খােলা বাজার২৪। সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: সঙ্গীত পরিবারে জন্ম নেয়ার সুবাদে ছোট থেকেই গানের সাথে প্রাণ মিশিয়ে তার বেড়ে ওঠা। সেই ধারাবাহিকতায় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা পরিচালিত ‘সুরের ধারার’-তে রবীন্দ্র সঙ্গীতের শিক্ষার্থী ছিলেন নন্দিনী। এই নন্দিনী কবিগুরুর গানের পাখি। বিশ্বকবির গানই এখন যার অস্তিত্বের ছায়াসঙ্গী, উপলব্ধির আশ্রয়স্থল আর নিত্য আরাধনার অভয়ারণ্য। প্রায় দেড় দশক সঙ্গীত শিখনের পথ মাড়িয়ে এই প্রথমবারের মতো রবীন্দ্র সঙ্গীতের অ্যালবাম প্রকাশ করছেন রবীন্দ্র গানের সম্ভাবনাময় এ কণ্ঠশিল্পী।
‘স্বপনে গাঁথা রবে’ শিরোনামে রবীন্দ্র সঙ্গীতের নতুন এই অ্যালবামটি প্রকাশ করেছে দেশের প্রথমসারির অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি সিরিজ। এ উপলক্ষে শনিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বেইলি রোডের ক্যাফে থার্টি থ্রি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয় অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন ও জমকালো প্রকাশনা উৎসব।
আসরে উপস্থিত থেকে উদীয়মান সঙ্গীতশিল্পী নন্দিনীকে আশীর্বাদসহ অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী সাদী মোহাম্মদ। জি সিরিজ-অগ্নিবীণার কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন, ওস্তাদ হিমাদ্রি শেখর তালুকদার এবং মাই টিভির শব্দ প্রকৌশলী পুলক বড়ুয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সঙ্গীতশিল্পী সাদী মোহাম্মদ বলেন, ‘নন্দিনীর গান শুনে সত্যি মনটা ভালো হয়ে গেল। ওর কণ্ঠে একটা আবেশ আছে। আমি কিন্তু নিজেই নিজের গানের সমালোচক। সবসময়ই আমার মনে হয় আমি আগে যে গানগুলো গেয়েছি সেটি যদি আবার নতুন করে গাই তাহলে আরো ভালো হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটি নন্দিনীর প্রথম অ্যালবাম হলেও ‘ও’ যতটা ভালো এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে গেয়েছে ততোটা বোধ হয় আমিও আমার প্রথম অ্যালবামে গাইতে পারিনি। সাধারণত আমার মনে হয় যারা সঙ্গীতচর্চা করেন বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চা, তাদের মন সবসময় পবিত্র থাকে এবং তারা প্রত্যেকেই পরিচ্ছন্ন মানুষ। সেই কাতারে নতুন প্রজন্মের আরো একজন যোগ হলো। নন্দিনীর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা এবং আশীর্বাদ। রবীন্দ্র গানের জন্য ওর কণ্ঠটি উপযুক্ত। সে নিয়মিত চর্চা চালিয়ে গেলে একদিন অনেক বড় শিল্পী হবে। আমি তার অভিভাবকদের বলবো এ বিষয়ে যেন তারা ওকে যথাযথ উৎসাহ দেয়। পাশাপাশি জি সিরিজের কর্ণধার খালিদ ভাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাই তিনি সবসময়ই ভালো কাজে উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। নতুনদের সুযোগ করে দেন।’
শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমি প্রচুর গান শুনি এবং গানকে ভালোবাসি। নন্দিনীর বাবার আমন্ত্রণে আমি এ অনুষ্ঠানে এসেছি। যদি না আসতাম এবং না জেনেই নন্দিনীর অ্যালবামের গান শুনতাম আমার মনে হতো গানগুলো বরেণ্য কোনো শিল্পীই গাইছেন। সত্যি আমি ওর গায়কীতে মুগ্ধ হয়েছি। তার জন্য অনেক দোয়া রইল; সে আমাদের সঙ্গীতে অনেক ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
