খোলা বাজার২৪,সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫: তিন বছর ধরে পলাতক জামায়াত নেতা জাকির হোসেনকে রাজধানীর উত্তরা থানার নাশকতার দুই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর অগোচরে জামিন দেওয়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে আদালতপাড়ায়।
জাকির হোসেন গত ৮ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম ওয়ায়েজ কুরুনি খান চৌধুরী।
আইনজীবীরা জানান, সেদিন ৩ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক মহানগর হাকিম (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) ওয়ায়েজ কুরুনি টোকেন পাঠিয়ে মামলার নথি সংগ্রহ করে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আইনজীবীর বক্তব্য না শুনেই পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জাকিরকে জামিন দেন।
এ ঘটনায় আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলা দুটির বিচারাধীন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান।
“মামলা দুটিতে জামিনের ব্যাপারে চরম অনিয়ম করা হয়েছে। আমাকে মামলার জামিনের দরখাস্ত দেখানো হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো আবেদন রাষ্ট্র ও আসামি দুই পক্ষেরই শুনানি নিয়ে মঞ্জুর অথবা নামঞ্জুর করতে হয়।”
আজাদ রহমান জানান, জামিনের তথ্য ও জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে সবিশেষ অনুসন্ধানে নিশ্চিত সময় লাগায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে দেরি হয়েছে। তার জামিন বাতিলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন জানানো হবে।
একই অভিযোগ ওয়ায়েজ করুনি খান চৌধুরীর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ফজলে রাব্বী খোকারও।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “জামিন আবেদনের ওপর আপত্তি লিখে জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করতাম। যে কারণে হাকিম আমাদের অন্ধকারে রেখে এ কাজ করেছেন। আমরা এ জামিন বাতিল চাইব।”
ঘটনাটি আদালতপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর যোগাযোগ করা হয় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবুর সঙ্গে।
তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি জানতাম না। জামিনে এটি ভয়ঙ্কর অনিয়ম। আমরা জামিন বাতিলের আবেদন করব।”
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সরকারবিরোধী অবরোধ চলাকালে বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে উত্তরার ৪নং সেক্টরে সী-শেল চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল বের করা হয়। এসময় মিছিল থেকে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল এবং বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ড. শরীফুর রহমানের নেতৃত্বে ওই মিছিল বের করা হয়।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়। এরপর ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫০/২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে উত্তরা পূর্ব ও উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে পুলিশ।
জাকির হোসেন দুই মামলায় এজাহাভুক্তি আসামি। তিনি তিন ধরে বছর পলাতক ছিলেন।
ঘটনাস্থলে গ্রেপ্তার হাসিবুর রহমান হাইকোর্ট থেকে ২০১৩ সালের ২৯ মে জামিন পান।
এর আগে ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর দুই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
এরপর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হকের ৩ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতে মামলা স্থানান্তর করা হয়। মামলা দ্রুত বিচার আদালতে যাওয়ার আগেই পলাতক আসামিদেরকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
পরে রীতি অনুযায়ী পলাতক ও হাজির থাকা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত ৮ ডিসেম্বর ৩ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক মহানগর হাকিম (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) ছিলেন ওয়ায়েজ কুরুনি খান চৌধুরী।
মামলা দুটি দ্রুত বিচার আইনের ধারায় দায়ের হওয়ায় ওই মহানগর হাকিম দ্রুত বিচার হাকিম হিসেবে অনিয়মের মাধ্যমে এই জামিন মঞ্জুর করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ নেতা দুলাল মিত্র বলেন, ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে (সিএমএম কোর্ট) এ জাতীয় মামলার সন্দেহভাজন আসামিরা মাসের পর মাস জেলহাজতে পড়ে থাকলেও জামিন পাচ্ছে না। স্পর্শকাতর এ রকম ঘটনায় এ ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে জামিন অবশ্যই দুখঃজনক।
এর আগে গত বছরের ৯ জুন ‘গোঁজামিল’ দিয়ে একটি মামলার দায় থেকে জামায়াতের তিন নেতাসহ সাত আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক এস এম আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে।
সে মামলার বাদী ঢাকার ১৮৭ ইনার সার্কুলার রোডের প্রকৌশলী আজিজ উদ্দিনের অভিযোগ, ‘আর্থিক’ অথবা ‘রাজনৈতিক’ প্রভাবে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। অন্য একটি কাল্পনিক ঘটনার বর্ণনা সন্নিবেশিত করে তার মামলার আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছেন বিচারক।
তখন এ অভিযোগ এনে অব্যাহতির আদেশ ও আরজির সত্যায়িত কপি দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের নিবন্ধকের কাছে ঘটনাটির প্রতিকার চেয়ে দরখাস্তও দিয়েছিলেন তিনি।