Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

ripoখোলাবাজার ঃ সাংবাদিকরা বিএনপিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সরকারি দল ও বিএনপি জোটের নেতারা এ কথা প্রায়ই বলে থাকেন। এর পেছনে যথেষ্ঠ কারণও আছে। দীর্ঘদিন মাঠে নেই বিএনপি। তাদের বক্তব্য-বিবৃতি একমাত্র সাংবাদিকদের মাধ্যমেই পৌঁছাচ্ছে দেশবাসির কাছে।

বিএনপির নতুন মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনও এ কথা স্বীকার করেন। চলতি মাসের (আগস্ট) প্রথম দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিপন বলেছিলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সরকারের দমন-পীড়নের কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে নামতে না পারলেও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের বক্তব্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরছি। সুতরাং সংবাদ সম্মেলনও আন্দোলনের অংশ।

কিন্তু বিএনপি নেতা সেই আসাদুজ্জামান রিপন-ই এবার সাংবাদিকদের খেপিয়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির সংবাদ সম্মেলন অথবা যেকোনো বিবৃতি কিংবা দলীয় কর্মসূচি ই-মেইলের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানানো হয়। একটি মেইল পাঠানো হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে। সেখান থেকে মূলত খালেদা জিয়ার বক্তব্য-বিবৃতি পেয়ে থাকেন সাংবাদিকরা। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওই তালিকা ধরেই খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণপত্র দেয়া হয়।

অপরদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মোবাইল ফোনে শর্ট মেসেজ ও ই-মেইলের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিভিন্ন কর্মসূচি কাভার করার দাওয়াত অথবা বিবৃতি পাঠানো হয়। এ জন্য বিটের সাংবাদিকদের একটি তালিকাও সেখানে রয়েছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি বিট কাভার করা সাংবাদিকদের ই-মেইল তালিকা এবার সংশোধন করতে যাচ্ছেন দলটির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। নতুন তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্তও করে ফেলেছেন তিনি। খুব শিগগিরই তা কার্যকর করা হবে।

বিএনপি বিটের অনেক সাংবাদিক বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও সাধারণত সকল সংবাদ সম্মেলনে যান না। তবে তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রেরিত ই-মেইলের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যটি পেয়ে থাকেন, যা তারা প্রকাশও করে থাকেন। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সংবাদ সম্মেলনসহ বিএনপির কোনো মেইল তারা আর পাবেন না। ফলে তারা বিএনপির ওপর স্বাভাবিক কারণেই ক্ষুব্ধ হবেন।

সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি বিভিন্ন সময় দাবি করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানেও এখন দলটির নেতা-কর্মীরা আর সাড়া দেন না। সেজন্য খালেদা জিয়া ঘোষিত আন্দোলনেও বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী রাজপথে নামেন না। তাছাড়া দলটির জনসম্পৃক্ত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিও ইদানিং নেই। মূলত মিডিয়াই বিএনপিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অন্যথায় বিএনপির অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেত। অনেক বুদ্ধিজীবীও সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের এই দাবির সঙ্গে একমত। এমনকি খালেদা জিয়াও এ কথা স্বীকার করেন।

সূত্র মতে, বিএনপি বিটের সাংবাদিকদের ই-মেইলের তালিকা প্রিন্ট করে দলের একজন সহ-দফতর সম্পাদকের সহায়তায় তালিকা কর্তনের কাজটি করেন আসাদুজ্জামান রিপন। তালিকা থেকে নিস্ক্রিয় সাংবাদিক বিশেষ করে যেসব সাংবাদিক বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে নিয়মিত আসেন না তাদের ই-মেইল বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

মাস দুয়েক আগেও বিটের সাংবাদিকদের তালিকা একদফা কর্তন করেন বিএনপি নেতা রিপন। যেসব সাংবাদিক বিএনপি বিট করেন তাদেরকে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচি কাভার করার আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। রিপন সাংবাদিকদের ওই তালিকায়ও কর্তন করায় সাংবাদিকদের একটি অংশ তার ওপর দারুণ নাখোশ।