সভাপতির বক্তব্যে জি সিরিজ-অগ্নিবীণার কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি প্রথমেই যেদিন নন্দিনীর গান শুনেছিলাম তখনি মনে হয়েছে রবীন্দ্র সঙ্গীতের জন্য ওর কণ্ঠটা খুব উপযোগী। সে পড়াশোনার পাশাপাশি কয়েকজন গুণী মানুষের অনুপ্রেরণা ও আন্তরিক সহযোগিতায় অনেক কষ্ট করে অ্যালবামের গানগুলো করেছে এবং অনেক ভালো গেয়েছে; যা সঙ্গীতপ্রেমীদেরও ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। নন্দিনীর জন্য আমার শুভ কামনা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাবো নন্দিনীর মাকে। কেননা, এই অ্যালবামটি করার পেছনে উনার অভাবনীয় প্রেরণা ও আন্তরিকতা আমাকে অবাক করেছে। একজন প্রকৃত অভিভাবক সন্তানের প্রতি এমনিভাবেই যত্নবান হওয়া উচিত।’ এছাড়াও অনুষ্ঠানে তাকে শুভেচ্ছা জানান শব্দ প্রকৌশলী পুলক বড়ুয়া ও নন্দিনীর বাবা মনমধু রঞ্জন হালদার এবং মা নমিতা মল্লিকসহ সঙ্গীতাঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। আনুষ্ঠানিকতার শুরুতেই অনুভূতি প্রকাশ করেন কণ্ঠশিল্পী নন্দিনী হালদার।
এ সময় সঙ্গীত জীবনের প্রথম একক অ্যালবাম প্রসঙ্গে নন্দিনী হালদার বলেন, ‘রবীন্দ্র সুরের মায়া ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব টানে। আমার মা এবং বড় বোনের কণ্ঠে শুনতে শুনতে কখন যে কবিগুরুর গানের বাণী আমার ভেতরাত্মাকে জাগিয়ে তুলেছে বুঝতেই পারিনি। এই অ্যালবামটি করার পেছনে আমার ওস্তাদ হিমাদ্রি শেখর তালুকদারের আন্তরিক উৎসাহ আমাকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। পাশাপাশি শ্রদ্ধেয় বন্যা-দি’র (সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা) স্নেহ-ভালোবাসা এবং আন্তরিক সহায়তা আমাকে সবসময় উৎসাহিত করে। সবার প্রতি আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। আপনারা আমার জন্য আশির্বাদ করবেন।’
এরপর তার অ্যালবাম থেকে তার কণ্ঠসৃত গানে মুখরিত হয়ে ওঠে আয়োজনস্থল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা উৎসবমুখর আনন্দবারতায় অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন। এসময় সবার ভালোবাসা ও আশির্বাদে সিক্ত হয় নন্দিনী।
‘স্বপনে গাঁথা রবে’ অ্যালবামে থাকা গানগুলোর যন্ত্রায়োজন ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন কলকাতার প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক শুভায়ু সেন মজুমদার। এটি নন্দিনী হালদারের প্রথম একক অ্যালবাম। পুলক বড়ুয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত নতুন এ অ্যালবামে থাকা গানগুলো হচ্ছে- ‘ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে’, ‘আজি তোমায় আবার’, ‘ঘরেতে ভ্রমর এলো’, ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’, ‘স্বপনে দোঁহে ছিনু’, ‘দিবস রজনী’, ‘নয়ন তোমারে’, ‘আমার প্রাণের পরে’, ‘নিশিদিন মোর পরানে’ এবং ‘তুমি যে আমারে চাও’।
উল্লেখ্য, সঙ্গীত পরিবারের মেয়ে নন্দিনীর গানের প্রতি ভালোলাগা সেই ছোটবেলা থেকেই। জন্মের পর থেকে মা নমিতা মল্লিক এবং বড় বোন আঁখি বৈদ্যের কণ্ঠে গান শুনে শুনে বেড়ে ওঠা নন্দিনী উপমহাদেশের নন্দিত রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা পরিচালিত ‘সুরের ধারা’-তে ১৫ বছর ধরে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখছেন। এছাড়া তিনি তালিম নিচ্ছেন সঙ্গীতজ্ঞ হিমাদ্রি শেখর তালুকদারের কাছে। সঙ্গীতাঙ্গনে তার এই পথযাত্রা হোক অনেক বেশি উজ্জ্বলতর। তার জন্য শুভকামনা।