Wed. Oct 15th, 2025
Advertisements

খােলাবাজার২৪,মঙ্গলবার, ০২ র্মাচ ২০২১ঃ ভাগ্যটা বড় অদ্ভুত! পৃথিবীতে কেউ আসে সৌভাগ্য নিয়ে, কোনো এক ধনীর ঘরে জন্ম নেয় “আলালের ঘরের দুলাল ” হয়ে।যার সুখের অন্ত নেই!চাহিদা পূরণের শেষ নেই। আদর,স্নেহ, ভালোবাসা পায় সকলের। সোনার চামচ মুখে দিয়ে বড় হয়।অন্যদিকে ঠিক এর বিপরীত দেখা যায় কারো জীবনে।যে পৃথিবীতে আসে দুর্ভাগ্য নিয়ে। অভাব,অনাটন, দুঃখ-দুর্দশা তার জীবন সঙ্গী। জন্মের পর পরই শুরু হয় তার পৃথিবীতে টিকে থাকার লড়াই।জীবন সংগ্রামের সাথে বোঝাপড়া করেই তার প্রতিটি দিন কাটে।যে কখনো আদর,স্নেহ,ভালোবাসা পায় না।এ সবই যেন তার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়!কেউ কেউ পৃথিবীতে না বাঁচার মতো করে বেঁচে থাকে। রাস্তা-ঘাট,পথপ্রান্ত পড়ে থাকে।আবার কেউ কেউ অকালেই ঝরে পড়ে পৃথিবীর বুক থেকে। ঠিক তেমনি এক দুর্ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখেছিল একটি ফুটফুটে, মায়াবী মিষ্টি মেয়ে।নাম অজান্তা।অবশ্য ওর এই নামের পেছনে একটি রহস্য আছে।সেটি হলো ওর জন্ম রহস্য! প্রায় ৭আগে ওকে একটি ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। হয় তো কোনো এক পোড়া কপালী মা মুখোমুখি হয়েছিল কঠিন এক বাস্তবতার।হয় তো প্রেমের ফাঁদে পড়ে বিলিয়ে দিয়েছিল সর্বস্ব! যার ফসল বয়ে বেড়াতে না পারার ভয়ে বা চাপে পড়ে অথবা সমাজে টিকে থাকতে বাধ্য হয়েছিল এমন এক মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে!অথবা নিজের পাপকে ঢাকতে সদ্য জন্ম নেয়া এক ফুটফুটে, মায়াবী শিশুকে ফেলে গিয়েছিল নোংরা আবর্জনায় ভরপুর একটি ডাস্টবিনে।ঐ বৃদ্ধা মহিলা চলার পথে হঠাৎ কান্নার শব্দ পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে ডাস্টবিনে আবিস্কার করেছিলো শিশুটিকে। চারপাশে কাউকে না পেয়ে, এক প্রকারে বাধ্য হয়ে নিয়ে এসেছিলেন নিজের বস্তিতে,ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে।
যেহেতু কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটির কোনো নাম-ঠিকানা নেই, তাই বস্তিবাসীরা ওকে মুখে মুখে নাম দিয়েছিল অজান্তা।আজ এই নামটাই হয়ে উঠেছে ডাকনাম । সেই কুড়িয়ে পাওয়া থেকে আজ পর্যন্ত এই ৭ বছর এই অজ্ঞাত অজান্তা নামের মেয়েটি বৃদ্ধার আশ্রয়ে আছি।বৃদ্ধাকে ও নানি বলে ডাকতো।অজ্ঞাত এই অজান্তার আপনের চেয়েও আপন হয়ে গিয়েছিল বৃদ্ধা।ওকে খুব আদর করতো,ভালোবাসতো।কিন্তু এই ভালোবাসাটুকুও হারিয়ে যায় ওর জীবন থেকে। কি এক অসুখে ভুগতে ভুগতে একদিন বৃদ্ধা মারা যান। অজান্তার জীবনে নেমে আসে একাকীত্বের কালো ছায়া।বৃদ্ধার মৃত্যুর সাথে সাথে হারিয়ে যায় ওর মুখের শেষ হাসির রেখাটুকু।কারণ জন্মের পর ও না দেখেছে বাবাকে,না দেখেছে মাকে।ওর তো আপন ঐ একজনই ছিল।সেও ওকে ছেড়ে চলে গেল।
অজান্তা বুঝতে পারে না কি করবে!কার কাছে যাবে!তবুও তো যেতে হবে,কাজের খোঁজ করতে হবে।বেঁচে থাকার তাগিদে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে একটি কাজের জন্য। কিন্তু কেউ ওকে কাজ দেয় না।বয়সে অনেক ছোট,ওকে কি কাজ দেবে!তাই যার কাছে যায় সে ওকে না করে দেয়।অনেকে আবার ছোট মেয়ে দেখে কিছু খাবার-দাবার দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।অনেক ঘুরেফিরে, শেষমেষ কোনো উপায়ন্তর না দেখে রাস্তায় টোকাইয়ের কাজে নামে।সারাদিন ময়লা-আবর্জনা থেকে প্লাস্টিকের বোতল, লোহালক্কড় বা কাগজ টোকাতো।দিনভর এ সব করে যা পেত,তাতে ওর কোনো রকমে পেট চলতো।এভাবেই কাটলো আর তিনটি বছর!
মেয়েটির বয়স এখন দশ পূর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ অজান্তা নামের মেয়েটি এখন একজন কিশোরী মেয়ে। তো বয়সের সাথে সাথে ওর বুদ্ধি -বিবেকও পরিবর্তন হতে শুরু করে।ওর কাছে এখন টোকাইয়ের কাজটি কেমন যেন লাগে!আর যা পায় তাতে ও আর তেমন চলতে পারছে না!কি করা যায়?কি করে নিজের ভরণপোষণ সুন্দরভাবে করতে পারে? ঠিক তখনি একটি ছেলেকে পার্কে ফুল বিক্রি করতে দেখে ও সিদ্ধান্ত নেয়, আর টোকাইয়ের কাজ করবে না,এখন থেকে ফুল বিক্রি করবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ!মেয়েটি এখন ফুল বিক্রি করে,কখনো রাস্তা-ঘাটে কখনো আবার পার্কে।যে মেয়েটি একদিন জন্মেছিল দুর্ভাগ্য নিয়ে, যে মেয়েটি বৃদ্ধাকে হারিয়ে হয়েছিল ভালোবাসাহীন।সেই মেয়েটিকে আজ সবাই ভালোবাসে।ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়ে, জীবনযুদ্ধে মেয়েটি একজন আদর্শ সৈনিক! ও এখন সবার কাছেই বেশ পরিচিত। সকলে ওকে এক নামে চেনে,অজান্তা ফুলওয়ালী!…