খোলাবাজার অনলাইন ডেস্ক :ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, সরকার এত সহজ জিনিস না যে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ যতদিন থাকবে, স্বাধীনতাবিরোধী কেউ বিন্দুমাত্র এই স্পেস পাবে না।
বুধবার ডিএমপি সদরদপ্তরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুর্বৃত্তদের নাশকতায় ডিএমপির এখন পর্যন্ত ৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার মতো সরঞ্জাম ধ্বংস হয়েছে উল্লেখ করে বিপ্লব কুমার বলেন, ‘যেভাবে নাশকতা-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এটি কোনোভাবে ছাত্রদের আন্দোলন হতে পারে না। এটি নিশ্চিতভাবে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের আন্দোলনে মিশে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য এই কাজটা করেছে। এই নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে সাধারণ ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য ছাত্ররা কোনোভাবে জড়িত নয়।’
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বাস-ট্রেন পুড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। তারা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছে, মদদ দিয়েছে, বিনিয়োগ করেছে, নির্দেশ দিয়েছে। তাদের অনেক তথ্য পেয়েছি, আরও পাচ্ছি। যেসব জায়গায় আক্রমণ হয়েছে তার সমস্ত ফুটেজ আমরা পাচ্ছি, অসংখ্য ওপেন সোর্স থেকে ভিডিও পাচ্ছি। সাধারণ মানুষ ভিডিও করে রেখেছে, সেগুলো আমাদের দিচ্ছে। আমরা সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করছি।’
পুলিশের ইউনিফর্মে যারা আঘাত করেছে তাদের ছাড়া হবে না:
কারা কারা অগ্নিসন্ত্রাসসহ সব ঘটনার মাস্টার মাইন্ড, তাদের গ্রেপ্তার করতে চিরুনি অভিযান চলছে জানিয়ে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের তিনজন পুলিশ সদস্য প্রাণ দিয়েছেন, তাদের নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কাজেই পুলিশ সদস্যদের যারা হত্যা করেছে, পুলিশের ইউনিফর্মে যারা আঘাত করেছে তাদের একজনকেও ছাড়া হবে না। পুলিশের ইউনিফর্মে আঘাত মানে আইজিপি স্যারের গায়ে আঘাত, আমার কমিশনার স্যারের গায়ে আঘাত। কাজেই এই আঘাত যারা করেছে তাদের একজনকেও ছাড়া হবে না। যে স্তরের নেতা হোক না কেন, আশ্রয়দাতা, প্রশ্রয়দাতা, বিনিয়োগকারী কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। যেখানে থাকুক সেখান থেকে ধরে এনে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
ঢাকায় ১৫৪ মামলা, ১৩৮০ জন গ্রেপ্তার
গত কয়েকদিনে বিএনপি-জামায়াতের যে নাশকতা তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার অপপ্রয়াস এবং বিএনপি-জামায়াত ও উগ্র মৌলবাদীরা এতে নেতৃত্ব দিয়েছে মন্তব্য করে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আজ পর্যন্ত ১৫৪ মামলা দায়ের করা হয়েছে, এতে ১৩৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকে রিমান্ডে আছে, তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর প্রায় ৬৯ পুলিশ স্থাপনায় দুর্বৃত্তরা আক্রমণ করেছে। বেশকিছু ট্রাফিক বক্স পুড়িয়েছে। কয়েকটি ফাঁড়ি, থানায় অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেছে। এই আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বাংলাদেশ পুলিশ। যার কারণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উদ্দেশ্যে প্রথম বুলেট ছুড়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধের যারা বিরোধিতাকারী, যারা স্বাধীনতা চেতনার বিরোধিতাকারী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যারা মেনে নেয়নি, পুলিশকেও তারা মেনে নেয়নি। এই কারণে যে কোনো নাশকতার প্রথম টার্গেট থাকে বাংলাদেশ পুলিশ। এটা আমরা জানি, আমাদের সদস্যদের হত্যা করা হলেও আমাদের অন্য সদস্যদের টলানো যায়নি।’
পুলিশের ৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার সরঞ্জাম ধ্বংস:
নাশকতার মধ্যে ডিএমপির বিভিন্ন স্থাপনা জ্বালিয়ে দেওয়া ও ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ, থানায় মামলা, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপণ করতে ডিএমপির ডেভেলপমেন্ট বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার মতো সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে।’
আট থানার ওসি পরিবর্তন প্রসঙ্গে যা জানা গেল:
এরইমধ্যে ডিএমপির বেশকিছু থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে। নাশকতার আগাম তথ্য না পাওয়ায় তাদের বদলি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন- ‘বদলি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এর সাথে অন্য কোনো ঘটনা মেলানোর কোনো সুযোগ নেই।’
বদলি হওয়া ওসিদের মধ্যে রয়েছেন- ধানমন্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম, মোহাম্মদপুর থানার ওসি মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, খিলক্ষেত থানার ওসি হুমায়ন কবির, কাফরুল থানার ওসি ফারুকুল আলম, দারুস সালাম থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান, তুরাগ থানার ওসি শেখ সাদিক, দক্ষিণখান থানার ওসি আমিনুল বাশার ও কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের।
বিটিভি ভবনে হামলায় সন্ত্রাসীরা অনেক জনবল এনেছিল:
পুলিশ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন রক্ষা করতে ওই সময়ে তাদের কাছে থাকা সর্বোচ্চ শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছে। কিন্তু আগুন সন্ত্রাস থেকে ভবন রক্ষা করতে পারিনি উল্লেখ করে বিপ্লব কুমার বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা এত বেশি জনবল নিয়ে এসেছিল এবং সেখানে ঢুকে পড়েছিল। এখানে আমাদের পুলিশের গাফিলতি ছিল বলে মনে করছি না। কারণ আমাদের প্রত্যেক সদস্য নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে। এই অপরাধে যারা জড়িত তাদের ভিডিও ধরে ধরে আমরা গ্রেপ্তার করছি। একটা নিরাপরাধ লোক যেন জেলে না ঢুকে এজন্য আমরা বিশ্লেষণ করছি। যারা প্রকৃত সন্ত্রাসী তাদের গ্রেপ্তার করব।’
‘সরকার এত সহজ জিনিস না, ধাক্কা মেরে ফেলে দিবেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ যতদিন থাকবে, স্বাধীনতা বিরোধী কাউকে এই কাজ করার বিন্দুমাত্র স্পেস আমরা দিব না’- বলেন বিপ্লব কুমার সরকার।