গত তিন বছর ধরে বিবার্তার প্রতিবেদক অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে বিএনপির কর্মসূচি কাভার করার আমন্ত্রণ পেলেও কিছুদিন আগ থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তালিকায় নতুন করে আবার মোবাইল নাম্বার অন্তর্ভুক্তির কাজটি আসাদুজ্জামান রিপনের অনুমতিক্রমে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা রেজাউল করিম করে আসছেন।

সে অনুযায়ী এ প্রতিবেদক শনিবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত ড. আসাদুজ্জামান রিপনের কাছে যান। এ সময় রিপন এ প্রতিবেদককে হলুদ রঙয়ের মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করা বিএনপি বিটের সাংবাদিকদের ই-মেইলের প্রিন্ট করা তালিকা দেখিয়ে বলেন, এগুলো বাতিল করা হবে। যারা সংবাদ সম্মেলনে (বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে) আসেন না তালিকায় তাদের নাম আর রাখা হবে না। তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে আসতে হবে। অহেতুক খরচ বাড়ানো হবে না।

যদিও একজনকে মেইল করলে যে খরচ হয়, একশ কিংবা দুইশ জনকে একসঙ্গে মেইল করলেও ইন্টারনেট খরচ সাধারণত একই হয়ে থাকে। তারপরেও বিএনপি নেতা রিপন মেইল পাঠানোর মাধ্যমে খরচ বাড়ানো হবে না বলে জানান।

তখন সেখানে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, কার্যালয়ের কর্মকর্তা রেজাউল করিম-সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বিগত আন্দোলনের শুরুতে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে তিনি আটক হন। এরপর দলের কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। রিজভী গ্রেফতার হলে এ দায়িত্ব দেয়া হয় আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে। আন্দোলন চলাকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে তিনি দলীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন বিষয় গণমাধ্যমে তুলে ধরতেন। একপর্যায়ে নিখোঁজ হয়ে যান সালাহউদ্দিন। দীর্ঘদিন পর ভারতের শিলংয়ে তার সন্ধান পাওয়া যায়। সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর আরেক যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। আন্দোলন চলাকালে তিনিও অজ্ঞাত স্থান থেকে কর্মসূচিসহ দলের অবস্থান তুলে ধরেন।

এদিকে, গত ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে দীর্ঘদিন গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর ৫ এপ্রিল বাসায় যান খালেদা জিয়া। এর আগে তিন মাস বন্ধ থাকার পর গত ৪ এপ্রিল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেয়া হয়। এর দু’দিন পর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নামে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো শুরু হয়। ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। তখন থেকে খালেদা জিয়ার নির্দেশেই তিনি মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

জানতে চাইলে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি বিবার্তাকে বলেন, সাংবাদিকদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে না। তবে যারা সাংবাদিক নন, এ ধরনের লোকদের আর মেইল করা হবে না। সেজন্যই তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

বিএনপির আরেক সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন বিবার্তাকে বলেন, সাংবাদিকদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে কি-না, সেটা আমার জানা নেই।

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বিবার্তাকে বলেন, ‘বিএনপি বিটের সাংবাদিকদের তালিকা নতুন করে সংশোধনের ব্যাপারে আমি অবগত নই। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকলে তা কার্যকর হবে না। বিএনপি বিটের সব সাংবাদিকই মেইল পাবেন। আমরা সব সাংবাদিককেই মেইল পাঠাই, ভবিষ্যতেও পাঠাবো।

নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো সেখানে এমন কিছু হচ্ছে কি-না।’

এ বিষয়ে জানার জন্য ড. আসাদুজ্জামান রিপনের মুঠোফোনে শনিবার রাতে ও রবিবার সকালে একাধিকবার কল দেয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

(খোলাবাজার/জিএম/৩১-০৮-২০১৫)