংলা ড্যান্সের মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠান নির্মাণ। সেখানেও বেশিদিন থাকিনি। চলে আসি এদিকে। এরপরের গল্পতো সবাই জানেন। ক্যারিয়ারে একে একে যোগ হয়েছে ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘প্রেম আমার’, ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’, লে ছক্কা’, ‘চ্যাম্প’ ও ‘বোঝেনা সে বোঝে না’র মতো সিনেমা।

ভালো কাজের স্বীকৃতি সর্বত্র। সিনেমার ক্ষেত্রেও একই। রাজ মনে করেন, ভালো সিনেমা বানাতে অর্থ মুখ্য নয়। গল্প আর কন্টেন্ট জরুরি। সেক্ষেত্রে যদি নতুনদের প্রাধান্য থাকে, সমস্যা কোথায়?
খরচ বাঁচাতেই কি নতুনদের নিয়ে ছবি করতে আগ্রহী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটেই না। আমার ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ছবিটির খবর নিলে আপনারা বুঝতে পারবেন সেটা কেমন চলেছে। আমি সেখানে নতুনদের নিয়ে কাজ করেছি। এছাড়া দেব, জিৎ তাদেরকে নিয়েও আমি নতুন ছবি করেছি। সুতরাং এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমি নতুন কিছু করার চেষ্টা সব সময় করি।

একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমা নির্মাণ করেছেন রাজ চক্রবর্তী। কাজের স্বার্থে ঘুরেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এত আন্তরিকতা তার অন্যত্র মেলেনি। অকপটে স্বীকার করলেন সে কথা।

তিনি বলেন, যে যেভাবে পারুক ভাবুক কিংবা বলুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি কেবল সত্যটাই বলবো। অকপটেই বলবো। সেটা হলো, পশ্চিমবঙ্গে আমি যে ভালবাসা পেয়েছি মানুষের, তার থেকে অনেক অনেক বেশি ভালবাসা পেয়েছি এদেশে। এইতো আমি এখানে (অনুষ্ঠানে) আসার সময় রাস্তায় এক অটোওয়ালা বললো, দাদা আমি আপনার ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ দেখে খুব কেঁদেছি। এর থেকে ভালো লাগার আর কী আছে বলুন? সবার এত এত ভালোবাসা, আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। আপ্লুত। মনে হচ্ছে এখানেই থেকে যাই।