Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

30খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০১৫ : এবারই প্রথম সিনেমা নির্মাণ করছেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। এর আগে তিনি হুমায়ূন আহমেদের গল্প থেকে নাটক তৈরি করেছেন। ছবিটির শুটিং শুরু হয়েছে ৩ অক্টোবর। মুক্তি পাবে ১৩ নভেম্বর, হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে। ছবিটি প্রযোজনা করছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। গত বুধবার রাতে ঢাকার উত্তরা সাত নম্বর সেক্টরের হৈচৈ শুটিংবাড়িতে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন মেহের আফরোজ শাওন।
শুটিংয়ের আগেই ছবির মুক্তির তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
শুটিং শুরুর আগেই যদি ছবির মুক্তির তারিখ ঠিক করে রাখা হয়, তাহলে খুবই ভালো। কিন্তু তা অবশ্যই ছয় মাস হতে হবে।
আপনার জন্য তো তাহলে সময়টা খুবই কম?
ঠিকই বলেছেন। আমার জন্য সময়টা একেবারেই কম হয়ে গেছে। বড় একটা ঝুঁকি নিয়েছি। আমি ঝুঁকি নিতে পছন্দ করি। আজ পর্যন্ত যা যা কাজ করেছি, সবই দুঃসাহসিক। হুট করে ছবি বানানোর সিদ্ধান্তও তেমনি। আমি এরই মধ্যে সেই দুঃসাহসিক কাজ শুরু করে দিয়েছি।
আপনার ছবির অভিনয়শিল্পীরা সবাই খুব দক্ষ।
এটা আমার সৌভাগ্য, আমি খুব ভালো অভিনয়শিল্পীদের পেয়েছি। আমরা যাঁর জন্য কাজটা করছি, সেই হুমায়ূন আহমেদের জন্যই সবকিছু যেন সুন্দরভাবে পেয়ে গেলাম। রিয়াজ আর ফেরদৌস অনেক বছর পর একসঙ্গে ছবিতে কাজ করছে। এটা আমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। ফেরদৌস আর রিয়াজ হুমায়ূন আহমেদের ছবির নায়ক এবং আমার খুব প্রিয় মানুষ। আমি যাকে নিতে চেয়েছি, সবাই একবাক্যে রাজি হয়েছেন। মাহী তো কিছুই জানত না। চ্যানেল আই অফিসে এসেছে। তারপর সবকিছু জেনেছে।
হুমায়ূন আহমেদের গল্প কিংবা উপন্যাস নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বা চাপ অনুভব করেন?
হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চিত্রনাট্য। হুমায়ূন আহমেদের চিত্রনাট্য নিয়ে আজ পর্যন্ত যে যে কাজ করেছেন, তা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগেনি। নিজের চিত্রনাট্য নিয়ে একমাত্র হুমায়ূন আহমেদই ভালো কাজ করেছেন। তাঁর গল্প-উপন্যাসের প্রতিটি বিষয় সবার কাছে এত পরিচিত, সেখানে কারও কোনো গিমিগ করার সুযোগ থাকে না। অন্যের সৃজনশীলতা দেখানোর কোনো সুযোগ তিনি রাখেননি। ‘কৃষ্ণপক্ষ’র ক্ষেত্রে ওইটা আমার কাছে খুবই কষ্ট লেগেছে। কারণ তিনি ‘কৃষ্ণপক্ষ’র চিত্রনাট্য করে রেখে যাননি। তবে হুমায়ূন আহমেদের অন্য গল্প উপন্যাসের চিত্রনাট্য আমার কাছে করা আছে। সেসব চিত্রনাট্যের জন্য এক মাস খুবই কম সময়। ভেবে দেখলাম, যদি হুমায়ূন আহমেদের তৈরি চিত্রনাট্য ধরতে যাই, তবে ১৩ নভেম্বর কোনোভাবেই ছবি মুক্তি দিতে পারব না। আমার কাছে একজন নির্মাতার ইচ্ছার চেয়ে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে কিছু একটা করার লোভ বেশি কাজ করেছে। তখন আমার প্রথম ছবি নিয়ে কী স্বপ্ন ছিল, কীভাবে তা বাস্তবায়ন করব, এমনকি কিছু শর্ট ডিভিশন আমরা করে রেখেছিলাম-সেসব মোটেও মাথায় ছিল না। আমি কিন্তু ‘গৌরীপুর জংশন’-এর লোকেশনও দেখে আসছি।
‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিতে মুহিব ও আবরার চরিত্রের জন্য রিয়াজ আর ফেরদৌসকেই ভেবেছিলেন?
মুহিব চরিত্রটির জন্য ভাবা হয়েছিল মাহফুজ আহমেদকে আর অরু চরিত্রটির আমি নিজেই করার কথা ভেবেছিলাম। এটা ১৯৯৯ সালে আমরা যখন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির শুটিং করি, ওই সময়ের কথা। তখন আমার আর মাহফুজ ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল, ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে একদিন সিনেমা হবে। আমি তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। তখন আমরা ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে নানান স্বপ্ন দেখতাম। আর ইচ্ছে করেই এগুলো হুমায়ূন আহমেদের সামনে বলতাম। তখন হুমায়ূন আহমেদও আমাদের বলতেন, ‘ঠিক আছে। কখনো যদি কৃষ্ণপক্ষ সিনেমা তৈরি করি তাহলে তোমরাই কাজ করবা।’ এখন যখন ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তখন মনে হলো রিয়াজ ভাই মুহিব চরিত্রে ভালো করবেন। তবে আজ থেকে আট বছর আগের রিয়াজ ভাই হলে মুহিব চরিত্রের জন্য তিনি আরও যথাযথ হতেন। মুহিবের পরই দ্বিতীয় চরিত্র ভেবেছি আবরার। মুহিবকে দাঁড় করানোর জন্যই আবরাকে অনেক ওপরে ওঠাতে হবে। আসলে রিয়াজ ভাইয়ের পাশে আরেকজন যদি ভাবতে হয়, তাহলে সেটা ফেরদৌস ভাই ছাড়া কাউকে আমি খুঁজে পাই না। আমি ফেরদৌস ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতেই তিনি বললেন, ‘হুমায়ূন স্যারের গল্প আর তোমার প্রথম ছবি, আমি অবশ্যই করব’।
অরু নিয়ে কোনো চিন্তা ছিল?
নায়িকা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। কারণ হুমায়ূন আহমেদের নায়িকাদের একটা ধরন থাকে। তাঁরা অসম্ভব রূপবতীর পাশাপাশি অসম্ভব মায়াবতী হয়। তাঁদের মধ্যে মন খারাপ করা ভাব থাকে। এদিকে আবার এক মাসে ছবিটি শেষ করতে হবে। তখনো আমরা কাউকে অরু চরিত্রের জন্য প্রস্তাবও দিইনি। প্রযোজকের সঙ্গে বসলাম। মাহীর ছবি আমি দেখেছি। আমার মনে হয়েছে, মাহীর মাঝে সম্ভাবনা আছে। ওকে দিয়ে যদি অভিনয়টা বের করা যায়, তাহলে মাহীই হতে পারে অরু।
এমনটা কেন মনে হলো?
সিনেমার ক্যামেরার সঙ্গে অভিনয়শিল্পীর বন্ধুত্ব খুব জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, খুব ভালো টেলিভিশন কিংবা থিয়েটারের অভিনয়শিল্পীরা ক্যামেরার সামনে গেলে অনমনীয় হয়ে যায়। ক্যামেরার সঙ্গে অভিনয়শিল্পীর শারীরিক সাবলীলতা খুব দরকার। হাঁটা-চলা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে এটা দরকার। শুধু আমার টেনশন ছিল একটা জায়গায়, মাহীর বয়স কম। আর এখনকার অল্প বয়সী মেয়েরা একটু বেশি ছটফট আর চঞ্চল প্রকৃতির হয়। তবে ওর সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচ মিনিটও সময় লাগেনি। মনে হলো, আমি অরু পেয়ে গেছি।
এরই মধ্যে পাঁচদিন শুটিং করেছেন। যে অরুকে ভেবেছিলেন, তাঁকে পেয়েছেন?
মাহী এখন হুমায়ূন আহমেদের অরুর মধ্যেই ডুবে আছে। আমি যেভাবে চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই সে কাজ করছে।
‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবির পর কী করবেন?
আমার ভাবনা এখন শুধু ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে। শুটিং, ডাবিং আর সম্পাদনা শেষ করে ছবিটি ১৩ নভেম্বর মুক্তি দেব, এটাই লক্ষ্য। এরপর অন্য কাজ নিয়ে ভাবব।